‘ভালো খেললে বলে না, খারাপ করলেই মারতে চায়’

কাল আলাভেসের বিপক্ষে জয় পেয়েছে বার্সেলোনাছবি: এএফপি

এ মৌসুমে বার্সেলোনা ভালো করছে না। গতকাল রাতে আলাভেসকে হারিয়ে লিগে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে। কিন্তু গত সপ্তাহেই দুটি সম্ভাব্য শিরোপা দৌড় থেকে ছিটকে পড়েছে ক্লাবটি। গত ডিসেম্বরে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েছে বার্সেলোনা। ক্লাবের এমন দশার পেছনে দলটির রক্ষণভাগের দায়ই বেশি দেখছেন সমর্থকেরা।

বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের মধ্যে সমর্থকদের তোপ সবচেয়ে বেশি সহ্য করতে হয় উসমান দেম্বেলে, সের্হি রবার্তো ও জর্দি আলবাকে। চুক্তি নবায়ন–সংক্রান্ত জটিলতায় আপাতত মাঠে নামা হচ্ছে না দেম্বেলের। চোটের কারণে আলোচনাতেই নেই রবার্তো। মাঠে নামার সুবাদে তাই তোপটা সহ্য করতে হয় আলবাকেই। গতকাল আলাভাসের বিপক্ষে তুলনামূলক উজ্জ্বল ছিলেন আলবা। এ কারণেই ম্যাচের পর সমালোচকদের দিকে তোপ দেগেছেন বার্সার লেফটব্যাক।

কাল ডি ইয়ংয়ের গোলে আলাভেসকে হারিয়েছে বার্সেলোনা
ছবি: এএফপি

স্প্যানিশ সুপার কাপ ও কোপা দেল রে—এক সপ্তাহের মধ্যে বার্সেলোনার দুটি শিরোপা দৌড় শেষ হয়ে হতাশায়। দুবারই অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে ৩-২ গোলে হেরেছে বার্সেলোনা। রিয়াল মাদ্রিদ ও বিলবাওর বিপক্ষে সে হারে দুই রকম প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বার্সা। রিয়ালের কাছে হারের পর ক্লাবের সভাপতি থেকে সমর্থক সবাই হারের মধ্যে গর্ব খুঁজে নিয়েছেন। কিন্তু আর্থিক ও স্কোয়াডের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে থাকা বিলবাওর কাছে হার মেনে নিতে কষ্ট হয়েছে সমর্থকদের।

বিশেষ করে রক্ষণের বাঁ প্রান্তে আলবাকে নাজেহাল করেছেন বিলবাওয়ের তরুণ উইঙ্গার নিকো উইলিয়ামস। সমালোচনার তির তাঁকে খুঁজে নিতে তাই সময় নেয়নি। কাল তাই দলের জয়ের পর এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেননি আলবা। মুভিস্টারপ্লাসকে বলেছেন, ‘বহু বছর ধরেই আমাকে লক্ষ্য বানানো হচ্ছে। এই প্রথম আমার সঙ্গে ঘটছে না। এই সার্কাসে সমালোচনা শুনতে হবে, সেটা আমি মেনে নিয়েছি। আমি ধরেই নিয়েছি, এখানে সমালোচনা হবেই।’

কাল ভালো খেলেছেন আলবা
ছবি: বার্সেলোনা ওয়েবসাইট

আলবার দাবি, দল খারাপ করলে তাঁর দোষই সবার চোখে পড়ে। অথচ ভালো করলে কেউ দাম দেয় না, ‘আমি যেদিন ভালো খেলি, সেদিন কেউ কথা বলে না, আর সেদিনের মতো খারাপ করলেই আমাকে মারতে চায়। আমাকে এটা মেনে নিতে হবে।’
এ নিয়ে আক্ষেপ থাকলেও মেনে নিচ্ছেন আলবা। দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় হিসেবে চাপ নিতে প্রস্তুত বলেই জানিয়েছেন তিনি।

৩২ বছর বয়সী বলছেন, সতীর্থরা কোন চোখে দেখে, সেটাই তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ, ‘আমি এসব নিয়ে ভাবি না। কারণ, সতীর্থ ও কোচরা আমাকে শ্রদ্ধা করে। বার্সেলোনায় মনে হয় সবাই অভিজ্ঞ। গত চার-পাঁচ বছর ধরেই বলা হচ্ছে, অভিজ্ঞরা কী করে। আরে, আমার বয়স তখন মাত্র ২৮। কিন্তু আমি সেটা মেনে নিয়েছি।’

লিভারপুলের বিপক্ষে ৩-১ গোলে এগিয়ে থাকা অবস্থায় ভেঙে পড়েছিলেন আলবা
ছবি: ইউটিউব

কোচ জাভি খেলার এই দিকটার সঙ্গে ভালোই পরিচিত। কিন্তু বার্সেলোনার অংশ হতে চাইলে কোচ এই চাপ মানিয়ে নিতে বলছেন সবাইকে, ‘আলবার সমালোচনা করা হচ্ছিল এবং আজ সে ভালো খেলেছে। বুসকেতস (সের্হিও), পিকে (জেরার্দ) ও ফ্র্যাঙ্কির (ডি ইয়ং) মতোই। বার্সেলোনায় এই জার্সি অন্য ক্লাবের চেয়ে ২০ কেজি বেশি ওজন যোগ করে দেয় (চাপ বাড়ায়)।’

যদিও নিকট অতীতে আলবার চাপে ভেঙে পড়ার দৃশ্যগুলোই চোখে ভাসে সমর্থকদের। বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ক্লান্ত শ্রান্ত আলবার মুখ কিংবা ২০১৯ সালে লিভারপুলের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের প্রথমার্ধে মাত্র ১ গোল খাওয়ার পরও বিরতিতে ড্রেসিংরুমে আলবার কান্নায় ভেঙে পড়া চাপ সইতে না পারার দিকেই ইঙ্গিত দেয়।