ভ্রানিয়েস বোঝালেন, তিনি বসনিয়া জাতীয় দলের খেলোয়াড়

গোলের পর ভ্রানিয়েসের উচ্ছ্বাসছবি: প্রথম আলো

মৌসুম বদলেছে, মাঠ বদলেছে। কিন্তু বসুন্ধরা কিংস আছে তাদের সেই ছন্দময় ফুটবলে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়ার মেজাজে। আজ কমলাপুর শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ৬–০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে মৌসুম শুরু করেছে বসুন্ধরা।

বসুন্ধরার জার্সিতে জোড়া গোলে বাংলাদেশ অধ্যায় শুরু করেছেন বসনিয়া জাতীয় দলে খেলা স্ট্রাইকার স্তোয়ান ভ্রানিয়েস। একটি করে গোল করেছেন জোনাথন ফার্নান্দেজ, রবসন রবিনিও ও এলিটা কিংসলি। অন্য গোলটি আত্মঘাতী। প্রথমার্ধে দুটির পর দ্বিতীয়ার্ধে হয়েছে ৪ গোল।

গোলের পর বসনিয়ান ফুটবলার ভ্রানিয়েসকে নিয়ে বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস
ছবি: প্রথম আলো

নৌবাহিনী শুনে মনে হতে পারে সারা বছর চাকরি করে এমন খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া শৌখিন একটি দল, কিন্তু আসলে তা নয়। নৌবাহিনীর জার্সিতে আদতে এটি জাতীয় দল বললেও ভুল হবে না। একাদশে বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে জাতীয় দলের খেলোয়াড় ৯ জন। তাঁদের মধ্যে বর্তমান গোলরক্ষক শহিদুল আলম, লেফটব্যাক রহমত মিয়া, মিডফিল্ডার সোহেল রানা ও উইঙ্গার জুয়েল রানা। জাতীয় দলের বাইরে থেকে আসা খেলোয়াড়দের বেশ কয়েকজন প্রিমিয়ার ও চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে নিয়মিত।

এমন দল নিয়েও বড় হারের পেছনে বড় কারণ খেলোয়াড়েরা বিভিন্ন ক্লাব থেকে আসায় দলীয় বোঝাপড়া নেই। সবচেয়ে বড় সত্য, প্রতিপক্ষ দলে রবসন রবিনিও, জোনাথন ফার্নান্দেজ ও স্তোয়ান ভ্রানিয়েস আছেন। তাঁদের ঠেকানোর কোনো কৌশল নৌবাহিনীর প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জানা ছিল না!

নৌবাহিনীকে ৬–০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বসুন্ধরা কিংস
ছবি: প্রথম আলো

ম্যাচের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিলেন বসনিয়া জাতীয় দলে খেলা স্ট্রাইকার স্তোয়ান ভ্রানিয়েস। প্রথাগত আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হলেও নাম্বার নাইন হিসেবে খেলানো হয়েছে তাঁকে। তিনি যে ইউরোপের একটি জাতীয় দলে খেলা একজন ফুটবলার, বলে তাঁর ছোঁয়াতেই তা ফুটে উঠেছে। জোড়া গোলে বাংলাদেশের ফুটবল–অধ্যায় শুরু হলো তাঁর। ম্যাচের শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকলে হ্যাটট্রিকও হতে পারত ৩৫ বছর বয়সী এই আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারের।

সেটি না হলেও ভ্রানিয়েস প্রথম ম্যাচেই বুঝে গেলেন ভবিষ্যতে সেই সুযোগ আসতে পারে আরও কয়েকবার। কারণ, গোলমুখে তাঁর পায়ে বল তুলে দেওয়ার মতো সতীর্থ খেলোয়াড়ের অভাব নেই। ব্রাজিলিয়ান রবসন ও জোনাথন আছেন। স্থানীয় বিপলু আহমেদ, মোহাম্মদ ইব্রাহিমরাও তাঁকে বুঝতে পেরেছেন। তাঁর জোড়া গোল তো সেভাবেই আসা। ৪১ মিনিটে প্রথম গোলটি জোনাথনের ক্রসে। দুই ডিফেন্ডারের মাঝ থেকে বের হয়ে হেডে গোলটি করলেন ভ্রানিয়েস।

গোল করানোর পরেই জোনাথনেরও বুঝি মনে হলো তাঁরও তো গোলের প্রয়োজন। ৪৩ মিনিটে প্রতি–আক্রমণ থেকে দলীয় রসায়নে ২–০ করলেন তিনি। প্রতি–আক্রমণের শুরুটা হলো জোনাথনের পায়েই। পরে রবসন হয়ে বল গেল ইব্রাহিমের পায়ে। গোলমুখে জোনাথনের সামনে থালায় সাজিয়ে দেওয়ার মতো পাস দিলেন ইব্রাহিম। ব্রাজিলিয়ান এই মিডফিল্ডারের শট দূরের পোস্ট দিয়ে জালে।

প্রথমার্ধে কিছুটা হলেও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল নৌবাহিনী। দ্বিতীয়ার্ধে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে তারা। শেষ ২২ মিনিটেই ৪ গোল। এর মধ্যে একটি গোল আত্মঘাতী। প্রেস বক্স থেকে মনে হচ্ছিল, ইচ্ছা হচ্ছে আর গোল করে বেরিয়ে যাচ্ছেন বসুন্ধরার ফরোয়ার্ডরা।

৬৮ মিনিটে ভ্রানিয়েসের দ্বিতীয় গোল। ডান প্রান্ত থেকে ইব্রাহিমের দুর্দান্ত ক্রসে বলের ওপর চোখ রেখে পা ছোঁয়ার কাজটি করেছেন বসনিয়ান স্ট্রাইকার, ৩–০। এর পর থেকে গোলের হিসাব রাখাই কষ্ট হচ্ছিল। ৭৯ মিনিটে ৪–০ করলেন বদলি এলিটা কিংসলি। বক্সের মধ্যে থেকে বাঁ পায়ে দূরের পোস্টে প্লেসিং। তখনো দলের প্রাণভোমরা রবসনের নামের পাশে গোল নেই। আগের মৌসুমের কথা মাথায় থাকলে বিষয়টি মানানসই মনে হওয়ার মতো নয়। যোগ করা সময়ে গোলরক্ষক শহিদুলের পায়ের নিচ দিয়ে গোল করলেন। যোগ করা সময়ে ষষ্ঠ গোলটি আত্মঘাতী।