মন্ত্রী মাঠে এলেই জেতে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব!

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বাড়ি ভাড়া করেই চলে মুক্তিযোদ্ধা ফুটবল ক্লাবের ক্যাম্প। ছবি: শামসুল হক
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বাড়ি ভাড়া করেই চলে মুক্তিযোদ্ধা ফুটবল ক্লাবের ক্যাম্প। ছবি: শামসুল হক

শিরোনাম দেখে প্রশ্ন জাগতে পারে, মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে মন্ত্রীর কি সম্পর্ক? কিন্তু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে মুক্তিযোদ্ধার ম্যাচগুলো দেখলে মনে হবে শিরোনামটা ঠিকই আছে। লিগে এখন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা ৮ ম্যাচে যে দুটি জয় পেয়েছে, সেই দুটি ম্যাচে কাকতালীয়ভাবে মাঠে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

মুক্তিযোদ্ধা এখন পর্যন্ত জয় পেয়েছে রহমতগঞ্জ ও আরামবাগের বিপক্ষে। ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটি লিগ শুরু করেছিল শেখ রাসেলের কাছে ২-০ গোলে হেরে। শেষ ম্যাচে তারা আবাহনী লিমিটেডের কাছে তারা হেরেছে ২-০ গোলে। এটি নিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচ হারল মুক্তিযোদ্ধা। মাঠে অনেকেই রসিকতা করে বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় মাঠে এলেই আবার জিততে শুরু করবে মুক্তিযোদ্ধা।’

ঢাকার ফুটবলে মুক্তিযোদ্ধা নামটি কিন্তু অন্য রকম এক আবেদন। ১৯৯৪ সালে এই মুক্তিযোদ্ধাই আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্সের ‘জেন্টেলম্যান অ্যাগ্রিমেন্ট’ ভেঙে দলে নিয়েছিল দেশের সেরা তারকাদের। মধ্যম সারির একটি দল থেকে মুক্তিযোদ্ধার ‘বড় দল’ হয়ে ওঠা তখনই। এরপর বেশ কয়েকবারই তারা লিগ-ফেডারেশন কাপ জিতেছে। গত ২৩ বছরে ভালো দল গড়ার একটি ধারাবাহিকতা মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু ধরে রেখেছিল। কিন্তু হালে এই দলটির অবস্থা খুবই খারাপ।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের অধীনে পরিচালিত হয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। এই সংসদের অধীনেই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সভাপতি হচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কর্মকর্তাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা চলছে বর্তমান কমিটির নির্বাচন নিয়ে। এ নিয়ে বেহাল মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্র।

এ মামলার জের টানতে গিয়ে ভালো দল গড়াই মুশকিল মুক্তিযোদ্ধার। গত মৌসুমে অনেক খেলোয়াড়ের বেতন নিয়ে সমস্যা হয়েছে। চারজন খেলোয়াড় তো বকেয়া বুঝে না পেয়ে বাফুফের কাছে নালিশই ঠুকে দিয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধাকে উদ্ধার করতে পারেন কেবল মন্ত্রী মহোদয়ই। কিন্তু তিনিও মামলা-পাল্টামামলায় এতটাই বিরক্ত যে ক্লাবের হাল ধরতে অনীহাই প্রকাশ করেছেন। আপাতত ক্লাবের সামনে কেবল অন্ধকারই।
এ ব্যাপারে দলের ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মাননীয় মন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম। মামলা চলায় তিনি ক্লাবের দায়িত্ব নিতে অনীহার কথাই জানিয়েছেন। এখন আমরা অভিভাবকহীন।’
দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার মোনেম মুন্না দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলা শুরু করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধার হয়েই। জুয়েল রানা, রেজাউল করিম রেহান, আয়াজ খান, জিয়া বাবুসহ দেশের ফুটবলের অনেক বড় বড় খেলোয়াড়কেই আলোয় এনেছে এই ক্লাব। এখন সেই ক্লাবই কিনা অভিভাবকহীন!
দেশের ফুটবল বোধ হয় এসব কারণেই থমকে আছে এক জায়গায়।