মাঠে হিংস্র আচরণ দর্শকদের, মেক্সিকো থেকে বিশ্বকাপ সরানোর দাবি

এই দৃশ্যর অবতারণা হয়েছিল সেদিন মেক্সিকোয়ছবি : রয়টার্স

ছবি, ভিডিওগুলো এত বেশি ভীতি জাগানো—বেশিক্ষণ দেখা যায় না। ফুটবল ম্যাচ দেখতে গিয়ে, নিজের দলকে সমর্থন করতে করতে মানুষ যে কতটা হিংস্র হয়ে যেতে পারে, সেটার যেন প্রমাণ হয়ে উঠেছেন মেক্সিকোর ক্লাব কেরেতারোর সমর্থকেরা।


কী দোষ ছিল আটলাস সমর্থকদের? কেরেতারোর মাঠে প্রিয় ক্লাবের খেলাই তো দেখতে এসেছিলেন! কেরেতারোর বিপক্ষে মেক্সিকোর বর্তমান লিগ চ্যাম্পিয়ন দল আটলাস এক গোলে এগিয়েও গিয়েছিল।

কেরেতারোর সমর্থকেরা এভাবেই আক্রমণ করেছেন আটলাসের সমর্থকদের
ছবি : এএফপি

ব্যস, অসন্তুষ্টির শুরু সেখান থেকেই। এক কথা, দুই কথা করে বাড়তে বাড়তে তর্কাতর্কি, গালাগালি, হাতাহাতি—সেখান থেকে ভয়াবহ সংঘর্ষ। অবশ্য ঘটনাটাকে সংঘর্ষ বলা যায় কি না, সেটা নিয়েও বড়সড় প্রশ্ন তোলা যাবে। সংঘর্ষ ঘটাতে হলে যে দুই পক্ষেরই সমান ‘অংশগ্রহণ’ থাকতে হয়! দুদিন আগে কেরেতারো বনাম আটলাস ম্যাচে যা হলো, তাকে আর যা–ই হোক, সংঘর্ষ বলা চলে না। বরং এক পক্ষের ওপর আরেক পক্ষের হামলা বলাই শ্রেয়।


কেরেতারোর মাঠে প্রিয় দলের খেলা দেখতে গিয়ে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন আটলাস সমর্থক। কেরেতারো সমর্থকদের হিংস্র হামলার শিকার হয়েছেন তাঁরা। ৬২ মিনিট পর ম্যাচ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। শুধু এই ম্যাচটাই নয়, এই সপ্তাহে লিগের সব ম্যাচ স্থগিত করেছে মেক্সিকো।

অন্তত ২৬ জন বাজেভাবে আহত হয়েছেন
ছবি : টুইটার

অন্তত ২৩ জন আটলাস সমর্থককে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, প্রত্যেকের অবস্থাই গুরুতর। কিন্তু ঠিক কতজন মারা গেছেন, সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। মেক্সিকোর স্থানীয় সংবাদমাধ্যম, অসমর্থিত সূত্রগুলো দুইজন থেকে শুরু করে ১৭ জন পর্যন্ত আটলাস সমর্থকদের মারা যাওয়ার খবর দিয়েছে। ওদিকে কেরেতারোর রাজ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অন্তত ২৬ জন বাজেভাবে আহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। যদিও কেরেতারোর মেয়র জানিয়েছেন, এসব তথ্য মিথ্যা। কেউই মারা যাননি।


হামলার সময় দুই দলের খেলোয়াড়েরা দৌড়ে ড্রেসিংরুমে চলে যান, কেরেতারোর গোলকিপার ওয়াশিংটন অ্যাগুয়েরেকে দেখা যায় হিংস্র সমর্থকদের শান্ত করতে, যদিও তাতে খুব বেশি কাজ হয়েছে, বলা যাচ্ছে না।

এই সপ্তাহে লিগের সব ম্যাচ স্থগিত করেছে মেক্সিকো
ছবি : রয়টার্স

জঘন্য এই হামলার কারণে ২০২৬ সালে মেক্সিকো যেন বিশ্বকাপ আয়োজন না করতে পারে, সে ব্যাপারে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিফার কাছে নিজেদের দাবি জানিয়েছেন। একজন টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘২০২৬ বিশ্বকাপ যেন মেক্সিকো আয়োজন না করতে পারে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ফিফাকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। জঘন্য খুনিরা যে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে, তা নিন্দনীয়।’ মেক্সিকোর সংবাদপত্র এল ইউনিভার্সাল জানিয়েছে, মেক্সিকোর ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক দিন।


মেক্সিকোর ফুটবল ফেডারেশন এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এই ঘটনায় আমরা ভীষণ ব্যথিত। তীব্র নিন্দা জানাই। এ ঘটনা আমাদের ফুটবলীয় চেতনাবিরুদ্ধ।’


ফিফা এখন আদৌ মেক্সিকোকে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় কি না, দেখা যাক!