ফুটবল উপভোগে বাধা ‘ভিএআর’

প্রতি ম্যাচেই রেফারিদের সিদ্ধান্ত প্রশ্ন তুলে দিচ্ছেছবি: এএফপি

এখন ফুটবল খেলা দেখাটা বেশ শ্রমসাধ্য ব্যাপার হয়ে উঠেছে। ৯০ মিনিটের খেলা প্রায়ই ৯০ মিনিটে আটকে থাকছে না। গোল হলেও সঙ্গে সঙ্গে উদ্‌যাপন করা হচ্ছে না।

সবাই অপেক্ষায় কখন ওপর মহল থেকে জানানো হবে, সব ঠিকঠাক। যখন জানানো হয়, ততক্ষণে স্বতঃস্ফূর্ত উদ্‌যাপনের সময় পেরিয়ে যায়।

শুধু যে গোল উদ্‌যাপনেই ঝামেলা হচ্ছে, তা–ই নয়, খেলার গুরুত্বপূর্ণ সব সময়েই বাগড়া দিচ্ছে ভিএআর। আর সিদ্ধান্ত দেওয়াতেও প্রতিনিয়ত বিতর্ক সৃষ্টি করছে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর)।

কখনো যে ঘটনায় গোল দেওয়া হচ্ছে, অন্য কোনো ম্যাচে সেই একই ঘটনায় অফসাইডের জন্য গোল বাতিল হচ্ছে। কখনো লাল কার্ড দেখানো হচ্ছে, কখনো ফাউল হয়নি বলা হচ্ছে।

বিতর্ক কমাতে যে ব্যবস্থার জন্ম দেওয়া হয়েছে, সেই ভিএআর বিতর্ক আরও বাড়াচ্ছে। আর এ কারণে মানুষ ফুটবল খেলা আর উপভোগ করতে পারছেন না।

সপ্তাহের শুরুতে এমন এক বিতর্কের নেতিবাচক দিকটা দেখেছে লিভারপুল। ব্রাইটনের বিপক্ষে ভিএআর দুটি পেনাল্টি বাতিল করেছে তাদের। আর অন্তিম মুহূর্তে একটা পেনাল্টি উপহার পেয়েছে প্রতিপক্ষ।

যে পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যাচে সমতা ফিরিয়েছে ব্রাইটন। তাই ম্যাচের পরই এ নিয়ে কথা বলেছেন লিভারপুল অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসন। হেন্ডারসন বলেছেন, ভিএআর ছাড়া খেলতে পারলেই ভালো লাগত তাঁর।

দলটির সব কাজের কাজি মিডফিল্ডার জেমস মিলনার টুইটারে বলেছেন, ‘এটা তো পরিষ্কার ভিএআর নিয়ে আলোচনা করা দরকার। আমি নিশ্চিত যে অবস্থা চলছে, তাতে আমার মতো খেলাটার প্রতি ভালোবাসা হারিয়ে ফেলছে অনেকেই।’

রবার্টসন মানতেই পারছিলেন না সে সিদ্ধান্ত
ছবি: রয়টার্স

সেদিন পেনাল্টিটা দেওয়া হয়েছিল অ্যান্ডি রবার্টসনের ফাউল থেকে। স্বভাবতই এ নিয়ে হতাশা জানিয়েছেন স্কটিশ লেফটব্যাক, ‘একসময় ফুটবল ম্যাচে গিয়ে খেলা উপভোগ করতে এবং গোল হলে সেই মুহূর্তটা উদ্‌যাপন করতে ভালোবাসতাম। এখন তো এটা কেড়েই নেওয়া হচ্ছে। এখন তো দুই বা তিন মিনিটও অপেক্ষা করা লাগছে অফসাইড হয়েছে কি না সেটা জানার জন্য। এটা যদি এতটাই সূক্ষ্ম হয়, তাহলে প্রথমে যে সিদ্ধান্ত ছিল, সেটাই থাকুক না। মিলি যা বলেছেন, সেটা শুধু খেলোয়াড় নয়, ফুটবল ভক্তদেরও এমন মনে হচ্ছে। অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছি, যারা আগের মতো আর ফুটবল উপভোগ করছেন না।’

ভিএআর নিয়ে হতাশা বেশি বাড়াচ্ছে এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা। কোনো ম্যাচে এক রকম সিদ্ধান্ত দেওয়া হচ্ছে, অন্য ম্যাচে ভিন্ন কিছু। আবার বিভিন্ন লিগে ভিএআরের প্রয়োগও ভিন্ন।

ভিডিও অ্যাসিসট্যান্ট রেফারি নিয়ে বিরক্ত অনেকেই
ছবি: টুইটার

চ্যাম্পিয়নস লিগেও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। রবার্টসনও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘যখন ভিএআর এসেছিল, তখন আমরা ভেবেছিলাম আর কোনো সংশয় থাকবে না, সব পরিষ্কার বোঝা যাবে। কিন্তু আমার মনে হয় না আমরা সেটা পাচ্ছি। অনেক উন্নতি করতে হবে। আমরা জানি, ভিএআর নিয়ে আমাদের আরও ধৈর্য ধরতে হবে এবং রাতারাতি পরিপূর্ণ হবে না। তবে ১৮ মাস হয়ে গেছে, কিন্তু এখনো আগের ভুলগুলোই হচ্ছে।’

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এ সপ্তাহেই এমন কিছু দেখা গেছে। রবার্টসনের মনে তাই এ নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে, ‘শনিবার যা হলো... যদি নিয়মে আর রেফারির কাছে এটা পেনাল্টি মনে হয়, তাহলে আমার এ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমি রবিবারে ম্যাচ দেখছিলাম এবং আমি মার্কাস রাশফোর্ড ও আডামা ট্রায়োরের সঙ্গে একই ধরনের ফাউল করতে দেখেছি, যা ড্যানি ওয়েলবেকের সঙ্গে আমার হয়েছিল; যার কোনো শাস্তি হয়নি। ওদের কোনোটা পেনাল্টি হলো না, কিন্তু আমারটা দেওয়া হলো। আমার মতে হয় তিনটিই পেনাল্টি দিতে হবে, নয়তো কোনোটিই নয়। একই ঘটনায় অন্য খেলায় ভিন্ন সিদ্ধান্ত দেখা তো দলগুলোর জন্য হতাশাজনক। আমরা শুধু ধারাবাহিকতা চাইছি। আমরা আশা করেছিলাম, ভিএআর আমাদের সেটা দেবে, কিন্তু পাইনি এখনো। আশা করি, এক সময় এটা পাব। কারণ, খেলায় এটার জন্য আর্তনাদ করছি।’