এএফসি কাপে ঢাকায় যেখানে শেষ করেছিল, মালেতে সেখানে থেকেই যেন শুরু করল বসুন্ধরা কিংস। গত বছর এএফসি কাপ অভিষেকে ঢাকায় মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টসকে ৫–১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বসুন্ধরা। এরপর করোনার কারণে টুর্নামেন্টটি বাতিল হয়ে যায়। এক বছরের ব্যবধানে আরও একটি এএফসি কাপে বসুন্ধরার শুরুটা হলো দুর্দান্ত। আজ রাতে মালে স্টেডিয়ামে মালদ্বীপের চ্যাম্পিয়ন মাজিয়া স্পোর্টসকে ২–০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নরা।
বসুন্ধরার দুই গোলের একটি করেছেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রবসন দা সিলভা, অন্য গোলটি আত্মঘাতী। বসুন্ধরা কিংস বাংলাদেশের ফুটবলে এখন অবিসংবাদিত রাজা, এবারের লিগসহ টানা পাঁচটি টুর্নামেন্ট জিতেছে। বিদেশের মাটিতে কেমন খেলে সেটিই ছিল দেখার বিষয়। এই প্রশ্নে বলতে হবে মালদ্বীপেও রাজার মতো শুরু করেছে বাংলাদেশের রাজারা।
শুরুতে ঘরের মাঠে বসুন্ধরাকে চেপে ধরেছিল মাজিয়া। তাদের প্রেসিংয়ে খেই হারিয়ে মাসুক মিয়া, বিপলু আহমেদরা পাস দেওয়ায় ভুল করতে থাকেন। কিন্তু ম্যাচের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে বসুন্ধরা। বিশেষ করে ২৫ মিনিটে পাওয়া আত্মঘাতী গোলের পর উজ্জ্বীবিত হয়ে উঠে এবারের এএফসি কাপে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধিরা।
আত্মঘাতী গোলের পর থেকেই ম্যাচের নাটাইটা চলে আসে বসুন্ধরার হাতে। ৪২ মিনিটে রবসন ২–০ করলে ফিরে আসে গত বছর টিসি স্পোর্টসের বিপক্ষে বড় জয়ের স্মৃতি। বসুন্ধরার জয় কম ব্যবধানের গোলে হলে এখন আর যেন মন ভরে না বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের। কিন্তু আজ দ্বিতীয়ার্ধে গোল না খাওয়ার মিশনে নামা বসুন্ধরা আর গোল পায়নি।
চোট থাকায় আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার বেসেরার একাদশে খেলা নিয়ে শঙ্কা ছিল। তাঁকে একাদশে নিয়েই ৪–৩–৩ ছকে দল সাজিয়েছেন বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন। সাদা চোখে এই ম্যাচে বেসেরা তেমন প্রভাব ফেলতে না পারলেও, প্রতিপক্ষের রক্ষণে বলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে সতীর্থদের আক্রমণে উঠে আসতে যেভাবে সাহায্য করেছেন বেসেরা, সেটা ছিল বসুন্ধরার জন্য আশীর্বাদ।
২৫ মিনিটে বেসেরার সঙ্গে বলের দখলে গিয়েই আত্মঘাতী গোল করে বসেন মাজিয়ার অধিনায়ক ও রাইটব্যাক মোহাম্মদ ইরফান। মাজিয়া রক্ষণে বলের নিয়ন্ত্রণে নিতে ছুটছিলেন বেসেরা ও ইরফান, ওদিকে পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে এসেছিলেন মাজিয়ার উজবেক গোলকিপার মিরজোখিদ মামাতখোনভ। কিন্তু বেসেরার চাপের মুখে তাড়াহুড়ো করে বল বিপদমুক্ত করতে গিয়ে ইরফানের শট ঠিকঠাক হলো না, বলের গতিপথ ছিল মাজিয়ারই গোলপোস্টের দিকে। পোস্ট ছেড়ে এগিয়ে যাওয়া মামাতখোনভের মাথার উপর দিয়ে বল জড়িয়ে যায় জালে।
বসুন্ধরার মূল শক্তির জায়গাটা তাদের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রবসন। ঢাকার কাদাভরা মাঠে যিনি ফুটবলের ফুল ফোটাতে পারেন, তাঁর কাছে মালের মসৃণ মাঠ তো সুরভী ছড়ানোর জন্য মোক্ষম জায়গা। তাঁর প্রতিটি মুভে ফুটে উঠছিল, মাঠের ২২ জনের মধ্যে তিনি আলাদা। ৪০ মিনিটে রবসন স্কোরলাইন ২–০ করলেন ব্রাজিলিয়ান ঢংয়ের দারুণ গোলেই। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে ঘোল খাইয়ে বক্সে ঢুকে নেওয়া তাঁর বুলেট গতির শট গোলকিপারের কাছের পোস্ট দিয়ে ঢোকে জালে। যদিও এই গোলে দায় এড়াতে পারবেন না মাজিয়া গোলকিপার।
এর দুই মিনিট পরেই স্কোরলাইন ৩-০ করতে পারতেন বেসেরা। বক্সের ওপরে ৩ জনের মধ্যে বলের নিয়ন্ত্রণ রেখেছিলেন দারুণভাবেই। কিন্তু ফাঁকা পোস্টে নেওয়া তাঁর শট সাইডপোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়।
প্রতিপক্ষের মাঠে ২–০ গোলে এগিয়ে গেলে যা হয়, দ্বিতীয়ার্ধে দলকে সতর্ক ফুটবল খেলিয়েছেন ব্রুজোন। দ্বিতীয়ার্ধে ভালো একটি গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন বসুন্ধরা মিডফিল্ডার জোনাথন ফার্নান্দেজ। ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ব্রাজিলিয়ান এই মিডফিল্ডার বক্সের মধ্যে থেকে ভালো শটও নিয়েছিলেন। কিন্তু দারুণ সেভ করেন মাজিয়া গোলকিপার। অন্যদিকে ম্যাচে বলার মতো পরীক্ষা দিতে হয়নি বসুন্ধরা গোলকিপার আনিসুর রহমানকে। দ্বিতীয়ার্ধে একবার মাজিয়ার স্ট্রাইকার কর্নেলিয়ান স্টুয়ার্টের ক্রস পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে সেভ করেন, এই যা!
এর আগে দিনের প্রথম ম্যাচে স্বদেশি ক্লাব বেঙ্গালুরু এফসিকে ২–০ গোলে হারিয়েছে ভারতের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহনবাগান।