মেসিকে নিয়ে এই দেশাত্মবোধ তখন কোথায় ছিল

পিএসজিতে খুব একটা সুখে নেই মেসিছবি: রয়টার্স

এমন কিছু লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারে এই প্রথম! বার্সেলোনায় কখনোই হয়নি, আর্জেন্টিনার জার্সিতেও বলতে গেলে হয়নি কিন্তু পিএসজিতে প্রথম মৌসুমেই তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়ে গেল মেসির।

চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো থেকেই পিএসজির বিদায়ের ক্ষোভে গতকাল লিগে বোর্দোর বিপক্ষে ম্যাচে মেসি আর নেইমারকে পুরো ৯০ মিনিট দুয়ো দিয়ে গেছেন পিএসজির সমর্থকেরা। ম্যাচটা হয়েছে পিএসজির মাঠ পার্ক দো প্রিন্সেসে। এমনই অবস্থা যে পিএসজির ৩-০ গোলে জয়ের পথে দলের দ্বিতীয় গোলটি করার পরও দুয়োই শুনতে হয়েছে নেইমারকে।

নিজের মাঠে, নিজেদেরই সমর্থকদের কাছ থেকে এভাবে অপমানিত হতে মেসি-নেইমারদের ভালো লাগার তো কোনো কারণ নেই। ভালো লাগেনি আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের সমর্থকদেরও। গতকাল ম্যাচের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পিএসজিকে ধুয়ে দিয়েছেন তাঁরা। মেসির দেশ আর্জেন্টিনা আর নেইমারের ব্রাজিলেও চলছে পিএসজির সমর্থকদের এমন আচরণের সমালোচনা।

তবে সমালোচনা করতে গিয়ে নিজেদের অতীত ভুলে যেতেও রাজি নন আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভারপ্লেটের কোচ মার্সেলো গায়ার্দো। আর্জেন্টিনাও যে একটা সময় মেসির সঙ্গে অনেক বাজে আচরণ করেছে, সেটি মনে করিয়ে দিয়ে গায়ার্দো আর্জেন্টাইনদেরই বলছেন, ‘এখন এত দেশাত্মবোধ দেখাতে যাচ্ছেন কেন!’

কাল পুরো ম্যাচে দুয়ো শুনেছেন মেসি
ছবি: রয়টার্স

গত বুধবার সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল মাদ্রিদের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের শিকার হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নিয়েছে পিএসজি। অথচ নেইমার-এমবাপ্পের পাশে মেসি-রামোসদেরও এনে এবার নিজেদের প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের অপেক্ষা ঘোচানোর স্বপ্ন দেখেছিল ফরাসি ক্লাবটি। রিয়ালের বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ১৫০ মিনিট পর্যন্তও ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও শেষ ৩০ মিনিটে পিএসজির এমন ধসে পড়া মানতে পারছেন না ক্লাবটির সমর্থকেরা।

রাগ, হতাশা, বিরক্তি সব কাল লিগে বোর্দোর বিপক্ষে ম্যাচে বুঝিয়ে দিলেন পিএসজির সমর্থকেরা। পিএসজিরই মাঠ পার্ক দো প্রিন্সেসে হয়েছে ম্যাচটা কিন্তু চার দিন আগে রিয়ালের কাছে হারের ক্ষত এতটাই দগদগে ছিল পিএসজি সমর্থকদের যে নিজেদের মাঠেই পুরো ৯০ মিনিট দুয়ো দিয়ে গেছেন মেসি আর নেইমারকে!

ম্যাচের আগে দলের একাদশ ঘোষণার সময় দশজনের নামেই দুয়ো দিয়েছেন পার্ক দো প্রিন্সেসের সমর্থকেরা, একমাত্র ব্যতিক্রম কিলিয়ান এমবাপ্পে। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে দুই লেগেই গোল পাওয়া ফরাসি স্ট্রাইকারকে করতালিতে আপন করে নিয়েছে পিএসজি সমর্থকেরা।

নেইমার গোল করেও দুয়ো থেকে মুক্তি পাননি
ছবি: রয়টার্স

কিন্তু মেসি–নেইমারদের এমন অপমান সহ্য হচ্ছে না তাঁদের ভক্তদের। এই মৌসুমেই বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে গেছেন বলে মেসিকে নিয়ে এখনই এত সমালোচনা সহ্য হচ্ছে না আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের ভক্তদের। আর্জেন্টিনায়ও পিএসজিকে ধুয়ে ফেলা হচ্ছে। তবে গায়ার্দো এদিক থেকে ব্যতিক্রম। আর্জেন্টাইনদেরই উল্টো একহাত নিয়েছেন।

গায়ার্দো নিজেও পিএসজিতে খেলেছেন ২০০৭-০৮ মৌসুমে। আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৪৪টি ম্যাচ খেলা গায়ার্দো ২০১৪ সালে রিভারপ্লেটের দায়িত্ব নিয়ে ক্লাবটাকে আবার শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়েছেন। লিগ একবার জিতেছেন, তবে দক্ষিণ আমেরিকান ক্লাব ফুটবলের মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বসূচক শিরোপা কোপা লিবার্তাদোরেস জিতেছেন দুবার। সব মিলিয়ে ১৪টি শিরোপা জেতা গায়ার্দোকে কদিন আগেও বার্সেলোনা চাইছে বলে শোনা যেত।

রিভারপ্লেট কাল আর্জেন্টাইন লিগে জিমনাসিয়াকে ৪-০ গোলে সেই গায়ার্দোকে কাল প্রশ্ন করা হলো মেসিকে দেওয়া দুয়ো নিয়ে। প্রথমে একটু অবাকই হয়েছেন, ‘আপনি যে আমাকে এটা জিজ্ঞেস করবেন, এটাই একেবারে আশা করিনি।’ পরে মেসিকে দুয়ো দেওয়া নিয়ে আর্জেন্টাইনদের মাতামাতিতে বিরক্তিই জানিয়েছেন গায়ার্দো, ‘ফুটবলে কেউই আগের কথা মনে রাখে না। আমরাও তো মেসির সঙ্গে অনেক বাজে আচরণ করেছি। এখন এসে এভাবে দেশাত্মবোধ দেখাবেন না।’

রিভারপ্লেট কোচ গায়ার্দো
ছবি: সংগৃহীত

গত জুলাইয়ে ২৮ বছরের শিরোপাখরা ঘুচিয়ে আর্জেন্টিনাকে কোপা আমেরিকা এনে দিয়েছেন মেসি—তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা। এর আগপর্যন্ত তো মেসিকেও আর্জেন্টিনায় সমালোচনা সইতে হয়েছে অনেক। মেসি বার্সেলোনার, আর্জেন্টিনার নন—এমন সমালোচনা তো নিয়মিতই শোনা যেত।

২০১৪ বিশ্বকাপের পর টানা দুই বছরে দুটি কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনা হারের পর মেসির বিরুদ্ধে কত কথাই না রটেছে! ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালের পর তো অবসরই নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মেসি! পরে অবশ্য ফিরে আসেন।

সেটি মনে করিয়ে দিয়ে গায়ার্দো বলছেন, ‘আমাদের বাজে আচরণের কারণেই ও জাতীয় দল থেকে একবার সরে গিয়েছিল। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ এরপর আবার ফিরে এসেছে ও। মনে রাখুন। এসবও আমাদের এখন মনে রাখতে হবে।’

পিএসজি সমর্থকেরা কেন নিজেদের মাঠে নিজেদের খেলোয়াড়কেই এভাবে দুয়ো দিয়েছে, সেটির ব্যাখ্যায় গায়ার্দো বললেন, ‘বুঝতে পারি, একেক জায়গায় ফুটবলকে দেখার ধরনটা একেক রকম। কোনো লক্ষ্য অর্জিত না হলে তারা হয়তো এ রকমই করে। তবে আমি এই আচরণ মানতে পারছি না, মোটেই না।’