মেসিদের বিপক্ষে ২০ মিনিট খেলেই ‘পালাতে’ চেয়েছিলেন এই রিয়াল তারকা

রিয়াল মাদ্রিদে থাকতে মেসিদের মুখোমুখি হয়ে ভুগেছিলেন জাবি আলোনসো।ছবি: টুইটার

গত ২০ বছরে শ্রেষ্ঠতম সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারদের তালিকা তৈরি করলে সাবেক স্প্যানিশ মিডফিল্ডার জাবি আলোনসোর নাম থাকবে।

নিচ থেকে নিজের দুর্দান্ত চিন্তাশক্তি ও পাসিং সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে যেসব সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার আলো ছড়িয়েছেন, সে তালিকায় আন্দ্রেয়া পিরলো, জাভি হার্নান্দেজদের সঙ্গে নিয়মিত জাবি আলোনসোর নামটাও নেওয়া হয়।

আলোনসোর মতো ফুটবলারই যদি বলেন, মাঠে মেসিদের জাদু দেখে তাঁর খেলা ছেড়ে দিয়ে বাসায় পালিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল, তাহলে অন্যদের অবস্থা কেমন হয়, তা সহজেই অনুমেয়।

রিয়াল মাদ্রিদের এই মিডফিল্ডার অকপটে স্বীকার করেছেন পেপ গার্দিওলার সেই বার্সেলোনার শ্রেষ্ঠত্ব। ২০০৮ থেকে শুরু করে ২০১২ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনা গোটা বিশ্বকে যা খেলা দেখিয়েছে, তাতে অনায়াসেই মেসি-জাভি-ইনিয়েস্তাদের সেই দলটাকে বার্সেলোনার ইতিহাসের তো বটেই, তর্কযোগ্যভাবে গোটা ফুটবল ইতিহাসেরই সেরা দল হিসেবে আখ্যা দেওয়া যায়।

কতশত প্রতিপক্ষকে যে নির্ঘুম রাত উপহার দিয়েছিলেন মেসিরা, হিসাব নেই। নিদ্রাহীন প্রতিপক্ষের সেই তালিকায় রিয়াল মাদ্রিদেরও বেশ কজন যে ছিলেন, সেটা জানা গেল সম্প্রতি।

২০১০ সালের ৩০ নভেম্বরের কাহিনি। পেপ গার্দিওলার অধীনে ২০০৮ থেকে ফুটবল বিশ্বের ওপর বার্সেলোনার ছড়ি ঘোরানো শুরু হলেও মেসিদের জাদু দেখার অতটা সরাসরি অভিজ্ঞতা ছিল না জোসে মরিনিওর। সদ্যই রিয়ালের কোচ হিসেবে নাম লিখিয়েছিলেন তখন।

পেপ গার্দিওলার বার্সাকে আগে থেকেই সমীহ করতেন জাবি আলোনসো।
ছবি: টুইটার

ওদিকে জাবি আলোনসোর তত দিনে এক বছর থাকা হয়ে গিয়েছে রিয়ালে। রিয়ালের কোচ হিসেবে নিজের প্রথম ক্লাসিকোতেই চূড়ান্ত অপমানের শিকার হয়েছিলেন মরিনিও। মেসিদের জাদু দেখে মাঠের বাইরে ভুগছিলেন তিনি, আর ভেতরে ভুগছিলেন আলোনসোরা। ম্যাচটা ৫-০ গোলে হেরে বসে রিয়াল।

১৭ মিনিটের মাথায় বার্সাকে দুই গোলে এগিয়ে দেন জাভি ও পেদ্রো। পরে স্ট্রাইকার ডেভিড ভিয়া করেন জোড়া গোল, বাকি গোলটা করেন উইঙ্গার জেফরেন সুয়ারেজ।
ম্যাচে প্রথম থেকেই বার্সেলোনার আধিপত্য দেখে বিরক্ত আর হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন আলোনসো। বিশ্বকাপজয়ী এই মিডফিল্ডার আগেই জানতেন, মেসিদের সম্বন্ধে।

রয়েসয়ে খেললে যে নিজেদের মাঠে মেসি-জাভিরা তাঁদের ওপর ছড়ি ঘোরাবেন, সেটা বেশ ভালোই জানতেন এই মিডফিল্ডার, ‘আমরা জানতাম আমরা যদি ওদের সঙ্গে রয়েসয়ে খেলি, ওরা একদম ছড়ি ঘোরাবে আমাদের ওপর! ক্যাম্প ন্যুতে ওই যে লিগ ম্যাচটা খেলতে গিয়েছিলাম, যে ম্যাচে আমরা ৫-০ গোলে হেরেছিলাম, পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আমার ওই ম্যাচটা জঘন্যতম ছিল। ২০ মিনিট যেতে না যেতেই সবকিছু ছেড়েছুড়ে পালাতে ইচ্ছে হয়েছিল, মনে হচ্ছিল চলে যাই, হোটেলে যাই, গোসল করে বাড়ির পথে রওনা দিই।’

মেসিদের নিয়ে ফুটবল বিশ্বে ত্রাস ছড়িয়েছিলেন গার্দিওলা।
ছবি: টুইটার

সেই শিক্ষাই পরের বছর কাজে লাগিয়েছেন আলোনসোরা, ‘খুবই যন্ত্রণাদায়ক একটা অভিজ্ঞতা ছিল আমাদের জন্য। তবে ওই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতেও পেরেছি। আমরা শিখেছি, ওদের সঙ্গে খেলতে গেলে ওভাবে রয়েসয়ে খেলা যাবে না। পরে নিজেদের খেলার ধরন বদলেছিলাম দেখেই পরের মৌসুমে ওদের হারাতে পারি আমরা।’

পরের মৌসুমে বার্সেলোনার ক্যাম্প ন্যুতে গিয়েই ২-১ গোলে জিতে এসেছিলেন আলোনসোরা। গোল করেছিলেন সামি খেদিরা ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।