ছিলেন না মেসি। নেইমারও না। পারেদেস, মার্কিনিওস, কেয়লর নাভাস, দি মারিয়ারাও ছিলেন না। থাকবেনই-বা কী করে? নিজ নিজ দেশের জাতীয় দলের হয়ে খেলতে প্রত্যেকেই যে এখনো লাতিন আমেরিকায়। গতকালই ম্যাচ খেলেছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল।

ফলে, কাউকেই নিজেদের ম্যাচে পায়নি পিএসজি। মেসি-নেইমার-দি মারিয়াহীন দলের হাল ধরেছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। সেই এমবাপ্পের কল্যাণেই অজেঁর বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে পিএসজি।

গোলের পর আনহেলো ফুলগিনি
ছবি : রয়টার্স

৮৭ মিনিটের পেনাল্টি গোলে পিএসজিকে জয় এনে দিয়েছেন এমবাপ্পে। এই জয়ে ১০ ম্যাচ শেষে যথারীতি শীর্ষেই রইল পিএসজি। ৯ জয়ে তাদের পয়েন্ট ২৭। ১৮ ও ১৬ পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে লেঁস ও নিস।

মেসি-নেইমারহীন পিএসজিকে কোচ মরিসিও পচেত্তিনো সাজিয়েছিলেন ৪-৪-২ ছকে। আক্রমণভাগে এমবাপ্পের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার মাউরো ইকার্দি। পেছনে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারের ভূমিকায় খেলেছেন রাফিনিয়া আলকানতারা। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে খেলা মার্কো ভেরাত্তি ও আন্দের এরেরার পেছনে রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারের ভূমিকায় খেলানো হয়েছিল দানিলো পেরেইরাকে।
গোলকিপার জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মার সামনে রক্ষণভাগে জুটি বেঁধেছিলেন প্রেসনেল কিমপেম্বে ও থিলো কেহরের। দুই ফুলব্যাক হিসেবে ছিলেন কলিন দাগবা ও আবদু দিয়ালো। আশরাফ হাকিমি, জর্জিনিও ভাইনালডম, ইউলিয়ান ড্রাক্সলার, ইদ্রিসা গেয়ে, নুনো মেন্দেসরা ছিলেন বেঞ্চে।

গোলের পর দানিলো পেরেইরার উল্লাস
ছবি : রয়টার্স

প্রথমে গোল করে অঁজেই চমকে দেয় পিএসজিকে। ৩৬ মিনিটে সাউদাম্পটনের সাবেক মিডফিল্ডার সোফিয়ানে বুফল মাঠের ডান প্রান্ত থেকে রক্ষণচেরা পাস বাড়ান বক্সে আসা স্ট্রাইকার আনহেলো ফুলগিনির উদ্দেশে। বলে পা ঠেকিয়ে সহজেই গোল করেন এই ফরাসি ফরোয়ার্ড।

এ গোল যেন পিএসজির রক্ষণ-দুর্বলতা আবারও সামনে নিয়ে এল। প্রমাণিত হলো পিএসজির রক্ষণ আক্রমণভাগের মতো নয়। এর অনেক ফাঁকফোকর থেকেই যাচ্ছে। লেফটব্যাক হিসেবে খেলা আবদু দিয়ালো মূলত একজন সেন্টারব্যাক, ফলে একজন আদর্শ লেফটব্যাকের মতো ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় থাকতে পারেন না তিনি। এর আগেও একই কারণে সমস্যায় পড়েছিল পিএসজি, এই গোলেও সে সমস্যাটাই দেখা গেছে। বুফল যখন ক্রস করার জন্য প্রস্তুত, তখন পড়িমরি করে তাঁকে মার্ক করার জন্য আসতে দেখা যায় দিয়ালোকে, কিন্তু ততক্ষণে বুফল ক্রসটা করে ফেলেছেন।
ওদিকে বাঁ দিকের সেন্টারব্যাক কিমপেম্বেকেও চার্জ করার জন্য আগ্রহী বলে মনে হয়নি। আরেক সেন্টারব্যাক থিলো কেহরেরও বলতে গেলে নিজের সামনে দিয়ে ক্রসটিকে যেতে দিয়েছেন। রাইটব্যাক কলিন দাগবা যতক্ষণে স্লাইড করেছেন, ততক্ষণে বল ফুলগিনির পায়ে। মোটকথা, গোলটি বেশ সহজেই পেয়েছে অঁজে—এটা বলাই যায়।

দলকে গোল করে জিতিয়েছেন, কোচের সমাদর তো এমবাপ্পেরই প্রাপ্য!
ছবি : রয়টার্স

২২ মিনিটে অবশ্য নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত প্রায় করেই ফেলেছিলেন দিয়ালো। মাঝমাঠ থেকে সুন্দর একটা ক্রস পাঠিয়েছিলেন মিডফিল্ডার এরেরার দিকে। এরেরা হেড করে বল জালেও জড়িয়েছিলেন। কিন্তু দেখা যায় দিয়ালো যখন ক্রস করছিলেন, তখন পিএসজির অন্তত তিনজন ছিলেন অফসাইডে। এ কারণে সে গোল বাতিল হয়ে যায়।


অবশেষে ৬৯ মিনিটে পরম আরাধ্য সমতাসূচক গোলটা পেয়ে যায় পিএসজি। গোলের কারিগর যথারীতি এমবাপ্পে। ডান প্রান্ত দিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে বাঁ পা দিয়ে দুর্দান্ত একটা ক্রস করেন এই ফরাসি তারকা, তাতে মাথা ছুঁইয়ে গোল করতে তেমন বেগ পেতে হয়নি পর্তুগিজ মিডফিল্ডার দানিলো পেরেইরার। ম্যাচের ৮৬ মিনিটে এমবাপ্পের ক্রস আটকাতে গিয়ে ভুলে হাতের ব্যবহার করে ফেলেন অজেঁর এক ডিফেন্ডার। পেনাল্টি পায় পিএসজি। সেখান থেকেই গোল করে দলকে পুরো ৩ পয়েন্ট এনে দেন এমবাপ্পে।
গোটা ম্যাচই গ্যালারি থেকে দেখেছেন সের্হিও রামোস। দিয়ালো, কেহরের, কিমপেম্বেদের নবিশ রক্ষণ দেখে মাঠে নামতে নিশ্চয়ই আর তর সইছে না তাঁর।