মেসি-সুয়ারেজ বার্সেলোনাকে বাধ্য করেছিলেন কুতিনিওকে কিনতে

মেসি-সুয়ারেজছবি: টুইটার

বার্সেলোনার ইতিহাসে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় ফিলিপে কুতিনিও। তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে দলবদলও কি এটাই?

দলবদলের সাড়ে তিন বছর পর হয়তো এ ব্যাপারে আর খুব বেশি সন্দেহ করার কিছু নেই। যার রেকর্ড ভেঙে বার্সেলোনার ইতিহাসে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হয়েছেন, সেই উসমান দেম্বেলের দলবদলকেও কুতিনির তুলনায় সফল বলা যায়। চোটমুক্ত থাকলে এখনো কোচ ভরসা রাখেন দেম্বেলের ওপর। কিন্তু কুতিনিওর ওপর ভরসা হারিয়েছেন সবাই।

মেসি দলে থাকার পরও কুতিনিওর মতো ‘নাম্বার টেন’কে কেনার পেছনে সাবেক সভাপতি জোসেফ মারিয়া বার্তোমেউর ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়াকেই কারণ হিসেবে দেখেন সমর্থকেরা। কিন্তু নতুন এক খবরে দাবি করা হয়েছে, ক্লাবের নাকি কুতিনিওকে কেনার কোনো আগ্রহই ছিল না। কিন্তু লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজ জোর করে এ দলবদল করতে বাধ্য করেছেন ক্লাবকে!

কুতিনিও
ফাইল ছবি: এএফপি

২০১৭-১৮ মৌসুমের শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে বার্সেলোনা। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নেইমারকে ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরোতে কিনে নিয়ে যায় পিএসজি। সে শূন্যস্থান পূরণ করতে আরেক ব্রাজিলিয়ানের দিকেই হাত বাড়ায় বার্সেলোনা। কিন্তু তখন লিভারপুল কোনোভাবেই কুতিনিওকে বিক্রি করতে রাজি হয়নি। বিকল্প পথ না পেয়ে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে দেম্বেলেকে কিনে আনে বার্সেলোনা। সেটাও কম নয়, এককালীন ১০ কোটি ৫ লাখ ইউরো খরচ করে। শর্ত সাপেক্ষে সেটা আরও ৪ কোটি ইউরো পর্যন্ত বাড়ার সুযোগ ছিল।

বার্সেলোনা চমক দেখিয়েছে ছয় মাস পরই। জানুয়ারিতেই আবার তারা বাজারে নামে। তত দিনে লিগ নিশ্চিত হয়ে গেছে। ওদিকে লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলে ফেলেছেন কুতিনিও। ফলে দলবদল হলেও কুতিনিওকে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলাতে পারত না বার্সা। এমন অবস্থাতেই লিভারপুল ছাড়তে গোঁ ধরেন কুতিনিও। উপায় না দেখে বিক্রি করতে বাধ্য হয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব। কিন্তু বাধ্য হলেও বার্সেলোনার কাছ থেকে প্রচুর অর্থ খসিয়ে নিয়েছে তারা। এককালীন ১২ কোটি ইউরোর সঙ্গে শর্ত সাপেক্ষে আরও ৪ কোটি ইউরোর কথা জানিয়েই ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে কুতিনিওকে নিয়ে যায় বার্সেলোনা।

মাঝে এক মৌসুম ধারে বায়ার্ন মিউনিখেও খেলে এসেছেন কুতিনিও
ফাইল ছবি : রয়টার্স

এ দলবদল ক্লাব বা খেলোয়াড় কারও জন্যই কোনো ভালো কিছু বয়ে আনেনি। প্রথম ছয় মাসে শুধু লিগে খেলতে পেরেছেন। লিগ আগেই জিতে যাওয়া বার্সেলোনার হয়ে তখন ভালোই খেলেছেন। কিন্তু পরের মৌসুমেই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন কুতিনিও। একের পর এক ম্যাচে তাঁকে সুযোগ দিয়েছেন কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে। কিন্তু মেসির মতো একজন দলে থাকার নিজের পছন্দমতো জায়গায় খেলতে পারছিলেন না কুতিনিও। আবার উইঙ্গার হিসেবেও খেলতে পারছিলেন না। ফলে ফর্ম হারিয়ে বসলেন।
পরের মৌসুমেই আবার ধারে পাঠানো হয়েছে বায়ার্ন মিউনিখে। সেখানেও খুব একটা ভালো করেননি। পুরো মৌসুমে এক ম্যাচেই সবচেয়ে জ্বলজ্বল করেছেন, আর সে ম্যাচেই কপাল পুড়েছে বার্সেলোনার। চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্ন মিউনিখ ৮-২ গোলে হারিয়েছে বার্সেলোনাকে। সে ম্যাচে একটি গোল করানো ছাড়াও দুটি গোল করেছিলেন কুতিনিও।

গত মৌসুমে আবার বার্সেলোনায় ফিরে এসেছেন। তাঁকে বিক্রির করার চেষ্টায় কোনো লাভ হয়নি। চোটের কারণে বড় একটা সময় বাইরে ছিলেন। যখন ফিরেছেন, তখনো দলে জায়গা পাননি। এ মৌসুমে তাই তাঁকে আরেকবার ক্লাব থেকে বের করার চেষ্টা চলছে। আর্থিকভাবে দেউলিয়া হতে বসা বার্সেলোনার বড় এক দুশ্চিন্তার কারণ এখন কুতিনিও। এই খেলোয়াড়ের উচ্চ বেতন ও তাঁর জন্য খরচ করা ১২ কোটি ইউরো বার্সেলোনার বড় এক আক্ষেপের নাম।

কুতিনিও ব্যর্থ হওয়ায় গ্রিজমানকে কিনেছে বার্সেলোনা
ফাইল ছবি : রয়টার্স

এত দিন কুতিনিও প্রসঙ্গে দায়টা সাবেক সভাপতি বার্তোমেউ ও তাঁর বোর্ডের ওপর দেওয়া হতো। কিন্তু স্পোর্তের সাংবাদিক হোয়ান ভেহিলসের এক প্রতিবেদনে উল্টো কিছুর দাবি তোলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বার্সা সভাপতি ও বোর্ডের কোনো ইচ্ছাই নাকি ছিল না এত অর্থ ব্যয় করে কুতিনিওকে আনার। কিন্তু নেইমারকে হারানোর পর এতটাই নাকি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন মেসি ও সুয়ারেজ যে ক্লাবকে তাঁরা বাধ্য করেছিলেন কুতিনিওকে কিনে আনতে।

অবশ্য স্পোর্তের এই প্রতিবেদক বরাবরই একটু বার্তোমেউঘেঁষা বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। আর এর আগেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে মেসি-পিকেদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছিল বার্তোমেউর বিরুদ্ধে।