মেসি ৪০, রোনালদো ৫৬, আর হরলান্ড মাত্র ১৪!
আর্লিং হরলান্ড কি রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ? নাকি আধা মানব আর আধা যন্ত্র?
বিশ্ব ফুটবলে নিজেকে পরিচিত করানোর পর থেকেই যেভাবে গোলের বান ছুটিয়ে চলেছেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ২০ বছর বয়সী নরওয়েইজিয়ান স্ট্রাইকার, তাতে প্রশ্নটা জাগতেই পারে। তারকাখ্যাতি তো এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন, গত এক যুগের বেশি সময় বিশ্ব ফুটবল মাতিয়ে রাখা ‘মেসি বনাম রোনালদো’ দ্বৈরথের উত্তরসূরি হিসেবে যে দ্বৈরথকে ভাবা হচ্ছে, সেখানেও চলে আসছে কিলিয়ান এমবাপ্পের সঙ্গে হরলান্ডের নামটা।
আর হরলান্ডের নাম আসছে রেকর্ড বইয়ের পাতায় পাতায়। সর্বশেষ পাতাটির নাম—চ্যাম্পিয়নস লিগে সবচেয়ে কম ম্যাচে ও সবচেয়ে কম বয়সে ২০ গোল। শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগে কাল রাতে নিজেদের মাঠে সেভিয়ার বিপক্ষে ডর্টমুন্ডের ২-২ গোলের ড্র-তে জোড়া গোল করেছেন হরলান্ড। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ গোলে জিতে চার বছরে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল ডর্টমুন্ড। সে পথে রেকর্ডে নিজের নামটা লিখিয়ে নিয়েছেন হরলান্ড।
কালকের জোড়া গোল নিয়ে মাত্র ১৪ ম্যাচে চ্যাম্পিয়নস লিগে ২০ গোল হয়ে গেল হরলান্ডের। তাঁর চেয়ে কম বয়সে চ্যাম্পিয়নস লিগে ২০ গোল আর কেউ করতে পারেননি। যাঁর সঙ্গে তাঁর তুলনা, সেই এমবাপ্পে ২০ গোল করেছেন ২২তম জন্মদিনের কয়েক দিন আগে।
সবচেয়ে কম বয়সের পাশাপাশি সবচেয়ে কম ম্যাচে চ্যাম্পিয়নস লিগে ২০ গোলের রেকর্ডও হরলান্ডেরই হলো। এর আগে রেকর্ডটা যাঁর ছিল, সেই হ্যারি কেইনের ২০ গোল করতে ম্যাচ লেগেছিল ২৪টি—হরলান্ডের চেয়ে ১০ ম্যাচ বেশি। ডর্টমুন্ড স্ট্রাইকারকে কেন বিশ্ব ফুটবলের ভবিষ্যৎ সুপারস্টারদের একজন ভাবা হচ্ছে, তা বোঝা যাবে এই রেকর্ডে মেসি-রোনালদোর সঙ্গে তাঁর তুলনায়ও। লিওনেল মেসির ২০ গোল পেতে চ্যাম্পিয়নস লিগে ম্যাচ খেলতে হয়েছিল ৪০টি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ৫৬টি!
হরলান্ডকে নিয়ে আগামী জুলাই-আগস্টের দলবদলে কাড়াকাড়ি যে পড়বে, তা নিয়ে সংশয় সামান্যই। তা আগামী মৌসুমে হরলান্ড দলে থাকবেন কি না, তা অন্য বিবেচনা, আপাতত হরলান্ড আছেন বলেই হয়তো এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে আরও এগোনোর স্বপ্ন দেখে ডর্টমুন্ড। হরলান্ড আছেন বলেই হয়তো গতকাল নিজেদের মাঠে ম্যাচটিতে সেভিয়ার ফিরে আসার তাড়নাকেও অত ভয় পেতে হয়নি ডর্টমুন্ড সমর্থকদের।
প্রথম লেগে সেভিয়ার মাঠে ৩-২ গোলে শেষ আটে এক পা দিয়েই রেখেছিল ডর্টমুন্ড। গোলের ব্যবধান মাত্র ১, তবে প্রতিপক্ষের মাঠে গোল যে চ্যাম্পিয়নস লিগে সোনার দামে বিকোয়! তিন-তিনটি গোল পাওয়া তাই ডর্টমুন্ডের কাজটা অনেক সহজ করে দিয়েছিল। যদিও কাল সেভিয়া শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছে, সেই কৃতিত্ব হুলেন লোপেতেগির দলকে দিতেই হবে।
আগের ম্যাচে এগিয়ে থাকার সুবিধা ছিল, কাল ৫৬ মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে ডর্টমুন্ডকে আরও নির্ভার করে দেন হরলান্ড—চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বশেষ চার ম্যাচের প্রতিটিতেই জোড়া গোল হলো তাঁর, এই মৌসুমে ৬ ম্যাচে হলো ১০ গোল। কাল ৩৫ মিনিটে মার্কো রয়েসের কাটব্যাক থেকে পোস্টের কয়েক গজ দূর থেকে হরলান্ড বল জড়ান জালে, ৫৬ মিনিটে দ্বিতীয়টি পেনাল্টি থেকে। দ্বিতীয় গোলে অবশ্য নাটক হলো। হরলান্ডকে ফাউল করাতেই পেনাল্টিটা পায় ডর্টমুন্ড, যদিও সিদ্ধান্তটা বিতর্কিত। ফাউলের পরও সেবার দারুণ চিপে বল জালে জড়িয়েছিলেন হরলান্ড। কিন্তু ভিএআর জানায়, গোল নয়, পেনাল্টি নিতে হবে!
পেনাল্টি থেকে হরলান্ডের শট ঠেকিয়েও দিয়েছিলেন সেভিয়া গোলকিপার ইয়াসিন বুনু। কিন্তু আবার ভিএআর এল হরলান্ডকে বাঁচাতে। দেখা গেল, হরলান্ড শট নেওয়ার আগেই গোললাইন ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন বুনু। আবার শট নেওয়া হলো, এবার আর হরলান্ডের গোল করায় ভুল হলো না। গোলের পর উদ্যাপনের আগে বুনুর সামনে গিয়ে কিছু একটা বলেছেনও ডর্টমুন্ড স্ট্রাইকার, সেভিয়ার বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় তখন অনেকটা তেড়ে গিয়েছিলেন তাঁর দিকে।
কী কথা হয়েছিল? হরলান্ড ম্যাচের পর বললেন, ‘সত্যি বলতে দ্বিতীয়বার (পেনাল্টি থেকে) শট নেওয়ার আগে আমি বেশ নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু প্রথমবার শট মিস করার পর ও (বুনু) আমার মুখের সামনে এসে চিৎকার করেছিল, সে কারণে আমার মনে হচ্ছে আরেকটা গোল করতে পারলে ভালো হতো!’ পেনাল্টি থেকে দ্বিতীয়বারে গোল করাকেও হরলান্ড ব্যাখ্যা করলেন ‘কারমা’ বা কর্মফল হিসেবে, ‘আমি প্রথমবার পেনাল্টিতে গোল করতে ব্যর্থ হওয়ার পর ও (সেভিয়া গোলকিপার বুনু) আমাকে যা বলেছিল, (দ্বিতীয়বারে গোল করার পর) আমিও ওকে তা-ই বলেছি। হয়তো জগতে কারমা আছে বলেই এটা হয়েছে!’
হরলান্ডের জোড়া গোলে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দুই লেগ মিলিয়ে ফলটা হলো, ডর্টমুন্ড তখন ৫-২ গোলে এগিয়ে! সেভিয়ার সেখান থেকে ফেরার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কাছাকাছিই ছিল। তবে সেভিয়া চেষ্টা কম করেনি। অন্তত হরলান্ডের জোড়া গোলের জবাব জোড়া গোলে দিয়েছেন সেভিয়ার স্ট্রাইকার ইউসেফ এন-নেসরি। ৬৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে প্রথমটি, যোগ করা সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে দ্বিতীয়টি! কিন্তু ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে।