আবাহনীর আছে একজন রুবেল মিয়া

আবাহনীর জয়ের নায়ক রুবেল। ছবি: প্রথম আলো
আবাহনীর জয়ের নায়ক রুবেল। ছবি: প্রথম আলো

জাদুকর কখন টুপি খুলবেন আর বেরিয়ে আসবে অত্যাশ্চর্য এক খরগোশ...থুড়ি খরগোশ নয় একটি গোল। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের পশ্চিম গ্যালারির আবাহনী লিমিটেডের সমর্থকেরা শেষ বাঁশি বাজার আগে এমন কিছুই হয়তো ভাবছিলেন! ভাবাটাই স্বাভাবিক। কেননা তাদের দলে আছেন একজন জাদুকর, নাম রুবেল মিয়া। যিনি শেষ মুহূর্তে টুপি খুললেন, করলেন গোলও। তাঁর করা একমাত্র গোলেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের বিপক্ষে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। 

আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথের মীমাংসার গোলটি এসেছে শেষ বাঁশি বাজার অন্তিম মুহূর্তে অতিরিক্ত যোগ করা সময়ে। ঘরোয়া কী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, বগুড়ার ছেলে রুবেলের অসাধারণ গোল আছে অনেক। কিছুদিন আগে এএফসি কাপে বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে করা গোলটার কথায় মনে করে দেখতে পারেন। ভারতীয় চ্যাম্পিয়ন ক্লাবটির বিপক্ষে মাঝমাঠ থেকে দূরপাল্লার অসাধারণ গোল করে আবাহনীর ২-০ গোলের জয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন তিনি। তবে মোহামেডানের বিপক্ষে করা আজকের গোলটিকেই এগিয়ে রাখলেন রুবেল, ‘স্বপ্ন ছিল আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের অংশ হব। আজ প্রথম খেললাম, গোলও করলাম। আর আমার গোলেই আমার দল আবাহনী জিতেছে।’ এই মৌসুমেই আবাহনীতে প্রথম নাম লিখিয়েছেন রুবেল। শেষ মৌসুমে চট্টগ্রাম আবাহনীর জার্সিতে মাঠ দাপিয়েছিলেন তিনি।
আজ সোমবার আবাহনী-মোহামেডান ম্যাড়মেড়ে ফুটবলের বিজ্ঞাপনেও শুরু থেকে রুবেল কিন্তু আলাদা। ডান প্রান্ত থেকে রুবেলের গড়ানো ক্রসে গোলমুখ থেকে সাদ ঠিকমতো পা লাগাতে পারলেই ১১ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত আবাহনী। সাদের মিসে পশ্চিম গ্যালারি থেকে ভেসে এসেছে হতাশার সুর ‘ইশ্‌’। রুবেলের কল্যাণে এই আক্রমণটি ছাড়া প্রথমার্ধে সংবাদকর্মীদের নোট নেওয়ার মতো তেমন কিছুই নেই।
দ্বিতীয়ার্ধে আবাহনীর খেলায় গতি ছিল। তবে তা যতটা না মোহামেডানের মাঝমাঠ ঝিমিয়ে পড়ার ব্যর্থতায়, তার চেয়ে বেশি রুবেলের আগ্রাসী মনোভাবে। ডান প্রান্ত দিয়ে রুবেল কী করেছেন তার সাক্ষী দেবে মোহামেডানের লেফট উইঙ্গার কোমল ও লেফটব্যাক লিঙ্কনের পরনের কাদা জড়ানো প্যান্ট। দ্রুতগতির রুবেলকে আটকাতে বারবার স্লাইডিংয়ের আশ্রয় নিতে হয়েছে এই দুজনকে। তবুও যদি রুবেলকে আটকাতে পারতেন!
৫৪ মিনিটে গোল এরিয়ার মধ্যে থেকে নেওয়া রুবেলের শট ক্রসবার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। আকাশি-নীল সমর্থকদের দীর্ঘশ্বাসটা বাড়ে। ৬০ মিনিটের পর থেকে আবাহনী যেন চ্যাম্পিয়ন দলের মতো খেলা শুরু করল। ইমন বাবু, সাহেদ, ওয়ালী, সাদরা পাসের পর পাসের মালা সাজালেন। মোহামেডানের মাঝমাঠের খেলোয়াড়দের হাত উঠে গেল মাজায়। ক্ষত সারানোর জন্য শরীফের বদলিতে মাঠে আসে পরিশ্রমী ইমরুল। আজও কোচ ছাড়াই মাঠে নেমেছিল সাদা-কালোরা ।

পাশের ডাগ আউট থেকে আবাহনীর ক্রোয়েশিয়ান কোচ বুঝে গেলেন প্রতিপক্ষ পিছু হটেছে। মোক্ষম চালটা দিতে সময়ও নিলেন না। লেফট উইঙ্গার সাদকে উঠিয়ে নামান হলো স্ট্রাইকার নাবিব নেওয়াজ জীবনকে। এমেকা-জীবন-রুবেল ত্রয়ীর রসায়নে মুখ থুবড়ে পড়ে সাদা-কালো রক্ষণভাগ। শেষে বদলি জীবনের বাড়ানো বলেই গোলটি করেছেন রুবেল। এর আগে ৭০ মিনিটে রুবেলের ক্রসে এমেকার হেড ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। গোল হজমের আগ মুহূর্তে মোহামেডানও সুযোগ পেয়েছিল। তবে তা কেবল আফসোসই বাড়িয়েছে মোহামেডান সমর্থকদের।
দেশের ফুটবলে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ উত্তাপ হারিয়েছে আগেই। ফলে মাঠে দর্শকের আগমন থাকে কম। কিন্তু যাঁরা এসেছিলেন, রুবেলের গোলটি দেখে বাড়ি ফেরার রাস্তা ধরতে পেরেছেন তৃপ্তি নিয়ে এ কথা বলাই যায়। আর আবাহনীর সমর্থকেরা ম্যাচ শেষে রুবেল মিয়াকে কাঁধে নিয়ে যেভাবে ড্রেসিং রুমের দিকে চলে গেলেন। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল, ভাগ্যিস একজন রুবেল মিয়া আছে তাঁদের।