মোহামেডানে আবারও বিশৃঙ্খলা, হচ্ছে না নির্বাচন

মোহামেডানে নতুন করে বিশৃঙ্খলা
ফাইল ছবি

ফুটবল মাঠে ঢাকা মোহামেডান আবার আগের মতো দাপট দেখাবে। ক্লাবের নতুন পরিচালনা বোর্ড নির্বাচিত হলে সব সমস্যার সমাধান আসবে। এমন আশার বাণী কিছুদিন ধরেই শুনে আসছেন মোহামেডানের সমর্থকেরা। সবকিছুর মূলে রয়েছে সাধারণ সভা ও নির্বাচন। সেই লক্ষ্যে গত ১৮ অক্টোবর ক্লাবের পরিচালনা বোর্ডের অনলাইন সভায় ঠিক হয়, সাদাকালো শিবিরের বহুপ্রত্যাশিত সাধারণ সভা ও নির্বাচন ৯ জানুয়ারি।

কিন্তু এই তারিখটা রয়ে গেছে মুখে মুখেই। নির্বাচন আয়োজনের কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। ফলে মোহামেডানের নির্বাচন ও সাধারণ সভা আরেক দফা পিছিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে এত দিন যে বিশৃঙ্খলা ছিল ক্লাবে, সেটাও রয়েই গেছে।

মোহামেডান ক্লাবের অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ সভাসংক্রান্ত কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি সদস্যদের। কোনো বোর্ড সভাও হয়নি। এ বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা তো কোনো কাজই করেনি।’ কারা কাজ করেনি, জানতে চাইলে বলেন, ‘মোহামেডানের কর্মকর্তারা।’

সমর্থকদের আশা মোহামেডান আবার দাপট দেখাবে মাঠে
ফাইল ছবি

ক্লাবটির পরিচালনা পর্ষদের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৩ সালে। সভাপতি ও ১৬ জন পরিচালক নিয়ে মোহামেডানের পরিচালনা পর্ষদ। দুই বছর পরপর নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও নানা আইনি মারপ্যাঁচ, মামলা ইত্যাদি কারণে নির্বাচন ঝুলে ছিল এত দিন। নির্বাচন আয়োজনের জন্য গত বছর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সভাপতি এম এ আমিন উদ্দিনকে মোহামেডানের অন্তবর্তীকালীন সভাপতির দায়িত্ব দেন আদালত। কিন্তু অদ্যাবধি নির্বাচন করা যায়নি।

ক্লাবের বহুপ্রত্যাশিত সাধারণ সভা ও নির্বাচনের খবরই না থাকায় সাধারণ সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। কেন সাধারণ সভা ডাকা হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। অনেকে আবার করোনার মধ্যে এসব কীভাবে হবে সেই যুক্তিও দেন। সব মিলিয়ে মোহামেডান কোন পথে এগোচ্ছে, তা বিরাট এক ধাঁধা।

ক্লাবটির স্থায়ী সদস্য ফজলুর রহমান বাবলু প্রথম আলোকে বলেন, ‘৯ জানুয়ারি নির্বাচন ও সাধারণ সভার তারিখ ঠিক করা হয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশন গঠন করা। কিন্তু সেটা হয়নি। ভোটার তালিকাও চূড়ান্ত করা হয়নি।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমরা শুনতে পাচ্ছি ১৪৬ জনকে সদস্য করা হচ্ছে। সাধারণ সভা অনুমোদন করলে এই ১৪৬ জনকে নেওয়া যেতে পারে। তা–ও এবার তাঁরা ভোট দিতে পারবেন না।’

গত ১৮ এপ্রিল মোহামেডানের সাধারণ সভা ও নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও করনোভাইরাসের কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছিল, নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে মোহামেডানের সাংগঠনিক ভঙ্গুর অবস্থা দূর হবে। গত বছর সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনো–কাণ্ডের পর ক্লাবের ডাইরেক্টর ইন চার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তিনি জামিনে থাকলেও ক্লাবে আসেন না। ক্লাব থেকে পুরোপুরিই বিচ্ছিন্ন। ক্লাবটি বর্তমানে পরিচালনার করছেন সংস্কারপন্থী কয়েকজন।

ক্লাবের স্থায়ী সদস্য রেজাউর রহমান (সোহাগ) প্রথম আলোকে বলেন, ‌‘ক্যাসিনো–কাণ্ডের পর ক্লাবে তৈরি হওয়া সংকট অনেকটা কাটিয়ে ওঠা গেছে। ক্লাবের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল করিম এগিয়ে এসেছেন। ফুটবল দল গঠনে তিনিই বেশির ভাগ অর্থ দিচ্ছেন। কিন্ত দ্রুত সাধারণ সভা ও নতুন বোর্ড না হলে ক্লাবের বর্তমান অবস্থা ধরে রাখা যাবে না।’

রেজাউর রহমান যোগ করেন, ‘ক্লাবের সদস্য হিসেবে মনে করি, দ্রুতই সবকিছু হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি সহসা উদ্যোগ নিলে ভালো হবে। তাঁর জোরালো ভূমিকা রাখা উচিত। দুই মাসের মধ্যে সাধারণ সভা এবং নির্বাচিত বোর্ড না এলে ক্লাব আবারও সমস্যায় পড়বে।’

কয়েক মাস আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল, নির্বাচন না করে মনোনীত একটি নতুন বোর্ড করার উদ্যোগ চলছে। ক্লাবের একটি সূত্রমতে, সেই বোর্ড গঠনের কাজ এগিয়েছে। কিন্তু সাধারণ সভা না হলে কোনো কিছুই হবে না। তাই সাধারণ সভার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে বেশি। কিন্তু সাধারণ সভা কবে হবে আপাতত কেউ জানে না।