যেখানে ফুটবলের হাতেখড়ি, সেখানেই শুরু কোচিং ক্যারিয়ার

কোচের ভূমিকায় আবদুল বাতেন মজুমদার কোমল। কাল পল্টনে।
ছবি: প্রথম আলো

পল্টনের আউটার স্টেডিয়ামের ডাগআউটে দাঁড়িয়ে কখনো অস্থিরভাবে পায়চারি করছেন। কখনো গোলের পর উল্লাসে ফেটে পড়ছেন। আবদুল বাতেন মজুমদার। কোমল নামে পরিচিত জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকারকে কাল দেখা গেল নতুন পরিচয়েই।

ঢাকায় কাল শুরু হয়েছে জাতীয় স্কুল ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্ব। এই টুর্নামেন্ট দিয়েই ফুটবলার আবদুল বাতেনের কোচিং ক্যারিয়ারের অভিষেক হলো। গত অক্টোবরে এএফসির ‘সি’ লাইসেন্স কোচেস কোর্স করেছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে স্কুল থেকে ফুটবল ক্যারিয়ারের হাতেখড়ি, সেই স্কুল দিয়েই কোচিংয়ের শুরু আবদুল বাতেনের! এবারের স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টে দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলছে দেশের বিভিন্ন জেলার আটটি স্কুল। বাতেনের দায়িত্বে ফেনীর ছাগলনাইয়া পাইলট হাইস্কুল।

২০০৫ সালের জেএফএ কাপের আবিষ্কার আবদুল বাতেন। জাতীয় দলে খেলেছেন ২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলেছেন ২০১৫ সালের ১৭ নভেম্বর। ঢাকায় বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ওই ম্যাচ ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ২০১০ সালে ঢাকা এসএ গেমসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে আবদুল বাতেনের গোলেই সোনা জেতে বাংলাদেশ। চোটের কারণে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়লেও ঘরোয়া ফুটবলে নিয়মিতই খেলছিলেন গত মৌসুম পর্যন্ত। খেলেছেন আবাহনী, মোহামেডান, শেখ রাসেল, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে। ২০০৯ সালে মোহামেডানকে প্রথম সুপার কাপ জেতানোয় বড় অবদান ছিল আবদুল বাতেনের। সর্বশেষ খেলেছেন গত মৌসুমে, আরামবাগের হয়ে। এবার খেলা ছেড়ে এসেছেন কোচিং পেশায়। দায়িত্ব নিয়েছেন স্কুল ফুটবলে নিজের প্রিয় স্কুলের।

আবদুল বাতেন স্নাতক করেছেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। ফুটবলার ক্যারিয়ার শেষে চাইলেই বেছে নিতে পারতেন প্রকৌশল পেশাকেই। কিন্তু ফুটবল যে তাঁর রক্তে! তাই তো ফুটবল মাঠেই ফিরে এলেন। কাল পল্টন মাঠে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘ফুটবল আমার কাছে নেশা। আমার রক্তে ফুটবল। বাড়ি গেলে এই স্কুল মাঠেই ট্রেনিং করি। স্যারেরা জানেন আমি কোচিং কোর্স শেষ করেছি। যখন স্কুলের স্যারেরা আমাকে অনুরোধ করলেন, আমি না করিনি। এখন মনে হচ্ছে, আমি ফুটবলের বাইরে থাকতে পারব না।’

বল দখলের লড়াইয়ে ফেনী ছাগলনাইয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ফুটবলাররা (লাল জার্সি)।
ছবি: বাফুফে

যে স্কুলে একসময় ফুটবল খেলেছেন, যে স্কুল তাঁকে তৈরি করে দিয়েছে জাতীয় দলে খেলার প্ল্যাটফর্ম, সেই দলেরই কোচ আবদুল বাতেন। ব্যাপারটা ভাবতেই ভীষণ রোমাঞ্চিত এই ফুটবলার, ‘এটা সত্যি, আমি ভীষণ রোমাঞ্চিত। তবে এখানে এসে আমার আবেগ সরিয়ে রেখেছি। এখন আমার দায়িত্ববোধ বেশি। আমার লক্ষ্য দলকে চ্যাম্পিয়ন করা। যদি এদের নিয়ে ভালো কিছু করতে পারি তাহলেই ভালো লাগবে।’

কাল প্রথম ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত টাঙ্গাইলের সূতী ভিএম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে ছাগলনাইয়া স্কুল। তৃণমূলের ফুটবল নিয়ে কাজ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত আবদুল বাতেন, ‘আমি যখন জাতীয় দলে খেলেছি, তখন একরকম দায়িত্ব ছিল, এখন আরেক রকম দায়িত্ব। এখন আমি কোচ। আমার অভিজ্ঞতা, ফুটবল ক্যারিয়ারের সাফল্য, ব্যর্থতা এদের সঙ্গে ভাগাভাগি করছি। যেটা ওদের কাজে লাগবে ভবিষ্যতে। আমি এই দলের সঙ্গে কাজ করতে পেরে খুশি।’

কেন নিজের স্কুলকেই বেছে নিলেন কোচিংয়ের অভিষেকের জন্য? এমন প্রশ্নে আবদুল বাতেনের হাসিমাখা উত্তর, ‘আসলে নিজের স্কুলের প্রতি আলাদা একটা আবেগ কাজ করেছে আমার। তা ছাড়া এটা সত্যি আমি ফুটবলের বাইরে থাকতে পারব না। এখানে থাকলে মাঠের পাশে থাকা যায়। ফুটবলারদের কাছাকাছি থাকা যায়। ফুটবলের সঙ্গে থাকা যায়। আমার কাছে মনে হয়েছে ফুটবলের সঙ্গে থাকার এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।’