রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ম্যানচেস্টার সিটি ছাড়তে চেয়েছিলেন জিনশেঙ্কো

দেশের জন্য যুদ্ধ করতে ম্যানচেস্টার সিটি ছেড়ে যেতে চেয়েছিলেন জিনশেঙ্কোছবি: ইনস্টাগ্রাম

ওলেক্সান্দার জিনশেঙ্কোকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে-শুনিয়ে রাজি করাতে হয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটিকে। গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া যখন ইউক্রেন আক্রমণ করল, তখনই মাতৃভূমিতে ফিরতে চেয়েছিলেন ইউক্রেনের অন্যতম সেরা এই তারকা। দেশপ্রেমিক জিনশেঙ্কো রীতিমতো অস্ত্র হাতে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন।

কোনোমতে তাঁকে ফেরানো গিয়েছিল। কিন্তু তাঁর মন সব সময়ই পড়ে ছিল স্বদেশভূমে, যেখানে তাঁর দাদা-দাদি বাস করেন। যুদ্ধ শুরুর পর অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল দুজনকে নিরাপদে দেশের বাইরে কোথাও পাঠিয়ে দেওয়ার। কিন্তু জিনশেঙ্কোর দাদা-দাদি রাজি হননি। মৌসুম শেষ। ম্যানচেস্টার সিটির প্রিমিয়ার লিগ জয়ে অবদান রাখার পর জিনশেঙ্কোর লক্ষ্য এখন দেশকে কাতার বিশ্বকাপের মূলপর্বে পৌঁছে দেওয়া। গত বুধবার গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত প্লে–অফ সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারানো ইউক্রেন আর বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বের মধ্যে দূরত্ব এখন মাত্র ৯০ মিনিটের। আগামী রোববার ওয়েলসের বিপক্ষে প্লে–অফ ফাইনাল জিতলে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন পৌঁছে যাবে কাতার বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বে।

দেশকে বিশ্বকাপে নিতে চান জিনশেঙ্কো
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ‘দ্য সান’ জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর জিনশেঙ্কোর ভাবনা ফুটবলের বাইরে চলে গিয়েছিল। তাঁর ভাবনা-চিন্তাজুড়ে ছিল তাঁর দেশ। জিনশেঙ্কোর বক্তব্য ছিল খুব পরিষ্কার, ‘আমি সত্যি কথাই বলতে চাই। আমার পরিবার কিংবা আমার মেয়ের জন্য হলেও আমি ইউক্রেনে ফিরতে চাই। আমি আমার দেশের মানুষকে চিনি। তাদের মানসিকতা জানি। তারাও আমার মতোই ভাবছে। তারা লড়াই করে যাচ্ছে। তারা বরং মৃত্যুকেই বেছে নেবে কিন্তু তারা মাথানত করবে না।’

জিনশেঙ্কোকে ম্যানচেস্টারে ধরে রাখা গেলেও যুদ্ধ থেকে ফেরানো যায়নি। অস্ত্র হাতে না নিয়েও যে যুদ্ধ করা যায়, জিনশেঙ্কো সেটিই করছেন। ইউক্রেনের ন্যাশনাল ব্যাংকে প্রচুর অনুদান পাঠিয়েছেন। সেনাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছেন। সাধারণ মানুষের জন্য ত্রাণ পাঠিয়েছেন। ইউক্রেন সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ আছে। জিনশেঙ্কো তাঁদের কথা দিয়েছেন, যুদ্ধ শেষ হলে সেনাবাহিনীর সম্মানে বিশাল পার্টির আয়োজন করবেন।

অস্ত্র হাতে যুদ্ধ হয়তো করছেন না, কিন্তু জিনশেঙ্কো নানাভাবেই আছেন ইউক্রেনের অস্তিত্বের এই যুদ্ধে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

আপাতত ওয়েলসের বিপক্ষে ম্যাচটি জিততে চান জিনশেঙ্কো। এবার বিশ্বকাপে যেতে পারলে ইউক্রেনের ফুটবল ইতিহাসে এটি হবে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে খেলার নজির। ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে আন্দ্রেয়া শেভচেঙ্কোর ইউক্রেন প্রথমবারের মতো খেলেছিল বিশ্বকাপে। যুদ্ধের মধ্যে বিশ্বকাপে দলকে নিয়ে যেতে পারলে সেটি যে তাঁর দেশের মানুষের জন্য বিরাট এক উপহার হবে, তা বোঝেন জিনচেঙ্কো, ‘এ মুহূর্তে ইউক্রেনের পরিস্থিতিটা কেমন, সেটা সবাই জানেন। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও ওয়েলসের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটিও আমাদের জন্য বাঁচা-মারার ম্যাচই। আমরা দল হিসেবে বিশ্বকাপে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। একটাই লড়াই বাকি, সে লড়াইয়ে জিততে চাই।’