রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনাকে নিয়ে খেলছে ব্রাজিলিয়ান বিস্ময়

রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার নজরে আছে এন্দরিকছবি: কোপিনিয়া টুইটার

বয়স এখনো ১৬ হয়নি। ফলে এখনো ক্লাবের সঙ্গে পেশাদার চুক্তি করা হয়নি। পেশাদার চুক্তি তো পরে, এখনো পেশাদার ফুটবলই খেলা হয়নি তার। কিন্তু এর মধ্যেই তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গেছে। কোন খেলোয়াড়ের কথা বলা হচ্ছে? ব্রাজিলের নতুন বিস্ময় বালক এন্দরিক ফিলিপে মরেইরা। ব্রাজিলিয়ান ঢঙে তাকে অবশ্য সবাই এন্দরিক নামেই চেনে এখন।

ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব-২১ পর্যায়ের ফুটবল প্রতিযোগিতা কোপিনিয়া ট্রফি এবারই প্রথম জিতেছে পালমেইরাস। দলটিকে এমন সাফল্য এনে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ১৫ বছর বয়সী এন্দরিক। ২০০৬ সালের ২১ জুলাইয়ে জন্ম নেওয়া এক ছেলে তার চেয়ে ৫ বছর বেশি বয়সীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলছে, এটুকুই বিস্ময় জাগাতে যথেষ্ট। বক্সের ওপর থেকে বাইসাইকেল কিকে গোল করে ও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়ে এন্দরিক বুঝিয়ে দিয়েছে, কেন ইউরোপের বড় বড় সব ক্লাবের নজর তার দিকে।

রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা যোগ দিয়েছে তাকে পাওয়ার দৌড়ে। সুযোগ পেয়ে দুই দলকে নিয়ে ‘খেলছে’ ১৫ বছরের এন্দরিকও।

২০০৬ সাল থেকে নেইমারের প্রতি নজর ছিল রিয়ালের। কিন্তু ২০১৩ সালে তাদের হাতের নাগাল থেকে বেরিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনায় যোগ দিয়েছেন নেইমার। এ ঘটনায় যেন অহমে লেগেছে রিয়ালের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের। না হলে ব্রাজিলে যত সম্ভাবনাময় তরুণের দেখা মিলছে, তাকেই রিয়াল মাদ্রিদে কেন টেনে আনার চেষ্টা করবেন পেরেজ!

১৬ বছর বয়সী ভিনিসিয়ুসের জন্য চোখ কপালে তোলা ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউরো খরচ করেছেন, এক বছর পর আরেক ১৬ বছর বয়সী রদ্রিগোর জন্য আবার ৪ কোটি ইউরো ব্যয় করেছেন। ১৮ বছরের মিডফিল্ডার রেইনিয়েরের জন্যও ৩ কোটি ব্যয় করার আগে দুবার ভাবেননি পেরেজ।

প্রথম দুজনকে পাওয়ার চেষ্টা বার্সেলোনাও করেছিল। ভিনিসিয়ুসের ক্ষেত্রে রিলিজ ক্লজের চেয়েও ১ কোটি ৫০ লাখ ইউরো বেশি দিয়ে ‘যুদ্ধে’ রিয়াল জিতেছে, আর রদ্রিগোর ক্ষেত্রে বার্সেলোনার জন্য কাল হয়েছে নেইমারের দলবদল।

কোপিনিয়া ট্রফি জিতেছে এন্দরিক (বাঁয়ে)
ছবি: টুইটার

সে সময় বার্সা নেইমারের ক্লাব সান্তোসের চেয়ে নেইমারের বাবাকে অর্থ বেশি দেওয়ায় নাখোশ সান্তোস কাতালান ক্লাবের কাছে আর কোনো খেলোয়াড় বিক্রিতে আগ্রহী ছিল না। এর চেয়ে রিয়ালের সঙ্গে আলোচনাতেই বেশি আগ্রহী ছিল সান্তোস।

এবার এন্দরিকের ক্ষেত্রেও আবার লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছে দুই দল। এন্দরিকের ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট একটু ব্যতিক্রম। আগের দুজনের ক্ষেত্রে বয়স ১৬-এর বেশি ছিল, ফলে ফ্ল্যামেঙ্গো ও সান্তোসের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছিল রিয়াল ও বার্সাকে।

কিন্তু এন্দরিকের বয়স ১৬-এর কম। ফলে পালমেইরাসের বয়সভিত্তিক দলে খেললেও এন্দরিক এখনো আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে বাধা পড়েননি পালমেইরাসের সঙ্গে। ফলে রিয়াল ও বার্সা চাইলে এখনই এই খেলোয়াড়কে রাজি করাতে পারবে তাদের ক্লাবে খেলানোর জন্য। মৌখিকভাবে চুক্তি করে নিতে চাইলে পালমেইরাস বাধা দিতে পারবে না।

যদিও বার্সা-রিয়ালের পক্ষে এখনই এন্দরিককে ক্লাবে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, ইউরোপের বাইরের কোনো খেলোয়াড়ের বয়স ১৮ হওয়ার আগে ইউরোপের কোনো ক্লাব তাকে নিতে পারবে না। ভিনিসিয়ুস ও রদ্রিগোকে সে কারণেই চুক্তি করার দেড় বছর পর ক্লাবে নিতে পেরেছে রিয়াল। সে সময়টা ব্রাজিলেই থেকেছেন দুজন। এন্দরিকের ক্ষেত্রেও সেটা মানতে হবে আগ্রহী ক্লাবকে।

বার্সেলোনা ও রিয়ালের এতে আপত্তি নেই, এই স্ট্রাইকারকে যেকোনোভাবে নিজেদের দলে টানতে পারলেই তারা খুশি। আর ওদিকে স্প্যানিশ দুই পরাশক্তিকে নিজের প্রতি আগ্রহী দেখে পরিস্থিতির ‘সদ্ব্যবহার’ করছে এন্দরিক। দুই ক্লাবকেই টোপ দিচ্ছে এই স্ট্রাইকার।

রিয়াল মাদ্রিদ তাকে পেতে চায়—এমন খবর ছড়ানো মাদ্রিদভিত্তিক পত্রিকা মার্কা প্রথমে যোগাযোগ করেছে তার সঙ্গে। সে সাক্ষাৎকারে রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থকদের বেশ আশা দেখিয়েছে এন্দরিক।

এন্দরিকের বয়স নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ আছে
ছবি: টুইটার

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে আদর্শ মানা এই স্ট্রাইকার বলেছে, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কারণেই এই ক্লাব আমার প্রিয়। তাঁকে আমি সব সময় অনুসরণ করেছি, সেখানে চার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন তিনি। ক্রিস্টিয়ানোর জন্য রিয়াল মাদ্রিদকে অনেক ভালোবাসি। তবে তাদের ইতিহাসও দেখেছি এবং তারা অনেক ভালো দল। এই ক্লাব আমাকে নজরে রাখছে এবং আমার খেলা দেখছে, এটা আমার জন্য গর্বের ব্যাপার।’

মার্কার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বার্সেলোনার আগ্রহের প্রসঙ্গও উঠে এসেছিল। কাতালুনিয়ার সমর্থকদেরও আশা দেখিয়েছেন এন্দরিক, ‘ওরাও ভালো দল, দেখনদারি। দারুণ সব খেলোয়াড় ওদের, যাদের অনেকেই চলে গেছে। মেসি, জাভি ও ইনিয়েস্তা...। বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবগুলোর একটি আমাকে অনুসরণ করে, এটা তো ভালো খবর।’

কিন্তু মার্কার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রিয়ালের প্রতিই বেশি টান দেখিয়েছে ব্রাজিলিয়ান বালক। রিয়ালের তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র তাকে নিজের জার্সি উপহার দিয়েছেন। রিয়ালের ২০ নম্বর জার্সি নিয়ে ছবি তোলা এন্দরিক বলেছে, ‘আমি তাঁকে অনেক সমর্থন দিই। আশা করি রিয়াল মাদ্রিদ আরেকটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতবে।’

মার্কা প্রতিবেদক পাঠিয়েছে, বার্সেলোনাভিত্তিক পত্রিকা স্পোর্তও বসে থাকেনি। তাদের প্রতিবেদকের সামনে অবশ্য বার্সেলোনার প্রতিই টান বেশি দেখিয়েছে এন্দরিক, ‘এটা এমন এক ক্লাব, যেখানে ব্রাজিলের অনেক খেলোয়াড় খেলেছেন—নেইমার, রোনালদো, রিভালদো, রোমারিও এবং রোনালদিনিও। তাঁরা আমাদের মতো তরুণদের অনুপ্রেরণা। ব্রাজিলের সব ছেলে যারা বাইরে খেলতে চায়, তারা নেইমারের কারণেই বার্সেলোনার কথা ভাবে। যদি কখনো ব্রাজিল ছাড়ার সময় হয়, বার্সেলোনাও একটা সম্ভাবনা।’

দুই ক্লাবের আগ্রহকেই আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে যদি রিয়াল-বার্সার মধ্যে তার জন্য ‘যুদ্ধ’ লাগিয়ে দেওয়া যায়, তাতে তো এন্দরিকেরই লাভ! যুদ্ধে জিততে নিশ্চয়ই এন্দরিকের কাছে ‘আমাদের ক্লাবে এলে ওদের চেয়ে এটা-ওটা বাড়তি পাবে’ ফিরিস্তি নিয়ে হাজির হবে রিয়াল আর বার্সা!