রোনালদোর এক কাণ্ডে ৩৩ হাজার কোটি খোয়াল কোকাকোলা

কোকের বোতল দুটি একটু দূরেই সরিয়ে রেখেছিলেন রোনালদো।ছবি: এএফপি

কী বুঝে কাজটা করেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, এখনো বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু গতকাল রাতে সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে বড় এক ভূমিকম্পের সৃষ্টি করেছেন পর্তুগালের অধিনায়ক। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এসে কথা শুরুর আগেই টেবিল থেকে কোমল পানীয়র বোতলগুলো সরিয়ে রাখেন। ঘটনাক্রমে টেবিলে থাকা বোতলগুলো উয়েফার খুব বড় এক স্পনসর কোকাকোলার ছিল।

স্বাস্থ্যসচেতন রোনালদো কোমল পানীয় ভুলে পানি খেতে বলেছেন সবাইকে। কিন্তু টেবিল থেকে সরিয়ে তো দিয়েছেন কোকাকোলাকে। আর সে কারণেই শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে অনেক। মাত্র আধঘণ্টার মধ্যে কোকাকোলার ব্র্যান্ড মূল্য ৪০০ কোটি ডলার কমে গেছে। অর্থাৎ কোকাকোলার ৩৩ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা খসিয়ে দিয়েছে রোনালদোর এক কাণ্ড।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারীসংখ্যায় রোনালদোর ধারেকাছে নেই কেউ। ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম মিলিয়ে ৫৩ কোটি মানুষ তাঁকে অনুসরণ করেন। এর মধ্যে ইনস্টাগ্রামেই অনুসারী বেশি তাঁর। ইনস্টাগ্রামে ২৯ কোটি ৮০ লাখ ব্যবহারকারী রোনালদোর প্রতিটি নতুন পোস্টের অপেক্ষায় থাকেন। আর ইনস্টাগ্রামের অনুসারীসংখ্যা রোনালদোর জন্য অনেক বড় আয়ের উৎস। ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে ইনস্টাগ্রামে পণ্যের দূতিয়ালি করার জন্য প্রতি পোস্ট বাবদ ৯ লাখ ৭৫ হাজার ডলার আয় করতে পারেন রোনালদো।

২০১৯ সালে নাকি বছরে ইনস্টাগ্রাম থেকে তাঁর আয় ৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার ছিল। তখন রোনালদোর অনুসারী ছিল ১৭ কোটি ৭০ লাখের মতো। এখন আরও ১২ কোটি অনুসারী বেড়েছে। ফলে পণ্য দূতিয়ালির বাজারে রোনালদো অনেক বড় ভূমিকা রাখেন।

গতকাল রোনালদো সংবাদ সম্মেলনে এসেই সামনে রাখা দুটি কোকাকোলার বোতল সরিয়ে পানির বোতল টেনে নিয়ে বলেছেন, ‘পানি খান। কোকাকোলা... (না)।’ তখন মনে হয়েছিল কোকাকোলার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী পেপসির হয়ে কোনো দূতিয়ালি করছেন বোধ হয়। সে কারণেই হয়তো এভাবে কোকাকোলার নেতিবাচক বিপণন করছেন। কোকাকোলা ইউরোর অফিশিয়াল স্পনসর। স্বাভাবিকভাবেই সংবাদ সম্মেলন টেবিলে নিজেদের কোমল পানীয়র বোতল রেখেছে তারা। চ্যাম্পিয়নস লিগের সংবাদ সম্মেলনে যেমন একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পানীয় থাকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনার পর কোকাকোলার সঙ্গে পেপসিও আলোচিতের (ট্রেন্ডিং) তালিকায় চলে এসেছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত পেপসির সঙ্গে রোনালদোর কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে রোনালদোর এই কাণ্ডে সর্বনাশ এমনিতেই হয়ে গেছে কোকাকোলার। গতকাল ইউরোপের স্টক মার্কেট খোলার সময় কোকাকোলার শেয়ারের দর ছিল ৫৬.১০ ডলার। আধঘণ্টা পর পর্তুগালের ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। আর বুদাপেস্টে পুসকাস স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে শেয়ারে দর ৫৫.২২ ডলারে নেমে আসে।

এভাবেই কোকাকোলার দর কমিয়ে দিয়েছিলেন রোনালদো।
ছবি: টুইটার

এর মানে শেয়ারবাজারে এক লাফে ১.৬ শতাংশ দাম হারিয়েছে কোকাকোলা। যার মানে প্রতিষ্ঠানের মূল্য ২৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার থেকে এক লাফে ২৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার হয়ে গেছে!

স্বাস্থ্য সচেতন রোনালদো অবশ্য এর আগেও কোকাকোলার বিপক্ষে কথা বলেছিলেন। সেটা একটু অন্যভাবে। নিজের ছেলেকে কীভাবে শাসন করেন, সে প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে কড়া শাসনে রাখি। মাঝেমধ্যে সে কোক বা ফান্টা খায়, চিপসও খায়। সে জানে আমি এটা পছন্দ করি না।’

৩৬ বছরেও তরুণদের মতো শরীরী গঠন ধরে রাখতে কঠোর পরিশ্রম করেন রোনালদো। আর সে জন্য অতিথিদেরও ভুগতে হয় তাঁর বাসায়। এ নিয়ে প্যাট্রিক এভরা একবার বলেছিলেন, ‘তার বাসায় গিয়েছিলাম ক্ষুধা নিয়ে। কিন্তু খাবার টেবিলে দেখলাম শুধু একটা সালাদ, মুরগির বুকের মাংস আর পানি। কোনো পানীয় নেই!’

এত দিন তবু কাছের লোকজন সহ্য করেছেন রোনালদোর এমন আচরণ। কোকাকোলার মতো ব্র্যান্ড কি মেনে নেবে সেটা?