রোনালদোর চোখে মেসি ‘শত্রু’ নন

ম্যাচের আগে এভাবেই সৌহার্দ্য দেখিয়েছেন দুজন দুজনকে।ছবি : এএফপি

যতবার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো গোলের উল্লাসে মেতেছেন, ক্যামেরার চোখ এক-দুই সেকেন্ড পরই খুঁজে নিয়েছে লিওনেল মেসিকে। দর্শকশূন্য গ্যালারিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী জুভেন্টাস ফরোয়ার্ডের ‘সিউউউ’ উদ্‌যাপন যখন গমগমে, মেসির মুখ থমথমে। মাটিতে দৃষ্টি, সে দৃষ্টিতে রাজ্যের হতাশা।

লিওনেল মেসি বনাম ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো—গত ১০ থেকে ১২ বছর বিশ্ব ফুটবল মাতিয়ে রাখা দ্বৈরথটা মাঠে গতকালই কি শেষবার দেখা হয়ে গেল? হয়তো! তাতে রোনালদোই হেসেছেন শেষ হাসি, পেনাল্টি থেকে পর্তুগিজ তারকার জোড়া গোলে মেসির বার্সেলোনার মাঠে ৩-০ গোলে জিতে গেছে জুভেন্টাস।

জয়-পরাজয়ের হিসাব এক পাশে রাখলে, মেসি-রোনালদো দ্বৈরথের আকর্ষণই তো ছিল অন্য। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বৈরথ যেভাবে ফুটবল ইতিহাস রাঙিয়েছে, আর কোনো দ্বৈরথ সেভাবে তা পেরেছে? তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বা শত্রু শব্দগুলোয় আপত্তি আছে রোনালদোর। ম্যাচ শেষে সরাসরি তা জানিয়েও দিয়েছেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড।

দুজন কখনোই নিজেদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দাবি করেননি, সে শব্দ ইউরোপের সংবাদমাধ্যম আর দুজনকে বিশ্বের সেরা, এমনকি ইতিহাসের সেরা দাবি করা তাঁদের সমর্থকদের উদ্ভাবন। তবে শুরুর দিকে মেসি-রোনালদোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজটা মাঠে টের পাওয়া গেছে। মেসি তো বার্সেলোনায়ই ছিলেন সব সময়, ২০০৯ সালে রোনালদো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার পর ঝাঁজটা আরও বেড়েছে। দুজনের একে অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার লড়াই অনুচ্চারিত হলেও ছিল প্রকাশিত।

সেটির প্রভাব কি তাঁদের সম্পর্কেও পড়েনি? কখনো একে অন্যকে নিয়ে নেতিবাচক কিছু না বললেও সম্পর্কটা বন্ধুসুলভ ছিল—এমনটা মেসি-রোনালদোর ক্ষেত্রে কয়েক বছর আগেও বলা যেত না। কিন্তু গত বছর দু-তিনেকে সম্পর্কটায় উষ্ণতা এসেছে। মেসি-রোনালদোর একে অন্যের প্রতি সম্মান তো সব সময়ই ছিল, বন্ধুসুলভ ভাবটা এসেছে গত কয়েক বছরে।

রোনালদো ২০১৮ সালে রিয়াল ছেড়ে জুভেন্টাসে যাওয়ার পর মেসি বলেছিলেন, স্প্যানিশ লিগে তিনি রোনালদোকে মিস করেন। গত বছর উয়েফার বর্ষসেরার অনুষ্ঠানে মেসি আর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুজনকে কীভাবে আরও ভালো করতে উদ্বুদ্ধ করেছে, সেরা হতে প্রেরণা দিয়েছে, সেটি জানিয়ে রোনালদো বলেছিলেন, সুযোগ পেলে মেসির সঙ্গে ডিনারে বসতে চান।

ক্যাম্প ন্যুতে কাল ম্যাচের শুরুতেও সেই সৌহার্দ্যের খোঁজ মিলেছে। ম্যাচের আগে রোনালদো-মেসি একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেন আলিঙ্গনে। ম্যাচের পরও সেই সৌহার্দ্যের সুর রোনালদোর কণ্ঠে, স্প্যানিশ টিভি চ্যানেল মুভিস্টারে বললেন, ‘মেসির সঙ্গে আমার সম্পর্ক সব সময়ই আন্তরিক। ওকে আমি শত্রুর চোখে দেখি না। আমরা দুজনই সব সময় নিজেদের দলের সেরাটা চেয়েছি।’

ম্যাচের মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিন্তু ষোলো আনাই ছিল।
ছবি : রয়টার্স

রিয়াল ছেড়ে জুভেন্টাসে যাওয়ার পর স্পেনে এর আগেও ফিরেছেন রোনালদো। আতলেতিকো মাদ্রিদের মাঠে খেলেছেন, খেলেছেন ভ্যালেন্সিয়ার মাঠেও। ক্যাম্প ন্যুতে ফেরা এই প্রথম। ‘স্পেনে ফেরা, কাতালুনিয়ায় ফেরার অনুভূতিটা সব সময়ই দারুণ। ক্যাম্প ন্যুতে খেলা সব সময়ই কঠিন, আমার মুখোমুখি কঠিনতম দলগুলোর একটি এটি’—বার্সার মাঠে ফেরার অনুভূতি রোনালদোর।

তবে কাল যেভাবে জিতেছে জুভেন্টাস, সেটি মৌসুমের বাকি পথের জন্য প্রেরণা জোগায় রোনালদোকে, ‘আজ আমরা চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে গড়া একটা দলের মতো খেলেছি। শক্তিশালী ছিলাম, একতাবদ্ধ একটা পরিবারের মতো লড়েছি। এভাবে খেলে যেতে পারলে এই মৌসুমে কোনো কিছু নিয়েই আর ভয় নেই।’

পালাবদলের মধ্য দিয়ে যাওয়া বার্সা বেশ নড়বড়ে এখন, এটা ঠিক। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগে এবার গ্রুপের আগের পাঁচ ম্যাচেই জিতেছে। এর মধ্যে গত মাসে জুভেন্টাসের মাঠে গিয়ে ২-০ গোলে জিতে এসেছে, যদিও করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সেই ম্যাচে ছিলেন না রোনালদো। কাল রোনালদোয় উজ্জ্বল জুভে ৩-০ গোলে জিতে গ্রুপসেরা হয়েই শেষ ষোলোতে গেছে। বার্সা গ্রুপে দ্বিতীয় হওয়ায় এখন শঙ্কায়, শেষ ষোলোতে পড়তে হতে পারে লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি, বায়ার্ন মিউনিখ, চেলসি কিংবা বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের মতো দলের বিপক্ষে।

তবে বার্সার কী হবে, সেটা বার্সার চিন্তা, রোনালদো নিজের দলকে গ্রুপসেরা করতে পেরেই তৃপ্ত, ‘ক্যাম্প ন্যুতে এসে আপনি যদি তিন গোল করেন, সে ক্ষেত্রে আপনার দলের গ্রুপে সেরা হওয়াই প্রাপ্য। বার্সা এই মুহূর্তে হয়তো ভালো খেলছে না, তবে এই জয়টা আমাদের মানসিকভাবে আরও শক্তি জোগাবে।’