রোনালদোর তিনে চার, ভিএআর-নাটক শেষে রুদ্ধশ্বাস জয় ইউনাইটেডের
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। গোল!
সমার্থক শব্দই তো! ক্যারিয়ারজুড়ে যা করে এসেছেন, এই ৩৬ বছর বয়সে পুরোনো ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরেও তা-ই করে যাচ্ছেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। আজও ব্যতিক্রম হলো না।
ইউনাইটেডে ফেরার পর এ নিয়ে তৃতীয় ম্যাচে নামলেন, আগের দুই ম্যাচের মতো আজও গোল পেলেন রোনালদো। ৩ ম্যাচে তাঁর গোল হলো ৪টি। আর রোনালদোর ‘তিনে তিন’-এর ম্যাচে আজ প্রিমিয়ার লিগে ওয়েস্ট হামের মাঠে প্রথমে পিছিয়ে পড়েও ম্যান ইউনাইটেড জিতেছে ২-১ গোলে।
রোনালদোর গোলে সমতায় ফেরা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে শেষ পর্যন্ত জয়সূচক হয়ে থাকা গোলটি করেছেন জেসি লিনগার্ড, যিনি কিনা গত মৌসুমে ওয়েস্ট হামে ধারে খেলে বেশ আলো ছড়িয়েছেন।
তবে ম্যান ইউনাইটেডের জয়টা মোটেও যদি সহজভাবে আসে! শেষ দিকে রীতিমতো রুদ্ধশ্বাস নাটক হয়েছে!
ম্যাচে তিনবার রোনালদোর পেনাল্টির দাবি বাতিল হয়েছে। অন্যদিকে যোগ করা সময়ে বক্সে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড লেফটব্যাক লুক শ’র হাতে বল লাগায় পেনাল্টি পায় ওয়েস্ট হাম। ৮৯ মিনিটে লিনগার্ডের গোলে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়া ম্যান ইউনাইটেড তখন একদিকে ক্ষোভে ফুঁসছে, অন্যদিকে প্রমাদও গুনছে!
ক্ষোভ রেফারির ওপর, ম্যান ইউনাইটেডের তিন পেনাল্টির দাবি বাতিল করে ওয়েস্ট হামকে পেনাল্টি দিয়েছে। আর প্রমাদ গোনার কারণ তো সহজে অনুমেয়, পেনাল্টি থেকে গোল হলেই যে ম্যাচে সমতা ফেরাবে ওয়েস্ট হাম, সেখান থেকে ফেরার মতো সময়ও আর তেমন থাকবে না ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হাতে।
এদিকে ওয়েস্ট হামের বর্তমান ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক কোচ ডেভিড ময়েস করলেন অবিশ্বাস্য এক কাণ্ড। ওই পেনাল্টি নেওয়ার জন্যই বেঞ্চ থেকে নামিয়ে দিলেন ক্লাবের নিয়মিত অধিনায়ক মার্ক নোবলকে। কিন্তু চালটা বুমেরাং হয়ে ফেরত এল! নোবলের পেনাল্টি নিজের বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে রুখে দেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড গোলকিপার দাভিদ দে হেয়া।
এর আগে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে দারুণ জমে ওঠা ম্যাচটাতে ৩০ মিনিটে সাইদ বেনরাহমার গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ওয়েস্ট হাম। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের যে একজন রোনালদো আছে! পিছিয়ে যাওয়ার পর থেকেই আরও তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ শুরু করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, আর তাদের ত্রাতা হয়ে দেখা দিতে রোনালদোর লাগল ৫ মিনিট।
ওয়েস্ট হাম বক্সের সামনে ব্রুনো ফার্নান্দেজের দারুণ পাস ধরে রোনালদো যে শট নেন, সেটি প্রথমে ওয়েস্ট হাম গোলকিপার ফাবিয়ানস্কি ফিরিয়ে দেন, কিন্তু বল আবার ফেরত আসার পর সেখানে রোনালদো ছাড়া আর কেউই ছিলেন না। গোলশিকারি বটে! তাঁর মতো করে এভাবে অনুমান যে কেউ করতে পারেননি।
অনুমান করতে পারা, বল ফেরত এলে সেখানে থাকাই গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল, সেটি রোনালদো ঠিকঠাক মতো করেছেন। এরপর বাকি কাজ তো চোখ বন্ধ করেও রোনালদো করতে পারেন। আলতো ছোঁয়ায় বল জড়িয়েছেন জালে।
প্রথমার্ধে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আক্রমণের ফাঁকে ফাঁকে ওয়েস্ট হামের দারুণ পাল্টা আক্রমণ ম্যাচটাকে আকর্ষণীয় বানিয়ে রেখেছে, দ্বিতীয়ার্ধে আকর্ষণের মাত্রা বেড়ে গেল কয়েক গুণ। কিছুক্ষণ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আক্রমণে দাপট দেখায়, তো কিছুক্ষণ ওয়েস্ট হাম। তবে সবকিছুর কেন্দ্রে রোনালদোই ছিলেন শুরুতে!
৪৭ মিনিটে রোনালদোর শট ওয়েস্ট হাম গোলকিপারের পায়ে লেগে বাইরে গেল, সেখান থেকে পাওয়া কর্নারে রোনালদোর বাঁ পায়ের শট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেরই ডিফেন্ডার হ্যারি ম্যাগুয়ারের গায়ে লেগে আটকে গেল।
চার মিনিট পর ওয়েস্ট হামের সুযোগ। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বক্সে জ্যারড বাওয়েনের ক্রসে ব্যাকহিল করেছিলেন ওয়েস্ট হামের স্প্যানিশ প্লেমেকার পাবলো ফোরনালস, কিন্তু বল চলে গেল পোস্টের বাইরে। তার এক মিনিট পর আবার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পল পগবার শট চলে গেল বার উঁচিয়ে। পাগলাটে ম্যাচ যেন!
এরপর হলো রোনালদোর একের পর এক পেনাল্টির আবেদন আর রেফারির সেসব ফিরিয়ে দেওয়ার নাটক! ৭৭ মিনিটে রোনালদোকে বক্সে ফাউল করেন ওয়েস্ট হাম রাইটব্যাক ভ্লাদিমির সোফাল, কিন্তু রেফারি তাতে কেন পেনাল্টি দিলেন না কিংবা ভিএআরও কেন রেফারির সিদ্ধান্ত বদলাল না, সেটা প্রশ্নবিদ্ধ।
৮৫ মিনিটে ওয়েস্ট হাম লেফটব্যাক ক্রেসওয়েল আর যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে ওয়েস্ট হাম সেন্টারব্যাক কুর্ত জুমার ট্যাকলেও বক্সে পড়ে গিয়েছিলেন রোনালদো। কিন্তু সে দুবারে একদিকে যদি ফাউলের চেয়ে রোনালদোর পেনাল্টি আদায়ের চেষ্টা বেশি চোখে লেগে থাকে, তো অন্যদিকে যুক্তি আসতে পারে, ‘এমন পরিস্থিতিতে অনেক রেফারিই পেনাল্টি দেন’ কিন্তু এই ম্যাচের রেফারি মার্টিন অ্যাটকিনসন দিলেন না।
পেনাল্টি নাটকের মধ্যেই অবশ্য আলো কেড়ে নিয়েছিলেন লিনগার্ড। গত মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়নস লিগে ইয়াং বয়েজের মাঠে ম্যান ইউনাইটেডের ২-১ গোলে হারের দায়টা লিনগার্ডেরই ছিল, তাঁর অবিশ্বাস্য ব্যাকপাস ধরে যোগ করা সময়ে নিজেদের দ্বিতীয় গোল করে ইয়াং বয়েজ।
সে দায় মোচনের প্রতিজ্ঞা হয়তো ছিল লিনগার্ডের। পাশাপাশি গত মৌসুমে ধারে খেলতে এসে যে মাঠে আলো ছড়িয়েছেন, সে মাঠে ফেরায় আত্মবিশ্বাসও ছিল। দুইয়ে মিলেই হয়তো অমন দারুণ গোল!
নেমানিয়া মাতিচের পাস থেকে ওয়েস্ট হামের বক্সের বাঁ দিকে বল পেলেন ১৬ মিনিট আগে বদলি নামা লিনগার্ড। দুই স্পর্শে সামনে থাকা ডিফেন্ডারকে বোকা বানালেন, তারপর ডান পায়ের দারুণ শটে বল জড়িয়ে দিলেন জালে।
কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আনন্দটা ফিকে হয়ে যাওয়ার জোগাড় যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বক্সে ইয়ারমোলেঙ্কোর ক্রস ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেরই ডিফেন্ডার লুক শর হাতে লাগে। কিন্তু এ বেলায় পরিষ্কার পেনাল্টি দিতে বাধেনি রেফারির। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জয় হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কাটা অবশ্য শেষ পর্যন্ত আর সত্যি হলো না দে হেয়া দারুণভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে পেনাল্টি বাঁচানোয়।
এদিক দিনের আরেক ম্যাচে লন্ডন ডার্বিতে চেলসি ৩-০ গোলে হারিয়েছে টটেনহাম হটস্পারকে। গোল করেছেন থিয়াগো সিলভা, এনগোলো কান্তে ও আন্তোনিও রুডিগার।