লাল কার্ড, চোট, আগুনে গোল... ঘটনাবহুল ড্র বার্সার

বার্সার হয়ে নিজের প্রথম গোল পেয়েছেন মেম্ফিসছবি : রয়টার্স

বার্সেলোনায় আসার পর থেকেই রোনাল্ড কোমান কেন ডাচ স্ট্রাইকার মেম্ফিস ডিপাইকে দলে টানার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলেন, ডিপাই সেটা প্রমাণ করে চলেছেন।

প্রতি ম্যাচেই দলকে টানছেন তিনি। রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে লিগের প্রথম ম্যাচে দলের চার গোলের দুটিই হয়েছে তাঁর সহায়তায়। দ্বিতীয় ম্যাচে এসে এবার নিজেই শুরু করলেন গোল করা। তাঁর গোলেই অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের মাঠ সান মামেস থেকে এক পয়েন্ট নিয়ে ফিরেছে বার্সেলোনা। অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে ক্যাম্প ন্যুয়ের দলটি। ৫০ মিনিটে বিলবাওয়েরর স্প্যানিশ সেন্টারব্যাক ইনিগো মার্তিনেজের গোল ৭৫ মিনিটে শোধ করেন মেম্ফিস।

স্প্যানিশ লিগের তিন প্রাচীনতম ক্লাবের মধ্যে দুই ক্লাব মুখোমুখি হয়েছিল গতকাল। ৪-৪-২ ছকে নেমেছিল অ্যাথলেটিক বিলবাও, ৪-৩-৩ ছকে বার্সেলোনা।

ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার নেতোর সামনে দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার জেরার্দ পিকে ও এরিক গার্সিয়া, ডানদিকে সের্হিনিও দেস্ত ও বাঁদিকে জর্দি আলবা। মাঝমাঠে সের্হিও বুসকেতসকে রেখে দুপাশে খেলেছেন পেদ্রি ও ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং। সামনে মেম্ফিসকে রেখে দুপাশে আতোয়ান গ্রিজমান ও মার্টিন ব্র্যাথওয়েট।

শুরুতে বার্সেলোনাকে মোটামুটি চেপে ধরেছিল বিলবাও। যদিও ম্যাচের প্রথম ভালো সুযোগটি পেয়েছে বার্সেলোনাই। সাত মিনিটে আক্রমণভাগের ডানপ্রান্ত থেকে মেম্ফিসের পাস যেখানে ঠিকঠাক ডান পা দিয়ে প্লেস করতে পারলেই গোল হয়ে যেত, ব্রাথওয়াইট সে শট মারলেন আকাশে।

স্প্যানিশ স্ট্রাইকার ইনাকি উইলিয়ামসকে কেন বিশ্বের অন্যতম দ্রুতগতির ফরোয়ার্ড মানা হয় তা এ ম্যাচে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন পিকে-দেস্ত-গার্সিয়ারা। ১০ মিনিটে এই স্প্যানিশ স্ট্রাইকারকে কোনোভাবে আটকে দলকে গোল খাওয়া থেকে বাঁচান গার্সিয়া। উইলিয়ামসের শট পোস্টের পাশ দিয়ে চলে যায়।

একই মিনিটে একটুর জন্য আবারও রক্ষা পায় বার্সেলোনা। স্প্যানিশ স্ট্রাইকার ওইহান সানচেতের ডান পায়ের জোরালো শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে, বার্সা গোলকিপার নেতো নড়ারও সময় পাননি। ১৮ মিনিটে উইলিয়ামস আবারও একটা সহজ সুযোগ পেয়ে যান। সানচেতের পাস খুঁজে পায় মাঝখানে থাকা উইলিয়ামসকে, হাই লাইনে ডিফেন্সে থাকার কারণে বার্সেলোনার একজন ডিফেন্ডারও উইলিয়ামসকে ঠিকঠাক মার্ক করতে পারেননি।

মাঝমাঠ থেকে দৌড়ে এসে স্লাইড ট্যাকল করে দলকে বিপদমুক্ত করেন ডাচ মিডফিল্ডার ডি ইয়ং। ২৩ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে দৌড়ে এসে উইলিয়ামস পাস পাঠান ডি বক্সে থাকা স্প্যানিশ উইঙ্গার অ্যালেক্স বেরেঙ্গেরের দিকে। বাঁ পায়ে ট্যাপ ইন করতে গিয়েও পারেননি বেরেঙ্গের। বার্সাকে এ যাত্রায় রক্ষা করেন জর্দি আলবা।

২৭ মিনিটে বেরেঙ্গেরের মতো বলতে গেলে প্রায় একই জায়গা থেকে উইলিয়ামসের ক্রসকে গোলে রূপ দিতে ব্যর্থ হন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার উনাই ভেনসেদোর। ৩১ মিনিটে উইলিয়ামসের গতির সঙ্গে না পেরে উঠেই কি না, চোট পেয়ে বসেন পিকে। তাঁর জায়গায় মাঠে নামেন উরুগুইয়ান সেন্টারব্যাক রোনালদ আরাউহো। ৩২ মিনিটে এবার সতীর্থদের মতো নিজেও গোল মিসের মহড়ায় যোগ দেন উইলিয়ামস।

গোলের পর বিলবাওর উল্লাস
ছবি : রয়টার্স

মুনিয়াইনের ক্রস ঠিকঠাক হেড করতে পারেননি উইলিয়ামস। ৩৫ মিনিটেও একই ব্যাপার, এবার থ্রু বল পাঠান বেরেঙ্গের, শট বাইরে মারেন উইলিয়ামস। প্রথমার্ধের শেষ দিকে দুর্দান্ত এক বাইসাইকেল কিকে দলকে এগিয়ে দিয়েছেন আরাউহো, এমনটা মনে হলেও পরে দেখা গেল, গোলের আগে ব্র্যাথওয়েট ফাউল করেছেন। ফলে বাতিল হয় গোল। যদিও এই বাতিল হওয়া গোল নিয়ে বিতর্ক আছে।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আবারও বার্সাকে চেপে ধরে বিলবাও। বেরেঙ্গেরের এক শট আটকাতে গিয়ে ভজকট পাকিয়ে ফেলেন নেতো ও গার্সিয়া, গোললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করে বার্সাকে উদ্ধার করেন আরাউহো। দুর্দান্ত পজিশনিংয়ের কারণে ৪৮ মিনিটে ব্র্যাথওয়েটের শট আটকে দিতে পারেন বিলবাও গোলকিপার হুলেন আগিরেসাবালা।

৫০ মিনিটে অবশেষে গোলের দেখা পায় বিলবাও। তবে উইলিয়ামস বা সানচেত নন, মুনিয়াইনের কর্নারে হেড করে দলকে এগিয়ে দেন সেন্টারব্যাক ইনিগো মার্তিনেজ। ৭৫ মিনিটে রাইটব্যাক সের্হি রবের্তোর পাস থেকে বাঁ পায়ের জোরালো শটে বার্সাকে সমতায় ফেরান মেম্ফিস। শটে জোর এতই বেশি ছিল, আগিরেসাবালা আটকাতে গিয়েও পারেননি।


পুরো ম্যাচেই বার্সা ডিফেন্ডারদের ভুগিয়েছেন উইলিয়ামস। ম্যাচের একদম শেষ দিকে এসে ওই উইলিয়ামসকেই বাজেভাবে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেছেন গার্সিয়া। দুদল পরে চেষ্টা করেও আর গোল পায়নি। শেষমেশ ওই এক পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বার্সেলোনা। দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে আপাতত লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেই আছে কাতালানরা।