লিগের ‘বালিশে’ অরুচি রিয়াল–বার্সার

লিগের ভবিষ্যৎ এখন সুয়ারেজদের হাতে।ছবি : রয়টার্স

মনোরঞ্জনের জন্য ঘরে বসে পরিবারের অন্যান্য সদস্য বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যেসব খেলায় অংশ নেওয়া যায়, সেগুলোর মধ্যে ‘পিলো পাসিং গেম’ বেশ জনপ্রিয়।

খেলার নিয়মটা একদম সহজ। পাশাপাশি গোল হয়ে বসবেন সবাই, একজনের হাতে একটা বালিশ থাকবে। গান চালু করার সঙ্গে সঙ্গে যার হাতে বালিশ থাকবে তিনি যত তাড়তাড়ি সম্ভব সেটাকে পাশের জনের হাতে চালান করবেন। এভাবে প্রত্যেকে নিজের হাতে বালিশ না রেখে পাশের জনকে বালিশ দেবেন। বালিশে যেন চরম অরুচি সবার! এই পর্যায়ে হুট করে খেলার মডারেটর গান বন্ধ করে দেবেন। বন্ধ করার পর যার হাতে বালিশ থাকবে, তিনি খেলা থেকে বিদায় নেবেন। এভাবে একদম শেষ পর্যন্ত যিনি বালিশ এড়িয়ে চলতে পারবেন, তিনিই জিতবেন।

স্প্যানিশ লা লিগার বর্তমানে যা অবস্থা, তা দেখলে ওই ‘পিলো পাসিং গেম’–এর কথা মনে পড়ে যেতে বাধ্য। যেখানে লিগের শীর্ষস্থান হলো সেই ‘বালিশ’, যাকে যেন কেউ ধরে রাখতে চায় না। এভাবে নিজের কাছে বালিশ না রেখে কয়েক সপ্তাহ ধরেই একে অন্যের হাতে চালান করে দিচ্ছে আতলেতিকো, বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ। উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে চতুর্থ স্থানে থাকা সেভিয়াও। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ চার দলের মধ্যের ব্যবধান এখন মাত্র তিন পয়েন্ট।

গত রাতে মেসিদের এই সুখ সয়নি, পরে ঠিকই হেরেছে গ্রানাদার কাছে।
ছবি: বার্সেলোনা টুইটার

গত রাতে গ্রানাদার বিপক্ষে জিততে পারলে হেসেখেলে লিগের শীর্ষে উঠে যেতে পারত বার্সেলোনা। কিন্তু এভাবে জিতে গেলে লিগের চিত্রনাট্যে কি আর রোমাঞ্চ আসে? তাই যেন গ্রানাদার বিপক্ষে আচমকা হেরে বসল তারা। কয়েক দিন আগে অ্যাথলেটিক বিলবাওর বিপক্ষে হেরে ঠিক এভাবেই নিজেদের লিগ জয়ের পথ নিজেরা কঠিন করে ফেলেছিল আতলেতিকো। বেতিস আর হেতাফের বিপক্ষে ড্র করে রিয়ালও জানিয়ে দিয়েছিল হেসেখেলে শিরোপা জেতার ক্ষেত্রে নিজেদের সবচেয়ে বড় দুই প্রতিপক্ষের মতো ‘আপত্তি’ রয়েছে তাদেরও!

তবে গ্রানাদার বিপক্ষে বার্সার হারের পর অন্তত একটা বিষয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে, এখন লিগ যে জিতবে, সেটা পুরোপুরি নির্ভর করছে আতলেতিকোর ফর্মের ওপর। সবাই ৩৩ ম্যাচ করে খেলে ফেলেছে। ৭৩ পয়েন্ট নিয়ে আতলেতিকো আছে সবার ওপরে, ৭১ পয়েন্ট নিয়ে তাদের ঠিক পেছনেই রিয়াল আর বার্সা। অন্যের ফর্মের দিকে তাকিয়ে না থেকে হাতে থাকা পাঁচ ম্যাচের প্রতিটায় যদি আতলেতিকো জেতে, তাহলে শিরোপাও তাদের ঘরেই যাবে। রিয়াল বা বার্সার ঘরে নয়। সিমিওনের এখন একটাই লক্ষ্য, হাতে থাকা এলচে, বার্সেলোনা, ওসাসুনা, রিয়াল ভায়াদোলিদ ও রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে পূর্ণ ১৫ পয়েন্ট নিয়ে ঘরে ফেরা।

লিগের দৌড়ে আছে রিয়ালও।
ছবি: রয়টার্স

এখন আগের লাইনটা আরেকবার পড়ুন। আতলেতিকোর পরবর্তী পাঁচ প্রতিপক্ষের নামগুলো আরেকবার পড়ুন। বার্সেলোনাকে দেখেছেন নিশ্চয়ই! হ্যাঁ, বার্সেলোনাই বটে। আগামী আট তারিখে বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া আটটায় ন্যু ক্যাম্পে আতলেতিকো খেলতে আসবে বার্সার বিপক্ষে। বলা বাহুল্য, সে ম্যাচে যে জিতবে, সে-ই লিগ শিরোপা পেয়ে যাবে, এটা বলাই যায়। শুধু তা–ই নয়, এর ঠিক পরের দিনই পরস্পরের মুখোমুখি হবে শীর্ষ চারের বাকি দুই দল রিয়াল ও সেভিয়া। সে ম্যাচের ফলের ওপরেও লিগের অনেক কিছু নির্ভর করবে।

মৌসুমের শুরুতে লুইস সুয়ারেজ যখন প্রিয় বার্সেলোনা ছেড়ে, আত্মার বন্ধুকে ফেলে অনেকটা নিমরাজি হয়ে আতলেতিকোতে পাড়ি জমিয়েছিলেন, তিনি কি ভেবেছিলেন এমন কিছু হবে? তিনি কি ভেবেছিলেন প্রিয় বন্ধুর আরেকটা লিগ শিরোপা জেতার পথে নিয়ন্তা হয়ে দাঁড়াবেন তিনি ও তাঁর নতুন দল?

কোপা দেল রে এর পর এখন এই এক লিগ নিয়েই আশা দেখছেন মেসিরা
ছবি : বার্সেলোনা

অথচ সেটাই হচ্ছে। লা লিগায় এখন যা অবস্থা, সে অবস্থায় বার্সেলোনা লিগ শিরোপা জিততে পারে কি না, সেটা এখন সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে সুয়ারেজদের ফর্মের ওপর। শুধু কি বার্সেলোনা? রিয়াল মাদ্রিদ বা সেভিয়াও কি নয়? সবাই এখন চাতক পাখির মতো দিয়েগো সিমিওনের দলের দিকে চেয়ে আছে, যদি আরেকটু পা হড়কায়!