লিভারপুলের আক্রমণেও করোনার সংক্রমণ

করোনায় আক্রান্ত সাদিও মানে (বাঁয়ে)।ছবি: রয়টার্স

লিভারপুল শহরে করোনাভাইরাস যেন ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। ইংল্যান্ডের যে অঞ্চলগুলোতে এই মাসের শুরু থেকে করোনা নিয়ন্ত্রণে আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে, তার মধ্যে লিভারপুল একটি। লিভারপুল ফুটবল ক্লাবেও ঢুকে পড়েছে করোনা। এ নিয়ে চার দিনের মধ্যে লিভারপুলের দুই খেলোয়াড় আক্রান্ত হলেন করোনায়।  

কদিন আগে মিডফিল্ডার থিয়াগো আলকানতারা আক্রান্ত হয়েছিলেন এই ভাইরাসে, এবার করোনা আক্রমণ করল লিভারপুলের আক্রমণভাগেই। ক্লাবের ২৮ বছর বয়সী সেনেগালিজ ফরোয়ার্ড সাদিও মানেও করোনা পজিটিভ হয়েছেন। কাল এক বিবৃতিতে সেটি নিশ্চিত করেছে মার্সিসাইড ক্লাবটি। অ্যাস্টন ভিলার মাঠে আগামীকাল প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটিতে লিভারপুলের জার্সিতে স্বাভাবিকভাবেই মাঠে নামা হচ্ছে না মানের।

আর্সেনালের বিপক্ষে গত সোমবার গোল পেয়েছেন মানে।
ছবি: রয়টার্স

‘সাদিও মানে কোভিড-১৯ টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন। এই মুহূর্তে যথাযথ নির্দেশনা মেনে নিজেকে আইসোলেশনে রেখেছেন। গত সোমবার আর্সেনালের বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয়ের ম্যাচটিতে শুরু থেকেই খেলা ও গোল করা এই ফরোয়ার্ডের শরীরে ভাইরাসের ছোটখাট উপসর্গ আছে, তবে সব মিলিয়ে তিনি ভালোই বোধ করছেন’—কাল বিবৃতিতে লিখেছে লিভারপুল।

মানে নিজেও ইনস্টাগ্রামে করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর জানিয়ে লিখেছেন, ‘আমি (করোনাভাইরাস) টেস্টে পজিটিভ হয়েছি, তবে আমি ভালোই আছি, তেমন গুরুতর কোনো উপসর্গও নেই। আমি এখনই কোয়ারেন্টিন ও সেরে ওঠার প্রক্রিয়া শুরু করছি।’ ভক্তদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, ‘সবাই ভালো থাকুন। নিশ্চিত করুন, বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ধাক্কা ছড়িয়ে পড়ার এই মুহূর্তে নিজেকে ও কাছের মানুষকে নিরাপদ রাখতে আপনি সব নিয়ম মেনে চলছেন। আমি আগের চেয়েও ভালোভাবে ফিরে আসব। সবাই মিলে এটি (করোনার বিরুদ্ধে লড়াই) থেকে বেরিয়ে আসব আমরা।’

লিভারপুলে কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের প্রথম বড় দলবদলই ছিল মানেকে নিয়ে আসা। ২০১৬ সালের ২৮ জুন ৩৪ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ডে সাউদাম্পটন থেকে লিভারপুলে আসার পর থেকে ক্লপের কৌশলের প্রাণভোমরা হয়ে আছেন মানে। মোহামেদ সালাহ ও রবার্তো ফিরমিনোর সঙ্গে মিলে গড়ে তুলেছেন ইউরোপের অন্যতম ভয়ংকর আক্রমণত্রয়ী। গত দুই মৌসুমে লিভারপুলের চ্যাম্পিয়নস লিগ, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ও প্রিমিয়ার লিগ জয়ের পথেও তর্কসাপেক্ষে লিভারপুলের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন সেনেগালিজ ফরোয়ার্ডই।

গত সোমবার লিগে আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচটিতে খেললেও গত পরশু একই প্রতিপক্ষের সঙ্গে লিগ কাপের শেষ ষোলোর ম্যাচটিতে ছিলেন না মানে। মূল একাদশে তো নয়ই, বেঞ্চেও ছিলেন না। গোলশূন্য ম্যাচটিতে শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৪-৫ ব্যবধানে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। তা লিগ কাপ ও এফএ কাপে ক্লপ সাধারণত মূল একাদশের খেলোয়াড়দের বিশ্রামে রাখেন, সেদিন তাই মানের না খেলার পেছনে করোনাই মূল কারণ ছিল কি না, তা জানা যায়নি।

এই সপ্তাহের পর ইউরোপের লিগগুলো যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বিরতিতে। অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে আজ খেলার পর তাই লিভারপুল পরের ম্যাচটি খেলবে ১৭ অক্টোবর। নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী এভারটনের মাঠে সে ম্যাচটিতে অবশ্য মানে-থিয়াগোকে ফিরে পাওয়ার আশা করতেই পারেন লিভারপুল কোচ ক্লপ।

করোনায় এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডের যে অঞ্চলগুলো সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত, তার একটি লিভারপুল। ১ অক্টোবর থেকে এই অঞ্চলে করোনা নিয়ন্ত্রণে বাড়তি কড়াকড়ি আরোপ করার ঘোষণা দিতে গিয়ে ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসচিব ম্যাট হ্যানকক জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে লিভারপুলে প্রতি এক লাখে গড়ে ২৬৮ জন করে করোনায় আক্রান্ত।

নতুন করে আরোপিত বিধিনিষেধে সেখানে কোনো আবদ্ধ পরিবেশে এক ঘরের মানুষ অন্য ঘরের মানুষের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। খেলায় দর্শক আনা বা কোনো ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ। মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহারের আগের বিধি তো কার্যকর আছেই।