শ্রীলঙ্কার জালে ১২ গোল, ফাইনালে বাংলাদেশ

ঋতুপর্ণাদের সামনে অসহায় মনে হয়েছে শ্রীলঙ্কাকেছবি: তানভীর আহাম্মেদ

শ্রীলঙ্কার কিশোরী গোলরক্ষক এস বানদারার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না! ফ্লাডলাইটের উজ্জ্বল আলোতে বিবর্ণ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন গোলপোস্টের নিচে। অধিনায়ক কে ইমেনসা কান্নায় ভেঙে পড়লেন মাঠের মধ্যেই। কে জানত এভাবে বাংলাদেশের মেয়েরা বুলডোজার চালাবে শ্রীলঙ্কার মেয়েদের ওপর!

ফাইনালে উঠতে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল শুধুই ড্র। কিন্তু ড্র নয়, দাপুটে এক জয় নিয়েই অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছেন মারিয়া মান্দা, আঁখি খাতুনরা। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে আজ শ্রীলঙ্কাকে ১২-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

হ্যাটট্রিক করেছেন শাহেদা আক্তার
ছবি:

হ্যাটট্রিক করেছেন আফিদা খন্দকার ও শাহেদা আক্তার। ২টি করে গোল করেছেন ঋতুপর্ণা চাকমা ও আনুচিং মগিনি। ১টি করে গোল করেছেন আঁখি খাতুন, উন্নতি খাতুন। ২২ ডিসেম্বর ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত।

এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়টি পেল বাংলাদেশ দল। ফাইনালের আগে দুর্দান্ত একটা মহড়াও দিয়ে ফেললেন বাংলাদেশের মেয়েরা।

টুর্নামেন্টে সবচেয়ে দুর্বল দল শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের মুখোমুখি হওয়ার আগপর্যন্ত তিন ম্যাচে শ্রীলঙ্কা খেয়েছে ১৬ গোল। শুধু তা-ই নয়, প্রতিপক্ষের জালে কোনো গোলই করতে পারেনি। করোনার কারণে এই টুর্নামেন্টে কোনো রকমের প্রস্তুতি নিতে পারেনি শ্রীলঙ্কার মেয়েরা। মাত্র ২২ দিনের অনুশীলন শেষে ঢাকায় এসেছে শ্রীলঙ্কা। সেই দলটাকে নিয়ে যেন রীতিমতো ছেলেখেলা করল বাংলাদেশ। প্রথমার্ধে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার জালে দেয় ৪ গোল। পরের অর্ধে হয়েছে আরও ৮ গোল!

একটু পর পর গোলের আনন্দে মেতেছে বাংলাদেশ
ছবি: প্রথম আলো

একে তো প্রতিপক্ষ হিসেবে শ্রীলঙ্কা বেশ দুর্বল। তার ওপর মাত্র এক পয়েন্ট পেলেই ফাইনাল নিশ্চিত হতো বাংলাদেশের। সে কারণেই দলের সেরা পাঁচ ফুটবলারকে আজ বিশ্রামে পাঠিয়েছেন কোচ গোলাম রব্বানী। ভারতের বিপক্ষে খেলা ম্যাচের একাদশ থেকে আজ খেলেননি তহুরা খাতুন, মনিকা চাকমা, মার্জিয়া আক্তার, শামসুন্নাহার জুনিয়র ও নীলুফার ইয়াসমিন। এই পাঁচজনের বদলে গোলাম রব্বানী মাঠে নামিয়েছেন শাহেদা আক্তার, আনুচিং মারমা, স্বপ্না রানী, সোহাগী কিসকু ও আফিদা খন্দকারকে। দুই প্রান্ত দিয়ে বারবার আক্রমণে উঠে ঋতুপর্ণা ও শাহেদা। কখনো কখনো ওভারল্যাপ করে ডিফেন্ডার আঁখি খাতুনও শ্রীলঙ্কার বক্সে ঢুকেছেন।

বাংলাদেশ দল এতটাই দাপটের সঙ্গে খেলেছে যে বেশির ভাগ সময়ই বল ছিল শ্রীলঙ্কার অর্ধে। বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপনা চাকমাকে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে ম্যাচের বেশির ভাগ সময়।

জোড়া গোল করেছেন ঋতুপর্ণা চাকমা (বাঁয়ে)
ছবি: প্রথম আলো

এমন ম্যাচে চোখে লেগে থাকার মতো বেশ কয়েকটি গোল করেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। ডিফেন্ডার হয়েও আফিদা হ্যাটট্রিক করেছেন, প্রতিটি গোলই করেছেন প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে শট নিয়ে। আঁখি খাতুনও ৩০ গজ দূর থেকে শট নিয়ে গোল পেয়েছেন।

ম্যাচের ২ মিনিটে গোল উৎসবের শুরু করেন আনুচিং। শাহেদা আক্তারের শট শ্রীলঙ্কার গোলরক্ষকের হাতে লেগে বক্সের সামনে পড়লে আনুচিং করেন ১-০। ৭ মিনিটে মারিয়া মান্দার ডিফেন্স চেরা পাসে ঋতুপর্ণা বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে করেছেন ২-০। এরপর ১৬ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ৩-০ করেন শাহেদা। ৪২ মিনিটে আফিদা খন্দকারের মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো বলে আলতো চিপে ঋতুপর্ণা করেন ৪-০। ৪৭ মিনিটে আঁখি করেন পঞ্চম গোল, ৪৯ মিনিটে শাহেদা করেছেন ৬-০।

ফাইনালের আগে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিয়েছে বাংলাদেহস দল
ছবি: প্রথম আলো

এত গোল খাওয়ার পর একপর্যায়ে ৫১ মিনিটে প্রধান গোলরক্ষক থারিন্দি জানিথিয়াকে তুলে নেন শ্রীলঙ্কার কোচ শ্রীসেনা মানজুলা চামিন্দা। তাঁর জায়গায় মাঠে নামান এস বানদারাকে। কিন্তু তাতেও ম্যাচের ফল বদল হয়নি। ৫৩ মিনিটে আফিদা করেছে ৭-০।
৬৯ মিনিটে আবার গোল আফিদার (৮-০)। ৭৭ মিনিটে নবম গোলটি করেন আনুচিং। এরপর ৮৩ মিনিটে আফিদা করেন দশম গোল। ৮৫ মিনিটে উন্নতি খাতুন করেছেন ১১তম গোল। এরপর শাহেদা নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন ৮৭ মিনিটে।