সবচেয়ে বেশি চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী রিয়াল কিংবদন্তি আর নেই

রিয়াল কিংবদন্তি পাকো হেন্তো (১৯৩৩–২০২২)ছবি: রিয়াল মাদ্রিদ

কোনো রেকর্ড না হলে এমনিতে তাঁর কথা খুব কম ওঠে। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে পরশু মার্সেলো স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ের পর তাঁর প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল।

রিয়ালের হয়ে সর্বোচ্চসংখক শিরোপা জয়ের রেকর্ডে তাঁকে ছুঁয়ে ফেলেন মার্সেলো। সেই রিয়াল কিংবদন্তি পাকো হেন্তো আর নেই।

ইতিহাসের একমাত্র ফুটবলার হিসেবে ছয়বার ইউরোপিয়ান কাপজয়ী (বর্তমানে চ্যাম্পিয়নস লিগ) হেন্তোর ৮৮ বছর বয়সে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে রিয়াল মাদ্রিদ।

মাদ্রিদের ক্লাবটির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ও বোর্ড পরিচালকেরা ফ্রান্সেসকো হেন্তোর মৃত্যুতে শোকাহত। তিনি ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের সম্মানসূচক সভাপতি এবং বিশ্ব ফুটবল ও আমাদের ক্লাবের অন্যতম কিংবদন্তি।’

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফুটবল হিস্টরি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকসের (আইএফএফএইচএস) ভোটে স্পেনের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ফুটবলারের মর্যাদা পাওয়া হেন্তো ১৯৫৩ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত রিয়ালে খেলেন।

আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর সঙ্গে পাকো হেন্তো
ছবি: রিয়াল মাদ্রিদ

এই ১৮ মৌসুমে রিয়ালের হয়ে সর্বোচ্চ লিগ শিরোপা (১২), সর্বোচ্চ ইউরোপিয়ান কাপ (৬), ইউরোপিয়ান কাপে সর্বোচ্চবার ফাইনালে উপস্থিতি (৮) এবং সব মিলিয়ে রিয়ালের হয়ে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ শিরোপা (২৩) জয়ের রেকর্ড গড়েন।

প্রায় ৫০ বছর পর রিয়ালের হয়ে তাঁর সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের রেকর্ডে পরশু ভাগ বসান ব্রাজিলিয়ান লেফটব্যাক মার্সেলো।

হেন্তো নিজেও খেলেছেন মাঠের বাঁ দিকে। ফেরেঙ্ক পুসকাস, আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর পাশে বাঁ প্রান্তে উইংয়ে খেলতেন। এ পজিশনে তাঁকে সর্বকালের অন্যতম সেরাদের কাতারেও রাখেন অনেকে।

ভয়ানক গতি, দূরদর্শী ও কুশলী খেলার কারণে বাঁ প্রান্তে সব সময় আলাদা করে নজর কেড়েছেন হেন্তো। খেলা তৈরির সঙ্গে দূরপাল্লার শটেও খুব ভালো হওয়ায় হেন্তোকে পেয়ে একের মধ্যে অনেক গুণ খুঁজে পেয়েছিল স্পেন জাতীয় দল ও রিয়াল মাদ্রিদ।

ডি স্টেফানো, হেন্তো (মাঝে) ও ফেরেঙ্ক পুসকাস
ছবি: রিয়াল মাদ্রিদ

১৯৫৫ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত স্পেন দলে ৪৩ ম্যাচ খেলে ৫ গোল করেছেন হেন্তো। জাতীয় দলের হয়ে কিছু জিততে না পারলেও হেন্তোকে সবাই মনে রেখেছেন রিয়ালে সোনালি ক্যারিয়ারের জন্য। রিয়ালের হয়ে ৬০০ ম্যাচে তাঁর গোলসংখ্যা ১৮২। ফার্নান্দো হিয়েরোর সঙ্গে ক্লাবটির ইতিহাসে তিনি সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ডে যুগ্মভাগে ষষ্ঠ।
দূরন্ত গতির কারণে হেন্তোকে সবাই ডাকতেন ‘লা গালের্না দেল কান্তাব্রিকো’ (ক্যারিবিয়ান সাগরের প্রবল বাতাস) নামে।

রেসিং সান্তেন্দরের হয়ে ১৯৫২-৫২ মৌসুমে স্পেনের শীর্ষ লিগে অভিষেক হেন্তোর। এক মৌসুমে সেখানে ১৪ ম্যাচে ২ গোল করে যোগ দেন রিয়ালে। তাঁর মৃত্যুতে রেসিংয়ের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ফুটবল আজ বিদায় বলে দিল পাকো হেন্তোকে “লা গালের্না দেল কান্তাব্রিকো।” কিংবদন্তি হয়ে এবং আমাদের ইতিহাসের অংশ হয়ে কান্তাব্রিয়ান (স্পেনের অঞ্চল) ফুটবলকে সমৃদ্ধ করার জন্য ধন্যবাদ।’

স্পেনের কান্তাব্রিয়ান অঞ্চলে গুয়ারানিজোতে জন্ম হেন্তোর। শৈশবে রেসিংয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতেন। চার বছর ফুটবল ও অ্যাথলেটিকসে অনুশীলন করার পর রেসিংয়ের দরজা খুলে যায়। তত দিনে তাঁর ওপর চোখ পড়ে রিয়াল মাদ্রিদেরও। বাকিটা ইতিহাস।

বল পায়ে হেন্তো ১১ সেকেন্ডের কম সময়ের মধ্যে ১০০ মিটার দৌড় শেষ করতে পারতেন। তখন ট্র্যাকের এ ইভেন্টের বিশ্ব রেকর্ড ছিল ৯.৯ সেকেন্ড। আলফ্রডো ডি স্টেফানো ও হেক্টর রিয়ালের সঙ্গে পরে রিয়ালকে নিয়ে গেছেন ইউরোপিয়ান ফুটবলের চূড়ায়। জিতিয়েছেন টানা পাঁচ ইউরোপিয়ান কাপ (১৯৫৬-১৯৬০)। এ পথে তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ফেরেঙ্ক পুসকাস, রেমন্ড কোপা ও হোসে সান্তামারিয়ার মতো কিংবদন্তি।

২০১৬ সালে ডি স্টেফানোর জায়গায় রিয়ালের সম্মানসূচক সভাপতি হন হেন্তো। মৃত্যুর পর রিয়ালের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পাকো হেন্তো সত্যিকার অর্থেই রিয়াল মাদ্রিদের মূল্যবোধ ধারণ করতেন। মাদ্রিদের সমর্থকেরা তাঁকে আজীবন স্মরণে রাখবেন।’