সালাহকে কাঁদিয়ে মানের শিরোপা

সেনেগালের শিরোপার উল্লাসছবি: টুইটার

ফুটবল সব সময় প্রাপ্যটা বুঝিয়ে দেয় না। হয়তো তা-ই ঠিক! সব সময় একেবারে পাওনা-দেনার হিসাব করলে তো আর ফুটবল এত রোমাঞ্চ ছড়ায় না!

তবে ওলেম্বের পল বিয়া স্টেডিয়ামে আজ ফুটবল ন্যায়বিচারকের ভূমিকায়ই দাঁড়িয়েছে। একেবারে কড়ায়-গন্ডায় পাওনা বুঝিয়ে দিয়েছে সেনেগালকে।

এই মুহূর্তে র‍্যাঙ্কিংয়ের বিচারে আফ্রিকার সবচেয়ে এগিয়ে থাকা, গত আফ্রিকান নেশনস কাপের ফাইনালে উঠেও শিরোপাবঞ্চিত, মানে-কুলিবালিদের ‘সোনালি প্রজন্মের’ সেনেগালকে এবারের আফ্রিকান নেশনস কাপের শিরোপা বুঝিয়ে দিয়েছে। তাতে আনন্দ-কান্নার খতিয়ানে ‘খরচে’র ঘরে পড়ে থাকল মো সালাহর কান্না।

নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিট শেষে গোলশূন্য ম্যাচে টাইব্রেকারে সালাহর মিসরকে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আফ্রিকার সেরার স্বীকৃতি ঘরে নিয়ে গেল সেনেগাল। টাইব্রেকারে মানের নেওয়া চতুর্থ শট জালে জড়াতেই উচ্ছ্বাসে ভাসল সেনেগালের সোনালি প্রজন্ম।

আর সালাহ? মিসরের ট্রফি ক্যাবিনেটে সবচেয়ে বেশি ৭টি আফ্রিকান নেশনস কাপের (আফকন) শিরোপা আছে, কিন্তু সেগুলোর কোনোটিতেই সালাহর ছোঁয়া নেই। এবার খুব কাছে গিয়েও ট্রফিটা ছোঁয়া হলো না।

যে অভিজ্ঞতা এর আগের আফকনে মানের হয়েছিল!

একদিকে সালাহ, অন্যদিকে মানে - আফ্রিকান নেশনস কাপের ফাইনালের আগে সব আলো কেড়ে নিয়েছিল ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলের দুই সতীর্থের 'যুদ্ধ।' তাতে জয় তুলে নেওয়ার প্রাথমিক উচ্ছ্বাস শেষে বিজিত সালাহকেই জড়িয়ে ধরেন মানে। সালাহর বুঝি তখন সেসব ভালো লাগছিল না! সালাহ-মানে কারওই তো এর আগে কখনো আফকন জেতা হয়নি। মানের সে আক্ষেপ ঘুচল, সালাহর ঘুচল না। এ কষ্ট হয়তো সমবেদনায় যায় না!

টাইব্রেকারে মানের শট জালে জড়াতেই নিশ্চিত হয় সেনেগালের শিরোপা
ছবি: টুইটার

দুজনের কেউই যে আজ দারুণ আলো ছড়িয়েছেন, এমন নয়। মানের জন্য তো ম্যাচটা দুঃস্বপ্ন হয়ে ওঠারই হুমকি দিচ্ছিল। কিন্তু ওই যে, ফুটবল আজ প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়ার পণ করেছিল! নাহলে ম্যাচের ৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোলের সুযোগ হারানো মানের টাইব্রেকারে নেওয়া শটেই ম্যাচের ভাগ্য লেখা হবে, এমন চিত্রনাট্য কে ভেবেছিল?

শুধু পেনাল্টি মিসই কেন, প্রথমার্ধেই মানে অন্তত আরও দুটি সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ। সেনেগালও। রক্ষণ সামলে সালাহর গতি কাজে লাগানো পালটা আক্রমণের কৌশলে খেলা মিসরের ওপরে ম্যাচজুড়েই দাপট দেখিয়েছে সেনেগাল। ৫৮ শতাংশ সময়ে বলের দখল সেনেগালের ছিল, মিসর গোলকিপার আবু গাবাল গোলের হাত থেকে দলকে বাঁচিয়েছেন ৫বার! অন্যদিকে সেনেগালের গোলকিপার এদুয়ার্দ মেন্দিকে সেভ করতে হয়েছে দুটি।

মেন্দি টাইব্রেকারে শট ঠেকিয়ে খুলে দেন সেনেগালের জয়ের পথ
ছবি: টুইটার

টাইব্রেকারেও দুই গোলকিপারই শট ঠেকিয়েছেন, তবে শেষ পর্যন্ত মেন্দির সেভই সেনেগালের শিরোপার পথ খুলে দেয়!

দ্বিতীয় শটে মিসরের আবদেল মোনেমের শট পোস্টে লাগলে সেনেগাল এগিয়ে যায়। কিন্তু সেনেগালের তৃতীয় শট নিতে যাওয়া বোউনা সারের শট আবার ঠেকিয়ে দেন মিসর গোলকিপার আবদু গাবাল।

সালাহর এখনো আফকনের শিরোপা ছোঁয়া হলো না
ছবি: টুইটার

সালাহর চোখেমুখে তখন আবার আশা জেগেছে, নতুন স্বপ্নে জেগেছে মিসর। কিন্তু ওদিকে মেন্দিও যে সদাসজাগ! চতুর্থ শটে মোহানাদা লাহসিনের শট ঠেকিয়ে দেন মেন্দি, তাতে সেনেগালের চতুর্থ শট নিতে আসা মানের জন্য তৈরি হয়ে যায় নায়ক বনে যাওয়ার সুযোগ।

ম্যাচের শুরুতে পেনাল্টি মিস করার প্রায় ২ ঘন্টা ৪০ মিনিট পর এবারে মানের আর ভুল হলো না। মিসরের পঞ্চম শট নেবেন বলে ঠিক করে রাখা সালাহ অসহায় চোখে চেয়ে দেখলেন মানের স্বপ্ন ছোঁয়ার দৃশ্য।

তাঁর চোখে ঝাপসাই লেগেছে দৃশ্যটা।