স্কালোনির সময়ে এমন পরীক্ষায় আর পড়েনি আর্জেন্টিনা

ইতালির বিপক্ষে ম্যাচটা এক অন্যরকম চ্যালেঞ্জ নিয়েই হাজির আর্জেন্টিনার সামনেছবি: রয়টার্স

কী দারুণ সময়ই না কাটছে আর্জেন্টিনার!

দলটাকে দেখলে সুখী পরিবার মনে হয়। লিওনেল মেসির সঙ্গে রদ্রিগো দি পল, জিওভানি লো সেলসো, আনহেল দি মারিয়া, এমিলিয়ানো মার্তিনেজদের সম্পর্ক বন্ধুর মতো। কোচ লিওনেল স্কালোনির কৌশলে মাঠেও সাফল্য আসছে। গত জুলাইয়ে কোপা আমেরিকা জেতা আর্জেন্টিনা টানা ৩১ ম্যাচ অপরাজিত। এ মুহূর্তে বিশ্বে জাতীয় দলগুলোর মধ্যে আর কোনো দল এত বেশি সময় ধরে অপরাজিত নেই।

এই সুখানুভূতি নিয়েই আজ ওয়েম্বলিতে ইতালির মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা। কোনো প্রীতি ম্যাচ নয়, কোপা আমেরিকা ও ইউরোজয়ীদের মধ্যে আন্তমহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণী ‘লা ফিনালিসিমা’য়। তবে সেই ম্যাচে এমন এক পরীক্ষাও হচ্ছে আর্জেন্টিনার, যা লিওনেল স্কালোনির অধীনে কখনো হয়নি—ইউরোপিয়ান দলের বিপক্ষে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ।

২০১৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ভরাডুবির পর প্রথমে আপৎকালীন দায়িত্ব পেয়েছিলেন স্কালোনি। ২০১৯ কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনাকে সেমিফাইনালে তোলার পর পদটাতে স্থায়ী হয়েছেন। এরপর থেকে বলতে গেলে আর্জেন্টিনার ইতিহাসের অন্যতম উজ্জ্বল অধ্যায়েরই জন্ম দিয়েছেন ২০০৬ বিশ্বকাপে মেসির সঙ্গে আর্জেন্টিনা দলে খেলা স্কালোনি।

কোপা আমেরিকা জিতিয়ে আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরোপাখরা ঘুচিয়েছেন। মেসি, হিগুয়েইন, মাচেরানোদের সোনালি প্রজন্মের শেষে মেসির সঙ্গে মূলত তরুণ প্রতিভাবানদের নিয়ে পালাবদলের প্রক্রিয়াকেও মসৃণ রেখেছেন।

কিন্তু এ সময়ে ইউরোপের কোনো দলের বিপক্ষে প্রতিযোগিতামূলক কোনো ম্যাচে খেলা হয়নি স্কালোনির আর্জেন্টিনার। প্রতিযোগিতামূলক কী, ২০১৮ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হারের পর এ পর্যন্ত ইউরোপের কোনো দলের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ম্যাচই খেলেছে মাত্র একটি—২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর জার্মানির বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ। এ সময় আর্জেন্টিনা মোট কতটি ম্যাচ খেলেছে? ৪৭টি!

স্কালোনি ধীরে ধীরে দারুণভাবেই গড়ে তুলেছেন আর্জেন্টিনা দলকে
ছবি: রয়টার্স

মূলত দুটি কোপা আমেরিকা (২০১৯ ও ২০২১) আর কাতার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের কারণে দক্ষিণ আমেরিকান দলের বাইরে আর তেমন কোনো দলের বিপক্ষে খেলাই হয়নি আর্জেন্টিনার। যা-ও খেলেছে, তা-ও পুঁচকে দলের বিপক্ষে অর্থযোগ নিশ্চিত করা প্রীতি ম্যাচই। নিকারাগুয়া, মরক্কো, ইরাক, গুয়াতেমালা...আর্জেন্টিনার প্রীতি ম্যাচের প্রতিপক্ষ ছিল এই দলগুলো।

আর প্রতিপক্ষ না পেলে হাতের কাছে থাকা মেক্সিকো তো ছিলই। এই ৪৭ ম্যাচের মধ্যে মেক্সিকোর বিপক্ষেই আর্জেন্টিনা প্রীতি ম্যাচ খেলেছে ৪টি! কাতার বিশ্বকাপে দুই দল একই গ্রুপে না পড়লে সংখ্যাটা ৫ হয়ে যেত নিশ্চিত—জুনেই মেক্সিকো-আর্জেন্টিনা প্রীতি ম্যাচের কথা থাকলেও সেটি পরে বাতিল করা হয়েছে।

২০১৯ সালে জার্মানির বিপক্ষে ম্যাচের পর এ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা ২৭টি ম্যাচ খেলেছে, সব কটিই দক্ষিণ আমেরিকান দলের বিপক্ষে। বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করার পর থেকেই যে আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনির মুখে সব সময় ইউরোপের দলের বিপক্ষে খেলে নিজেদের অবস্থা বুঝে নেওয়ার ইচ্ছার কথা শোনা গেছে, সে তো আর এমনি এমনি নয়! নভেম্বরে কাতারে বিশ্বকাপ শুরুর আগে দক্ষিণ আমেরিকা ছাড়া অন্য সব মহাদেশের দলের বিপক্ষেই প্রীতি ম্যাচ খেলার চেষ্টা করে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা, এর মধ্যে ইউরোপের দলের বিপক্ষে খেলার ইচ্ছাই বেশি।

পিএসজিতে তাঁরা সতীর্থ, আজ দুই দলে। তবে ম্যাচের আগে ভেরাত্তি আর মেসির সৌহার্দ বিনিময়ে তো আর বাধা নেই
ছবি: টুইটার

কারণটা তো সহজেই অনুমেয়। সর্বশেষ চার বিশ্বকাপই জিতেছে ইউরোপের দল। ১৯৮২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কাছে হেরে বাদ পড়া আর্জেন্টিনা ১৯৮৬ বিশ্বকাপে সর্বশেষ শিরোপা জিতেছে, এরপর প্রতিবারই বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইনদের হৃদয় ভেঙেছে কোনো ইউরোপিয়ান দলের কারণেই। মহাদেশ ধরে ধরে হিসাব করলে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জয়ের হার সবচেয়ে কম (৪৭.৩%) ইউরোপের বিপক্ষেই। স্কালোনি দায়িত্ব নেওয়ার আগে ইউরোপিয়ানদের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার রেকর্ডও যে হতশ্রীই ছিল।

স্কালোনির অধীনে শুধু তো জার্মানির বিপক্ষেই খেলেছে আর্জেন্টিনা, সে ম্যাচে প্রথমার্ধে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলে ড্র করে আলবিসেলেস্তেরা। কিন্তু সে ম্যাচটি নিয়ে ইউরোপিয়ানদের বিপক্ষে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচেই জয়হীন আর্জেন্টিনা।

২০১৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে বাদ পড়ার আগে গ্রুপ পর্বেও দুই ইউরোপিয়ান ক্লাবের মুখোমুখি হয়েছে আর্জেন্টিনা, এর মধ্যে প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করেছে ১-১ গোলে, দ্বিতীয় ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হার ৩-০ গোলে। আর বিশ্বকাপের আগে স্পেনের কাছে ৬-১ গোলে হারটাই সম্ভবত সেবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে শঙ্কা সবচেয়ে গাঢ় করে দিয়েছিল।

তা ইউরোপের কোনো দলের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার সর্বশেষ জয়ের উদাহরণ কোনটি জানেন? ২০১৮ সালের ২৪ মার্চ, ২-০ গোলে। প্রতিপক্ষ? ইতালি! সেই প্রীতি ম্যাচটাও হয়েছিল ইংল্যান্ডের মাটিতেই! পার্থক্য শুধু এই যে, সেটি ওয়েম্বলি নয়, হয়েছিল ইতিহাদ স্টেডিয়ামে।