হঠাৎ কিংস থেকে কিংসলির ঠিকানা হচ্ছে মোহামেডান
৭ এপ্রিল সর্বশেষ খবরে এসেছিলেন তিনি। প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসকে হার থেকে বাঁচিয়েছেন জোড়া গোল করে।
তাঁর ২ গোলে শেখ জামালের কাছে হার এড়িয়ে ৩-৩ গোলে নাটকীয় ড্র করেছে কিংস। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নেমে শেষ তিন মিনিটের ঝলকে নিজেকে চেনান এলিটা কিংসলি।সেই কিংসলি আবার খবরে এসেছেন। এবার গোল করে নয়, দল বদল করে।
নতুন দলবদল আসতে দেরি আছে। এর আগেই অবশ্য দল বদলাচ্ছেন কিংসলি। সেটা অবশ্য নিজের ইচ্ছায় নয়। দুই ক্লাবের সমঝোতায়। এ মাসেই শুরু হতে যাওয়া প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় পর্বে তাঁকে কিংস থেকে ধারে নিয়ে নিচ্ছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।
মোহামেডানের পরিচালক আবু হাসান চৌধুরীর কথায় স্পষ্ট হয়েছে কিংসলির ধারের দলবদলের বিষয়টি। দুই দিন আগে কিংসলিকে পাওয়ার ব্যাপারে সবুজসংকেত দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘কিংসলিকে পাওয়ার ব্যাপারে আলোচনা চলছে কিংসের সঙ্গে। দেখা যাক কী হয়।’
আজ তিনি নিশ্চিত করেই প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কিংসের কাছে কিংসলিকে ধারে চেয়েছিলাম। ইমরুল ভাই (কিংসের সভাপতি) সম্মতি দিয়েছেন। আগামীকালই আমরা ওকে পাব বলে আশা করছি।’
সাদা–কালোরা চলতি লিগের প্রথম ১০ ম্যাচে করেছিল মাত্র ৮ গোল। এর ৭টিই ছিল মালির স্ট্রাইকার সোলেমান দিয়াবাতের। প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে রহমতগঞ্জের বিপক্ষে এ ম্যাচেই তারা করেছে ৫ গোল। এলিটা যোগ দিলে দ্বিতীয় পর্বে মোহামেডানের আক্রমণে দিয়াবাতের সঙ্গে জুটিটা জমবে, এমনটাই বিশ্বাস মোহামেডানের।
কিন্তু কিংসলির জন্য এটা কোনো ভালো খবর নয়। এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে বেশি কিছু বলতে চাননি। তবে কথাবার্তায় বোঝা গেছে, এমন সিদ্ধান্তে খুশি নন বসুন্ধরা কিংসের ফরোয়ার্ড। সেটাই স্বাভাবিক, বসুন্ধরা কিংসের মতো দল ছেড়ে অন্য দলে খেলতে কেনই–বা চাইবেন কিংসলি!
কিংসে যেমন সুযোগ-সুবিধা আর ব্যবস্থাপনা, মোহামেডানে সেটা নেই। কিন্তু ক্লাব কিংসলিকে ছাড়লে তাঁর কিছু করার নেই। ফলে কিংসলি কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হয়ে শুধু বলেছেন, ‘ক্লাবের সিদ্ধান্তের বাইরে আমার কিছু বলার নেই।’
গত বছরের মার্চে নাইজেরিয়ার নাগরিকত্ব ছেড়ে বাংলাদেশি হয়েছেন এলিটা কিংসলি। তাঁর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলা। কিন্তু ফিফার নানা শর্ত পূরণ না হওয়ায় কিংসলির এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলে খেলা হয়নি। এখন আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন।
তবে ক্লাব ফুটবলে খেলে যাচ্ছেন। যদিও তারকায় ঠাসা কিংসের শুরুর একাদশে ঠাঁই হয় না তাঁর। চলতি প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন বদলি হিসেবে। এই ভূমিকায় অবশ্য তিনি সফলই। এ পর্যন্ত দেশি ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫টি গোল করেছেন কিংসলি। তবু তাঁকে কেন ছাড়ছে কিংস?
কিংসের টিম ম্যানেজমেন্টের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোচিং স্টাফ কিংসলির ব্যাপারে খুশি নয়। কিংস যে ছকে ফুটবল খেলে, তার সঙ্গে কিছুটা অপ্রস্তুত কিংসলি। সে মানিয়ে নিতে পারছে না। শরীর ভারী হওয়ায় গতি কম। তা ছাড়া লিগের দ্বিতীয় পর্বে দুজন নতুন বিদেশি যোগ হবে কিংসে। ফলে কিংসলির সুযোগ আরও কমে যাবে খেলার। তাই মোহামেডানে গিয়ে নিয়মিত খেলতে পারলে আমাদের আপত্তি নেই।’
কিংসলি ধারে মোহামেডানে গেলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কথা কিংসের। মোহামেডান কি কোনো আর্থিক চুক্তি করেছে কিংসের সঙ্গে? মোহামেডান কর্মকর্তা আবু হাসান চৌধুরী বলছেন, ‘ইমরুল ভাই আমাদের দিচ্ছেন কিংসলিকে। খেলোয়াড় তো তাঁরই, আমরা শুধু ধারে নিচ্ছি। আমরা হয়তো খেলোয়াড়কে কিছু সম্মানী দেব।’
কিংসলির পাশাপাশি কিংসের মিডফিল্ডার মোরসালিনকে ধার নিচ্ছে মোহামেডান। সাদা–কালোরা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইংল্যান্ডপ্রবাসী রাইট উইঙ্গার নাবিল রহিমকে আনছে। বাফুফের এলিট একামেডির স্ট্রাইকার মিরাজকেও নিচ্ছে তারা। তবে ছেড়ে দিচ্ছে অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম, স্ট্রাইকার সাইফ, ডিফেন্ডার তপুকে।