হৃদ্‌রোগ, এরিকসেন—তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে এই ডাচ তারকাকে

এরিকসেনের মতো ডেলি ব্লিন্ডও হৃদরোগে আক্রান্তছবি: রয়টার্স

ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন তাঁর খুব ভালো বন্ধু। নেদারল্যান্ডসের ডিফেন্ডার ডেলেই ব্লিন্ড সেই বন্ধুত্ব ছাপিয়েও আরও এক জায়গায় মিলে গেছেন ডেনিশ তারকার সঙ্গে। হৃদ্‌রোগ যে বাসা বেঁধেছে তাঁর মধ্যেও। পরশু রাতে ডেনমার্ক-ফিনল্যান্ড ম্যাচে এরিকসেন যখন মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন, তখন ব্লিন্ডের কেবলই মনে হচ্ছিল এরিকসেনের জায়গায় তো তিনিও থাকতে পারতেন।

হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন ব্লিন্ড পরশু রাতে। টেলিভিশনে তিনি দেখছিলেন সেই দুঃসহ সময়। জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে যে কেবল সেকেন্ডের পার্থক্য, সেটি খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন ডাচ্‌ তারকা। তিনি এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন যে ইউক্রেনের বিপক্ষে গত রাতের ম্যাচটিও খেলবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলেন।

এরিকসেনের ঘটনা আতংকে বিহ্বল করেছিল ব্লিন্ডকে।
ছবি: এএফপি

২০১৯ সালে ব্লিন্ডের হৃদ্‌যন্ত্রের পেশিতে প্রদাহ দেখা দেয়। সেটি ধরা পড়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে আয়াক্সের হয়ে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে। মাঠেই তিনি শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন। মাথা ঘুরছিল তাঁর। খেলার মধ্যে বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও পরে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়ে তিনি জানতে পারেন দুঃসংবাদটা। হ্যাঁ, দুঃসংবাদই তো! একজন ফুটবলারের জন্য হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে বড় দুঃসংবাদ আর কী হতে পারে! তীব্র মানসিক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে তিনি খেলে চলেছেন। কিন্তু শঙ্কা তো জাগেই। এরিকসেনের ঘটনাটা যে নতুন করে শঙ্কা জাগিয়ে দিল তাঁর মধ্যে। তাঁর পক্ষে কি সম্ভব হবে ফুটবলার জীবনটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া?

ব্লিন্ড ফুটবল খেলেন শঙ্কা নিয়েই। বুকে তাঁর বসেছে পেসমেকার। এটি সাধারণত অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনকে নিয়ন্ত্রণ করে। গত আগস্টেই একটা প্রীতি ম্যাচে মাঠে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। পরে অবশ্য সেটি খুব বিপজ্জনক কিছু নয় বলেই রায় দিয়েছিলেন তাঁর চিকিৎসকেরা।

কাল ইউক্রেনের বিপক্ষে মাঠেই নামতে চাননি ব্লিন্ড
ছবি: এএফপি

ডেনমার্ক-ফিনল্যান্ড ম্যাচে এরিকসনের ঘটনা ঘটার পর নিজের অনুভূতির কথা বলেছেন ব্লিন্ড, ‘ঘটনাটা আমাকে ভয়াবহ মাত্রায় প্রভাবিত করেছে। এরিকসেন আমার খুব ভালো বন্ধু। ঘটনাটা ভয়ংকর। আমারও একই সমস্যা আছে। আমি অনেক মানসিক বাধা পেরিয়ে খেলাটা চালিয়ে যাচ্ছি।’

ইউক্রেনের বিপক্ষে ম্যাচের আগের রাতটা ছিল এরিকসেনের ওই ঘটনার রাত। টেলিভিশনে পুরো ব্যাপার দেখে নিজেকে ভয়াবহ এক পরিস্থিতির মধ্যে আবিষ্কার করেছেন ব্লিন্ড। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারেননি। দেশের হয়ে ইউরো ২০২০-এর প্রথম ম্যাচটা খেলবেন কি না, সেটি নিয়ে ভেবেছেন তিনি। পরে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করেই খেলেছেন। ম্যাচের শুরু থেকেই মাঠে ছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময় ফ্রাঙ্ক ডি বোয়ের তাঁকে তুলে নেন। ডাগ আউটে ফিরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধে ব্লিন্ডকে তুলে নেন কোচ ফ্রাঙ্ক ডি বোর
ছবি: এএফপি

এরিকসেনের অসুস্থতার কারণে ভয় তাঁকে জেঁকে ধরেছিল, ‘নিজেকে নিজেই রাজি করিয়ে ম্যাচটা খেলেছি আমি। তবে আমি গর্বিত যে শেষ অবধি খেলতে পেরেছি। টেলিভিশনে ডেনমার্ক-ফিনল্যান্ড ম্যাচে যা দেখেছি, সেটির প্রভাব আমার ওপর তো পড়বেই। আমিও যে একই সমস্যায় আক্রান্ত। সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। আমাকে বড় মানসিক বাধা পেরিয়েই মাঠে নামতে হয়েছে।’

ব্লিন্ড অবশ্য মনে করেন, মাঠে নামতে না পারলে সেটি হতো আরও ভয়ংকর, ‘মাঠে নামতে না পারলে সেটি আমার মনে আরও বাজে প্রভাব ফেলত। আমি এরিকসেনের কথা ভেবেছি। সে হাসপাতাল থেকেই তার সতীর্থদের মাঠে নামতে বলেছে। আমি সেটিতে উৎসাহিত হয়েছি। তবে চিকিৎসকেরা আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে আমি নিরাপদ—এটিও আমাকে মাঠে নামতে শক্তি ও সাহস জুগিয়েছে।’