ইউরোপে যখন ইতালির বিপক্ষে ৫৫ বছরের শিরোপা–খরা কাটানোর লড়াইয়ে নামবে ইংল্যান্ড, তার আগে একই দিনে কোপায় মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা।

একই দিনে দুই দেশে জমজমাট দুটি ফুটবল লড়াই। অথচ বেশির ভাগ মানুষই মজে থাকতে চাইবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচের রোমাঞ্চে। যে লড়াইয়ের শুরুটা হয়েছিল ১০৭ বছর আগে। ১৯১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দুই দলের ফুটবল মাঠে দেখা হয়েছিল প্রথমবার। সেই থেকে ফুটবলের এই জনপ্রিয় দ্বৈরথ আজও চলে আসছে। আর বিশ্ব ফুটবলে দুই দলই একটু একটু করে নিজেদের তুলে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। দুই দল মিলিয়ে এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিতেছে সাতবার।

আন্তর্জাতিক ফুটবলের সবচেয়ে প্রার্থিত লড়াই
ছবি: এএফপি

আগামীকাল আবারও দুই দল মুখোমুখি হবে কোপার ফাইনালে। এই দুই দলের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ—মাঠে মুখোমুখি হবেন নেইমার ও মেসির মতো দুজন বিশ্বসেরা ফুটবলার।

এ পর্যন্ত ১৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড সঙ্গী করে আগামীকাল ভোরে মারাকানা স্টেডিয়ামে ফাইনালে নামবে আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলও কম যায় না। কোপার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ২০১৯ সালে নভেম্বরে সর্বশেষ হেরেছিল একটি প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনার কাছে। এরপর থেকে ব্রাজিল রয়েছে অপরাজিত।

এই ম্যাচে জয়–পরাজয়ে মেসি হয়ে উঠতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ। অন্তত এমনটাই মনে হয়েছে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রিচার্লিসনের, ‘ব্যাপারটা আমাদের ভালো না লাগলেও মানতে হবে যে তাদের রয়েছে বিশ্বের সেরা ফুটবলার (মেসি)। সুতরাং জমজমাট এক লড়াই হবে। আমরা জানি, আর্জেন্টিনাকে হারানো কত কঠিন। এটা শুধু এখন নয়, অতীতেও একই রকম হয়েছে। এটাও জানি যে মারাকানায় তাদের হারানো কতখানি কঠিন হবে।

ম্যারাডোনা এ দ্বৈরথের আরেক নায়ক ছিলেন
ছবি: টুইটার

এবারের কোপা কলম্বিয়া ও আর্জেন্টিনায় আয়োজন করার কথা ছিল কনমেবলের (দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল সংস্থা)। কিন্তু করোনার কারণে এটা সরিয়ে ব্রাজিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্বাগতিক হওয়ার বাড়তি সুবিধাটা নিশ্চিত আবারও নিতে চাইবে ব্রাজিল। দুই বছর আগে কোপায় সেমিফাইনালে ব্রাজিল ২-০ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। ওই ম্যাচে রেফারির এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল, যা নিয়ে ওই সময় পুরো আর্জেন্টিনা সমালোচনায় মুখর হয়েছিল।

টুর্নামেন্টটা শুধু আর্জেন্টিনার জন্যই বিশেষ কিছু নয়। আকাশি–নীলদের কিছু দেওয়ার দায় রয়েছে মেসিরও। জাতীয় দলের হয়ে মেসির শোকেসে নেই কোনো বড় টুর্নামেন্টের ট্রফি। সেই দেনা শোধের সুযোগটাও এবার এসেছে মেসির সামনে। সেই ১৯৯৩ সালের পর থেকে আর কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা পায়নি আর্জেন্টিনা। মেসিও যেন একই সুরে বাঁধা!

ব্রাজিলের আরেক জনপ্রিয় তারকা রোমারিও
ফাইল ছবি

ব্রাজিল এই টুর্নামেন্টে একটু ফেবারিট হিসেবেই এগিয়ে থাকবে। শুধু ঘরের মাঠে খেলবে এ জন্যই নয়, এই টুর্নামেন্টে অতীত রেকর্ডও যে তাদের পক্ষে কথা বলছে। শুধু তা–ই নয়, আর্জেন্টিনাকে বেশ কিছু ম্যাচে হারানোর খ্যাতিও রয়েছে তাদের।

ফাইনালে দুই দল চারবার মুখোমুখি হয়েছে, এর মধ্যে তিনবারই কোপায়। একবার ২০০৫ সালে কনফেডারেশনস কাপে। আর্জেন্টিনা ১৯৩৭ সালের কোপায় ব্রাজিলকে হারিয়েছিল। কিন্তু এরপর থেকে ফাইনালে কখনো জেতায় হয়নি আর্জেন্টিনার। পেরুতে ২০০৪ সালের ফাইনালে জেতে ব্রাজিল। এরপর ভেনেজুয়েলায় ২০০৭ সালেও একই চিত্রনাট্য। ওই বছর অবশ্য তরুণ মেসি খেলেছিলের জাতীয় দলের হয়ে তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক ফাইনাল।

রোনালদো রাঙিয়েছেন ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা দ্বৈরথকে
ছবি : রয়টার্স

‘প্রথম শিরোপার খোঁজে মেসি’ আগামীকালের এই লড়াইয়ের আগে হয়তো সবাই এমন শিরোনামই করতে চাইবে। কিন্তু একই সত্য যে নেইমারের বেলায়ও ঘটতে যাচ্ছে! ব্রাজিল এর আগে যখন ২০১৩ সালে কনফেডারেশন কাপ জিতল, মেসির মতো নেইমারও শুধু অলিম্পিকের সোনা জিতেছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের কোপাজয়ী দলে ছিলেন না নেইমার। চোট তাকে ছিটকে দিয়েছিল টুর্নামেন্ট থেকেই।

এবার মারাকানায় দুর্দান্ত এক রেকর্ড ডাকছে নেইমারকে। ম্যাচে নামার আগে প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের ফরোয়ার্ড বলছিলেন, ‘আমার মাথায় সব অর্জনের স্মৃতি ঘুরছে। ওই মাঠে আমার অনেক আনন্দের স্মৃতি। আমি ওই মাঠে কখনো হারিনি। আশা করি, এবারও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।’