ব্রাজিলে জন্ম নেওয়া প্রায় প্রতিটি শিশুই বেড়ে ওঠার সময় স্বপ্ন দেখে বড় ফুটবলার হওয়ার। পরিবেশই আমাদের সে স্বপ্ন দেখায়।

বড় ফুটবলার হয়ে বড় ক্লাবে খেলার প্রতিযোগিতাটা অনেক বেশি। সাও পাওলোতে খুব অল্প বয়সেই ফুটবলের সঙ্গে আমার ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। পরবর্তী সময়ে বড় ক্লাবে নাম লেখাতে গিয়ে অনেক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়েছি।

১৯ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু। বসুন্ধরা কিংসের মাধ্যমে বাংলাদেশ দিয়েই প্রথমবার দেশের বাইরে খেলতে এসেছি।

বাংলাদেশে খেলার প্রস্তাব পাওয়ার পর ইন্টারনেট ঘেঁটে এখানকার ফুটবল উন্মাদনা সম্পর্কে জেনেছি। বসুন্ধরা কিংস সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা পাওয়া ছাড়াও বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

এখানে আসার পর যা দেখেছি ও শুনছি, তাতে আমি অবাক। অনেক দূরের দক্ষিণ আমেরিকার দুটি দেশ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ফুটবল নিয়ে এ দেশের মানুষের মধ্যে কত উন্মাদনা। আমি নিজেকে দিয়েও বুঝতে পারি, ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার বলে আশপাশের মানুষ আমার দিকে ভালোবাসার দৃষ্টি নিয়ে তাকান।

কোপা আমেরিকায় এবার দারুণ খেলছেন নেইমার।
ছবি: রয়টার্স

অনেকে কথা বলার চেষ্টা করেন। বিষয়গুলো আমি খুব উপভোগ করি। তারপরও অনেকেই বলেন, আমি নাকি উন্মাদনার কিছুই দেখিনি! বিশ্বকাপের সময় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় বিভক্ত হয়ে যায় বাংলাদেশ!

আমার সতীর্থ খেলোয়াড়দের মধ্যেও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল নিয়ে খুব রোমাঞ্চ দেখছি। অনুশীলনে নিজেদের মধ্যে খেলা নিয়ে গল্প হয়, খুনসুটি করি। কে জিতবে বা কে হারবে, এই নিয়ে কত মজা হচ্ছে।

তাঁদের দেখেই বুঝতে পারি, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল মানে বাংলাদেশের জন্য বাড়তি উন্মাদনা। ফাইনাল নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে বলব, খুব কঠিন একটি ম্যাচ হতে যাচ্ছে। উভয় দলই ট্রফি জেতার সামর্থ্য রাখে। সম্ভাবনা সমান সমান বললেও আমার নিজের দেশকে জয়ের জন্য এগিয়ে রাখব। আমি মনে করি, ম্যাচটি ব্রাজিল জিতবে এবং সেটি নির্ধারিত সময়েই। তবে দুই দলের মধ্যে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান থাকবে মাত্র ১ গোলের।

ব্রাজিল আক্রমণভাগের দুই ভরসা নেইমার ও লুকাস পাকেতা।
ছবি: রয়টার্স

লিওনেল মেসির নেতৃত্ব আর্জেন্টিনা খুব ভালো ফুটবল খেলছে ব্রাজিলের মাটিতে। তবে শিরোপা জয়ের জন্য বর্তমান ব্রাজিল দলটিকে অনেকভাবেই এগিয়ে রাখা যায়। প্রতিটি বিভাগেই ভালো খেলোয়াড় আছে বলে দলটা পরিপূর্ণ। দলে বিশ্বমানেরও খেলোয়াড় আছে। ঢাকায় বসে নিজের দেশের খেলা দেখার সময় অনেক স্মৃতিই মনে পড়ে।

এই দলের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, লুকাস পাকেতা, এভারটন সুয়ারেস ও এভারটন রিবেইরোর সঙ্গে আমার খেলার অভিজ্ঞতা আছে। এদের মধ্যে পাকেতা তো টুর্নামেন্টে নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গোল করে জেতাচ্ছে দলকে।

আমাদের দল নিয়ে আমার কিছুটা অস্বস্তি বলতে আক্রমণভাগ। গোল করার ক্ষেত্রে আমরা নেইমারের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। টুর্নামেন্টে নেইমার খুব ভালো খেলছে।

কিন্তু যখন সে ভালো খেলতে পারছেন না, দল তখন বিপদে পড়ে যাচ্ছে। আক্রমণভাগ নিয়ে কোচের যে পরিকল্পনা আছে, সেটিও তেমন কার্যকর হচ্ছে না। নেইমার প্রতি ম্যাচেই ভালো করবে, সেটি ধরে নিয়ে ফাইনালে নামলে দলকে ভুগতে হতে পারে।

ফাইনালের আগে ব্রাজিলের অনুশীলনে নেইমার এবং তাঁর সতীর্থরা।
ছবি: রয়টার্স

দুই দলের ফাইনাল নিয়ে আমি একটি খবর শুনে অবাক হয়েছি যে এ দেশের ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা মারামারি করেছেন। সমর্থকদের উদ্দেশে বলতে চাই, মারামারি করে দলকে জেতানো যায় না। ধৈর্য ও ভালোবাসা নিয়ে প্রিয় দলকে সমর্থন দিতে হয়।

লেখক: বসুন্ধরা কিংসের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।