‘ব্রাদার্সের সব অহংকার শেষ হয়ে গেল’

অবনমনের পর বিমর্ষ ব্রাদার্স ফুটবলাররা। ক্লাবের মান রাখতে পারলেন না তাঁরাছবি: শামসুল হক

আগের দিন প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমিত হয়ে গিয়েছিল আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ। গতকাল একই পথের যাত্রী ঐতিহ্যবাহী ব্রাদার্সও। অবনমন এড়ানোর আশা বাঁচিয়ে রাখতে কাল মুক্তিযোদ্ধার বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না গোপীবাগের দলটির। কিন্তু এমন বাঁচা-মরার ম্যাচে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে ব্রাদার্স উল্টো ৪-০ গোলে উড়ে গেছে মুক্তিযোদ্ধার কাছে।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দিনের প্রথম ম্যাচে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রকে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করে জয়ে ফিরেছে আবাহনী লিমিটেড। আর্মি স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম আবাহনীকে ২-০ গোলে হারিয়ে চমক দিয়েছে রহমতগঞ্জ।

ব্রাদার্স ইউনিয়ন নেমে গেল পেশাদার ফুটবলের দ্বিতীয় স্তরে। ৪৬ বছরে এ–ই প্রথম
ছবি: শামসুল হক

তবে দিনের সেরা ঘটনা তিন ম্যাচ হাতে রেখেই ব্রাদার্সের প্রিমিয়ার লিগ থেকে বিদায়। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রাদার্স ১৯৭৪ সালে দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগে আসে। ১৯৭৫ সালে ঢাকার শীর্ষ লিগে অভিষেকেই কমলা জার্সিধারীরা তৎকালীন লিগ চ্যাম্পিয়ন আবাহনীকে হারিয়ে সাড়া ফেলে। পরে দলটি হয়ে ওঠে ঢাকার মাঠে তৃতীয় শক্তি। লিগে চ্যাম্পিয়ন হতে হতেও তারা পারছিল না। শেষ পর্যন্ত ২০০৩-০৪ ও ২০০৫ মৌসুমে জেতে ঢাকা লিগ। ২০০৪ সালে ঘরে তোলে জাতীয় লিগ। ১৯৮০ সালের প্রথম বছরই জেতে ফেডারেশন কাপ। পরে আরও দুবার চ্যাম্পিয়ন—১৯৯১ ও ২০০৫ সালে। ১৯৮১ সালে ঢাকায় ব্যাংকক ব্যাংক ক্লাবের সঙ্গে যৌথভাবে জেতে আগা খান গোল্ডকাপের শিরোপা। সেই দলটিই কাল নেমে গেল পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তরে।

জন্মলগ্ন থেকেই ব্রাদার্সের অগ্রযাত্রার নায়ক ছিলেন ত্রিমূর্তি—বাবলু, সেলিম ও মহসীন। তাঁরা এই দলটিকে অনেক দূর টেনে আনেন। সেই ব্রাদার্সের পতনে ব্যথিত হাসানুজ্জামান বাবলু কাল প্রথম আলোকে দুঃখভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলছিলেন, ‌‘৮-১০ বছর ধরেই কোনোমতে টিকে ছিল ব্রাদার্স, আশঙ্কা করছিলাম যেকোনো সময়ই নেমে যেতে পারে। শেষমেশ আজ নেমে গেল। জীবনদ্দশায় এটা দেখব, কখনো ভাবিনি। বাবলু, মহসীন, সেলিম, ওয়াসিম...আমরা এই খেলোয়াড়েরা জানপ্রাণ দিয়ে খেলেছি ব্রাদার্সের জন্য। আজ আমি ভীষণ বেদনাহত।’

কর্মকর্তারা চেয়ে চেয়ে দেখলেন দলের অধঃপতন
ছবি: শামসুল হক

বাবলু যোগ করেন, ‘ব্রাদার্সের জন্মলগ্ন থেকে দীর্ঘদিনের কোচ গফুর বেলুচ বেঁচে থাকলে আজ মরেই যেতেন লজ্জায়। লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসছে আমারও। এই ব্রাদার্সের জন্য জেল খেটেছি। কিন্তু আজ ক্লাবটির করুণ অবস্থা সত্যিই দুঃখজনক। ব্রাদার্সের সব অহংকার শেষ হয়ে গেল। এই দিনে সাংবাদিকদের ফোন আসছে আমার কাছে, অনেকের ফোন ধরছি না। কোন মুখে ধরব। ব্রাদার্সের তিন-তিনজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। তাঁরা এখন বাফুফের কমিটিতে থেকে দেশের ফুটবল চালাচ্ছেন। অথচ নিজেদের ক্লাবই শেষ। এই পতনের জবাব তাঁরা দেবেন।’ বলতে বলতে কণ্ঠ ধরে আসে সত্তর-আশির দশকে বাংলাদেশের ফুটবলে অন্যতম সেরা হাসানুজ্জামান বাবলুর।

ব্রাদার্সকে লজ্জায় ঠেলে কাল গোল ৪টি করেন ইব্রাহিম, কামারা, শাকিল ও কাতো। আবাহনীর ৫ গোল তিন বিদেশির। জোড়া গোল ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফায়েল আগস্তো ও নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার সানডের। অন্য গোলটি হাইতির ফরোয়ার্ড কারভেন্স বেলফোর্টের।

১৯৮১ সালে আগাখান গোল্ডকাপজয়ী সেই ব্রাদার্স ইউনিয়ন। খেলোয়াড়দের সঙ্গে গফুর বেলুচ (সাদা শার্ট)। এ ছবি ব্রাদার্সের সমৃদ্ধ অতীতেরই এক নিদর্শন
ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে সর্বশেষ টানা চার ম্যাচে জিতে রানার্সআপ হওয়ার দৌড়ে থাকা চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে শেষ ১০ মিনিটে দুই গোল করে রহমতগঞ্জকে জয় এনে দিয়েছেন ওদিলি ও মাহমুদুল হাসান কিরণ। প্রিমিয়ার লিগে কালই প্রথম গোল করেছেন তরুণ লেফটব্যাক কিরণ। মাঝমাঠের নিচে থেকে বল কেড়ে নিয়ে সতীর্থ খেলোয়াড়ের সঙ্গে পাস দেওয়া-নেওয়ার পর ওভারল্যাপ করে দারুণ গোল করেছেন তিনি।

২১ ম্যাচে ১ জয়, ৩ ড্র, ১৭ হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ১৩ দলের লিগে ১২তম স্থানে ব্রাদার্স। সমান ম্যাচে ৫ পয়েন্ট আরামবাগের। এই দুই দলের ঠিক ওপরেই আছে মুক্তিযোদ্ধা। ২১ ম্যাচে ৪ জয় আর ২ ড্রয়ে ১৮ পয়েন্ট তাদের। আবাহনী ২২ ম্যাচে ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে তিনে। ২২ ম্যাচে ৪০ পয়েন্ট পাওয়া চট্টগ্রাম আবাহনী চারে।