‘৮–০’ ভুলে আজ লেখা হোক নতুন এক গল্প

’৮৫ সাফ গেমসে বাংলাদেশের সেই দল। ছবিতে ইমতিয়াজ সুলতান দাঁড়িয়ে একেবারে ডানে।ছবি: সংগৃহীত

মালদ্বীপের সঙ্গে ফুটবলে বাংলাদেশ মুখোমুখি হলেই অবধারিতভাবে এসে পড়ে প্রসঙ্গটা। ৩৬ বছর আগে, ১৯৮৫ সালে ঢাকায় এই মালদ্বীপকেই ৮–০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ফুটবলে যেটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড। কিন্তু সুখস্মৃতির রোমন্থন শেষ হতে না হতেই আবার আক্ষেপও চলে আসে। যে দলটিকে বাংলাদেশ এক সময় গোলের বন্যায় ভাসিয়েছে বাংলাদেশ, সে দলটিই এখন কতই না উন্নতি করেছে। দক্ষিণ এশীয় ফুটবলে মালদ্বীপ এখন শক্তিশালী এক দল।

আজ রাতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশের সঙ্গী বাজে স্মৃতিই। গত ১৮ বছর তাদের হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ তিনটি ম্যাচে তো রীতিমতো উড়েই গেছে বাংলাদেশ দল। পাঁচ বছর আগে সর্বশেষ সাক্ষাতে হার ৫–০ গোলে। সে ম্যাচটা কোনোভাবে স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে পারলেই যেন বাঁচেন বাংলাদেশের ফুটবল–সংশ্লিষ্টরা।

অনুপ্রেরণার খোঁজে তাই মন বারবার ফিরে যায় ৩৬ বছর আগের স্মৃতিতে। তবে ৮–০ গোলে জয়ের সেই ম্যাচে বাংলাদেশের অধিনায়কত্বের বন্ধনী যাঁর বাহুতে ছিল, সেই ইমতিয়াজ সুলতান জনি মনে করেন ’৮৫ সালে ঢাকায় খেলে যাওয়া মালদ্বীপ আর আজকের মালদ্বীপের মধ্যে আকাশ আর পাতাল ব্যবধান। সেদিনের সেই জয় সুখস্মৃতি হলেও সেটিকে প্রেরণা বানিয়ে কতটুকু লাভ হবে, সেটি নিয়ে এন্তার সন্দেহ ইমতিয়াজ সুলতানের মনে।

ইমতিয়াজ সুলতান জনি এখন
ছবি: প্রথম আলো

‘১৯৮৫ সালে মালদ্বীপের সেই দলটি ছিল খুবই দুর্বল। ম্যাচের বেশিরভাগ সময়েই খেলা হয়েছিল প্রতিপক্ষের অর্ধে। আমাদের গোলকিপার মহসিন দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল। আমরা ডিফেন্ডাররা এতটাই নির্ভার ছিলাম যে ঝুঁকি নিয়ে ওপরে উঠছিলাম নির্দ্বিধায়। হ্যাঁ, ম্যাচটা ৮–০ গোলে জিতেছিলাম। এরপর আর কখনোই জাতীয় দল কোনো প্রতিপক্ষকে ৮ গোল দেয়নি—সবই ঠিক আছে। কিন্তু ওই মালদ্বীপের সঙ্গে এখনকার মালদ্বীপের অনেক পার্থক্য। এখনকার মালদ্বীপ দারুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া। ওরা এরই মধ্যে নিজেদের শক্তির পরিচয় রেখেছে দুবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে। আমি মনে করি ৩৬ বছর আগের সেই ম্যাচকে প্রেরণা বানিয়ে লাভ নেই। ওই ম্যাচটি খুব বেশি হলে সুখস্মৃতি হতে পারে আমাদের।’

জনি চান আজ মালদ্বীপের বিপক্ষে নতুন একটা গল্প লিখুক বাংলাদেশ
ছবি: বাফুফে

পঁচাশির সাফ গেমসে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ ছিল সেটি। মালদ্বীপ ম্যাচের একদিন পরই ভারতের বিপক্ষে সোনার লড়াইয়ে মাঠে নেমেছিলেন ইমতিয়াজ সুলতানরা। দুর্দান্ত সে ফাইনাল শেষ হয়েছিল বাংলাদেশের হতাশায়। টাইব্রেকারে হেরে যায় বাংলাদেশ।

ফাইনালের হারটা এতটাই হতাশার ছিল যে মালদ্বীপ ম্যাচের খুঁটিনাটি অনেক কিছুই নাকি ভুলে গেছেন ইমতিয়াজ সুলতান, ‘আসলে ফাইনালের হারটা ছিল খুবই হতাশার। আমরা তুমুল লড়েও টাইব্রেকারে হেরে যাই। সে কারণেই কিনা, মালদ্বীপ ম্যাচের অনেক কিছুই আমার মনে নেই। তবে সে ম্যাচে মালদ্বীপও কিছুটা দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছিল, এটা মনে আছে। কায়সার হামিদের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে ওদের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় আহত হয়েছিল। মাথা ফেটে গিয়েছিল তাঁর। ওই খেলোয়াড়ের আহত হয়ে বাইরে চলে যাওয়াটা প্রভাব রেখেছিল খেলায়। ওরা খুবই মুষড়ে পড়েছিল।’

ইমতিয়াজ সুলতান চান, সেই ৮-০ গোলের চর্বিতচর্বণ ছেড়ে আজ নতুন করে, নতুন ঢংয়ে, নতুন একটা গল্প লিখুক বাংলাদেশ। গল্পটা হোক সুখস্মৃতির।