'ওই গর্ব আজীবন থাকবে'

ুনীল কৃষ্ণ দে
ুনীল কৃষ্ণ দে

এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে পরশু হঠাৎই তাঁর সঙ্গে দেখা। ৭০ ছুঁই-ছুঁই বয়সের ছাপ শরীরে। তবে ফুটবল নিয়ে কথা বলতেই টগবগিয়ে উঠলেন সুনীল কৃষ্ণ দে। ১৯৭৩ সালে মারদেকায় যাওয়া বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় দলের গর্বিত এই সদস্য আজও ফুটবলের টানে ছুটে আসেন মাঠে
 মাঠের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ৫০ বছরেরও বেশি। ফুটবলের নেশা তাহলে আজও ছাড়তে পারেননি!
সুনীল কৃষ্ণ দে: এই নেশা ছাড়া যায় না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাঠে আসতে চাই। গত বছর পর্যন্ত সেই সুযোগ করে দিয়েছিল সিজেকেএসএর শৃঙ্খলা কমিটি, যে কমিটি সদস্য ছিলাম দীর্ঘ প্রায় দুই দশক।
 এমনিতে আপনি কেমন আছেন? জীবন কেমন কাটছে?
সুনীল: ভালোই আছি। ওয়াপদার সিনিয়র সহকারী পরিচালক হিসেবে ১০ বছর আগে অবসর নিই। চট্টগ্রাম শহরে এনায়েতবাজারের গোয়ালপাড়ায় থাকি ৩৩ বছর ধরে।
 এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে প্রথম কবে এসেছিলেন মনে আছে?
সুনীল: ১৯৬৫ সাল থেকে প্রথম বিভাগ খেলেছি এই মাঠে। নিউ স্টার, কাস্টমস, পোর্ট ট্রাস্টে খেলেছি। আটষট্টিতে ঢাকার আজাদ স্পোর্টিংয়ে খেলা হয়েছে। এই ফাঁকে ওয়াপদা চাকরি দিয়েছিল ৭০ টাকা বেতনে (হাসি)। সেই সূত্রে চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুটি ওয়াপদা দলেই খেলেছি।
 ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় দলের গর্বিত সদস্য আপনি। এটা ভাবলে কেমন লাগে?
সুনীল: ওই গর্ব চিরকালই থাকবে। ওই সফরে মারদেকায় প্রথম একাদশেই খেলেছি। রাইট আউট ও লেফট আউটে খেলতে পারতাম।
 মারদেকায় থাইল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচেই আপনার চিপ থেকে হেডে এনায়েত গোল করেছিলেন। মনে আছে নিশ্চয়ই?
সুনীল: খুব মনে আছে। মারদেকায় আমাদের প্রথম ম্যাচেই থাইল্যান্ডের সঙ্গে ২-২ ড্র করে পরে টাইব্রেকারে হেরেছি আমরা। আমার চিপ থেকে এনায়েত প্রথম গোল করল। এনায়েত পরে আমাকে বলেছিল, ‘সুনীল তোর চিপ থেকে আমি যে গোলটা করলাম, সেটা সবাইকে বলবি।’ কথাটা আমি এখনো সবাইকে বলি। ওই মাঠে বছর খানেক যাওয়ার সুযোগ হয়েছে মালয়েশিয়ায় আমার ইঞ্জিনিয়ার ছেলের চাকরিসূত্রে। মাঠটা প্রণাম করে এসেছি।
 আপনারা খেলতে যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন?
সুনীল: হ্যাঁ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আমাদের বলেছিলেন, তোমরা কত গোল খাবে সেটা নিয়ে ভাবি না। তোমরা শৃঙ্খলা রাখবে। প্রসঙ্গক্রমে বলি, পঁচাত্তরের মর্মান্তিক ঘটনার মাস দুয়েক আগে হঠাৎ একদিন গুলিস্তানে শেখ কামালের সঙ্গে দেখা। সে আমাকে গাড়িতে করে ধানমন্ডির বাসায় নিয়ে গেল। চা-নাশতা খেলাম।
 অতীত থেকে যদি বর্তমানে ফেরেন, আপনাদের সময় আর এখনকার ফুটবলের কী পার্থক্য দেখেন?
সুনীল: আমাদের সময় খেলোয়াড়েরা দর্শকদের আনন্দ দিতে জানপ্রাণ দিয়ে খেলত। এখন আন্তরিকতা কমে গেছে।
 ১৯৭৩ সালের সেই ঐতিহাসিক দলে ছিলেন চট্টগ্রামেরই আরেক ফুটবলার দিলীপ বড়ুয়া। তাঁকে নিয়ে কোনো স্মৃতি...
সুনীল: দুজন একসঙ্গে খেলেছি, আজ তাঁকে মনে পড়ে। গত বছর মারা গেছেন। তাঁর জন্য চট্টগ্রামে শোকসভা করেছি নিজের উদ্যোগে।
 ঢাকার ফুটবল মহলের সঙ্গে যোগাযোগ আছে?
সুনীল: মাঝেমধ্যে ঢাকা যাওয়া হয়। ২০১২ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার নিতে গিয়েছিলাম। এমনিতে ঢাকা গেলে জাকারিয়া পিন্টু ভাই বলেন, ‘সুনীল, তুমি এলে দেখা করো। মোহামেডান ক্লাবে কিছুক্ষণ আড্ডা মারব।’