'বাবার' কাছে যাবেন ম্যারাডোনা

কাস্ত্রোকে দুজনের আড্ডার ছবি দেখাচ্ছেন ম্যারাডোনা, যাঁর টি-শার্টের বুকে চে গুয়েভারার ছবি। বন্ধু চের সঙ্গে ‘আড্ডা’ দিতে কাস্ত্রো চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে l ফাইল ছবি
কাস্ত্রোকে দুজনের আড্ডার ছবি দেখাচ্ছেন ম্যারাডোনা, যাঁর টি-শার্টের বুকে চে গুয়েভারার ছবি। বন্ধু চের সঙ্গে ‘আড্ডা’ দিতে কাস্ত্রো চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে l ফাইল ছবি

সেটি ছিল তাঁর জন্য দ্বিতীয় জন্ম। ফিদেল কাস্ত্রোকেও নিজের দ্বিতীয় জন্মদাতা বলেই মানেন। ডিয়েগো ম্যারাডোনা কিউবায় না গিয়ে পারেন? কাস্ত্রোর শেষশয্যার পাশে দাঁড়াবেন। বিদায় জানাতে। বলতে, ‘কমরেড, দেখা হবে আবার!’
ম্যারাডোনা বলেছেন, ‘আমার বন্ধুকে বিদায় বলতে আমি কিউবায় যাব। আর্জেন্টিনার হাসপাতালগুলো আমার জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল, ওদের ওখানে আমার মৃত্যু হোক, এই ঝুঁকি ওরা নিতেই চায়নি। সেই সময় তিনি কিউবার দরজা খুলে দিয়েছিলেন আমার জন্য।’
ম্যারাডোনাকে বাঁচানোর আশা একরকম ছেড়েই দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। ম্যারাডোনা নিজেও জীবনের আলোর পথে যে হাঁটতে চাননি। মাদকের নেশায় জড়িয়ে নিজেকে খুনই করে ফেলেছিলেন প্রায়। ম্যারাডোনার জীবনে আশার দূত হয়ে এসেছিলেন কাস্ত্রো।
সেই কাস্ত্রো নিজে জীবনের লড়াইয়ে অনিবার্য হার মেরে চলে গেছেন ওপারে। সপ্তাহব্যাপী শোক চলছে কিউবায়। ৪ ডিসেম্বর হবে শেষকৃত্য। ক্রোয়েশিয়ায় ডেভিস কাপে আর্জেন্টিনা টেনিস দলকে সমর্থন দিতে গেছেন ম্যারাডোনা। সেখানেই জানিয়েছেন, তিনিও যেতে চান কিউবায়। যে দেশ আর যে দেশের মহান নেতা তাঁর জন্য বয়ে এনেছিল জীবনের নতুন বার্তা।
কাস্ত্রোর সঙ্গে ম্যারাডোনার প্রথম দেখা ১৯৮৭ সালে। মাত্র এক বছর আগেই মেক্সিকো বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার জাদুতে যখন পুরো পৃথিবী মোহাচ্ছন্ন। কাস্ত্রো নিজে সব সময়ই আর্জেন্টিনার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য একটা সম্পর্ক অনুভব করেছেন। শুধু লাতিন সংস্কৃতির কারণে নয়, আর্জেন্টিনার চে গুয়েভারার সঙ্গে কাঁধ মিলিয়েই তো স্বপ্নের বিপ্লবটাকে সত্যি করেছিলেন তিনি।

ফুটবল মাঠের আরেক চে’র সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হয়, ম্যারাডোনা যখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। কয়েক দফায় কিউবায় চিকিৎসা নিয়ে ফিরে যাওয়া ম্যারাডোনা ২০০৪ সালে জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে দুলছিলেন। কোকেনের নেশা থেকে বেরোতে পারছিলেন না কিছুতেই। মুটিয়ে যেতে যেতে একসময় ওজন হয়ে গিয়েছিল ১২৭ কেজি।

সেই ম্যারাডোনাকে জীবনের আলো দেখিয়েছেন কাস্ত্রো। ‘উনি আমাকে বলেছিলেন, আমি পারব। আর আমি পেরেছিও। এই তো দেখুন, আমি বেঁচে আছি, ওনার কথা বলছি। ওনাকে নিয়ে এটাই আমার সবচেয়ে স্মরণীয় স্মৃতি’—ভাঙা ভাঙা গলায় সাংবাদিকদের বলছিলেন ম্যারাডোনা। বলেছেন খবরটা পেয়ে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ার কথাও, ‘আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছি। আমার বাবার পর তাঁর মৃত্যুই আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন অভিজ্ঞতা।’

কাস্ত্রো মুগ্ধ ছিলেন ম্যারাডোনার ফুটবলে, আর ম্যারাডোনা মোহাবিষ্ট হয়ে ছিলেন কাস্ত্রোর রাজনৈতিক দর্শনে। ২০০৫ সালে ম্যারাডোনার অনুষ্ঠানে এসে কাস্ত্রো জর্জ বুশ আর পুঁজিবাদী সমাজকে কষে গালও দিয়ে গিয়েছিলেন। চে’র পাশাপাশি কাস্ত্রোরও উল্কিও আঁকা আছে ম্যারাডোনার শরীরে। কাস্ত্রোকে আমৃত্যু মনেও ধারণ করবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন।

সেই কাস্ত্রোর সমাধিপাশে দাঁড়াতে চান ম্যারাডোনা। এই সত্য উচ্চারণে—জীবনের ওপারে আবারও দেখা হবে। আবারও দুজন মিলে ধরাবেন হাভানা চুরুট। কে জানে, সেই আড্ডায় চে গুয়েভারাও থাকবেন হয়তো! তথ্যসূত্র: রয়টার্স।