মেসির সঙ্গে খেলছেন বিশ্বাস করতে গায়ে চিমটি কেটে দেখেন এই ব্রাজিলিয়ান

ইন্টার মায়ামির ফরোয়ার্ড লিও আফোনসোআফোসোর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

নামে মিল আছে দুজনের। তবে দেশ আলাদা।

একজনের নাম লিওনেল মেসি। কাছের মানুষদের কাছে তিনি ‘লিও’। আরেকজনের নামও লিও। পুরো নাম লিও আফোনসো। মেসির সঙ্গে তাঁর এটুকুই যা মিল। অবশ্য মিল আরও একটি আছে, সেটা বলার আগে এটুকু জেনে রাখুন, ফুটবলে দুজনের জন্মস্থান দুই চিরবৈরী দেশে। মেসির দেশ তো জানাই—আর্জেন্টিনা। আর আফোনসোর দেশ ব্রাজিল। এবার সেই মিলটা বলা যাক। ইন্টার মায়ামিতে তাঁরা দুজনেই সতীর্থ।

আরও পড়ুন

আফোনসো অবশ্য মায়ামিতে মেসির বিশেষ এক সতীর্থ। কারণ ইন্টার মায়ামির স্কোয়াডে আফোনসোই একমাত্র ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়। হার্ড রক স্টেডিয়ামে আজ ক্লাব বিশ্বকাপে পালমেইরাসের বিপক্ষে মায়ামির ২–২ গোলে ড্র ম্যাচে স্কোয়াডে ছিলেন ২৩ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ড। তবে মাঠে নামার সুযোগ পাননি। বেঞ্চে বসেই দেখেছেন দলের খেলা, মেসির খেলা।

মায়ামিতে মেসির সঙ্গে খেলতে পেরে আপ্লুত আফোনসো
আফোনসোর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো’ জানিয়েছে, ১৩ বছর বয়সে ব্রাজিল ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন আফোনসো। ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ারটা যে বেশ শক্ত হয়েছে তা নয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার বেশ কয়েক বছর পর তিনি মেসির সতীর্থ হবেন, তা ভেবেছিল কে! স্বয়ং আফোনসো নিজেও তা ভাবেননি, ‘পেশাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। তবে মেসির দলে খেলব, সেই স্বপ্ন কখনো দেখিনি। আমার মনে হয় না কেউ এই স্বপ্ন দেখে। কারণ এটা পাগলাটে ব্যাপার। এখনো হাতে চিমটি কেটে দেখি সত্যি তো!’

গ্লোবোর সঙ্গে আলাপচারিতায় মেসিকে প্রথম দেখার অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন আফোনসো। তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ পাওয়া এবং ক্লাব বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নিয়েছেন। মজার বিষয়, তাঁর মা ও দাদি পালমেইরাসের পাঁড় ভক্ত।

আরও পড়ুন

ব্রাজিলিয়ান এই সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এক বছর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের কলেজে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও উদ্যোক্তা বিষয়ে পড়াশোনা করতেন আফোনসো। এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় দল ভার্জিনিয়া ক্যাভালিয়ার্সে খেলতেন। এটি ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল দল।

সাও পাওলোয় শৈশব কাটানো আফোনসো ২০১৪ বিশ্বকাপের আগে ১৩ বছর বয়সে দেশ ছাড়েন। সেই বিশ্বকাপের একটি ম্যাচও তিনি দেখেননি এবং ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলে বয়সভিত্তিক কোনো দলেও খেলেননি। সাও পাওলোর সোশ্যাল ক্লাবে কিছুদিন খেলেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে ফিলাডেলফিয়া ইউনিয়ন ও মায়ামির বয়সভিত্তিক দলে খেলার পর আফোনসো যোগ দেন ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাড়ে তিন বছর সেখানে কাটানোর পর দেশটির মেজর লিগ সকারের (এমএলসি) ড্রাফটে নাম লেখান।

১৩ বছর বয়সে ব্রাজিল ছেড়ে যুক্তরাস্ট্রে পাড়ি জমান আফোনসো
আফোনসোর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

এই ড্রাফট আসলে বার্ষিক এক ইভেন্ট, যেখানে এমএলসির দলগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের দল থেকে খেলোয়াড় বাছাই করে নেয়। আফোনসোকে সেখান থেকেই বেছে নিয়ে প্রথম তাঁকে ক্লাবের ‘বি’ দলে জায়গা দেয় মায়ামি। গত বছর ডাক পান মায়ামির মূল দলে, যেখানে ২০২৩ সালেই যোগ দিয়েছেন মেসি। অর্থাৎ আফোনসো ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো কোনো ক্লাবের মূল দলে সুযোগ পেয়ে দেখেন তাঁর সতীর্থ আটবার ব্যালন ডি’অরজয়ী মেসি!

আরও পড়ুন

আফোনসো এ নিয়ে একটা অভিজ্ঞতা ভাগ করেছেন, ‘যেসব মানুষের সঙ্গে গত ৫ থেকে ১০ বছরে দেখা হয়নি, তাঁরা আমাকে খুদে বার্তা পাঠিয়ে জানতে চান, তুমি কি মেসির সঙ্গে খেলছ? ব্যাপারটা কেমন?’

মেসির সঙ্গে প্রথম দিন অনুশীলনের অভিজ্ঞতাও জানিয়েছেন আফোনসো, ‘ভাবছিলাম, অনুশীলনে কি তাঁকে দেখব? তিনি (অনুশীলনে) আসার পর আমি স্রেফ জমে গেলাম। অনুশীলনে তিনি পাস দেন আমাকে আর আমি ভাবি; অবিশ্বাস্য! কখনোই ভাবিনি মেসির সঙ্গে দেখা হবে এবং তাঁর সঙ্গে খেলব! তিনি যা করেন, সেটা বলা কিংবা বোঝানোর মতো ভাষা আমার নেই।’

মেসিকে প্রথম দর্শনের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর এখন তাঁর সঙ্গ উপভোগ করেন আফোনসো। মেসি কোনো পরামর্শ দিলে সেসব বেদবাক্যের মতো অনুসরণ করেন, ‘তিনি বলেন, যখনই আমি বল পাব তুমি তির্যকভাবে দৌড়াবে, তাহলে তোমাকে (পাস) দিতে পারব কিংবা জায়গা তৈরি করতে পারব।’ বুসকেটস বলেন, ‘যখনই মেসি বল পাবে, তুমি দৌড়াবে; কারণ, সে জানে বলটা কীভাবে তোমার হাতে (পায়ে) তুলে দিতে হবে।’