১০০ পেরিয়ে রোনালদোর আরও কাছে ভিনিসিয়ুস
ব্যালন ডি’অর জয়ের চেষ্টায় স্পেনের ইবিজায় রোনালদোর বাসায় থেকে কিছুদিন অনুশীলন করেছিলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি তাঁকে থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। সমর্থন ও সম্ভাবনায় এগিয়ে থেকেও গত বছর অক্টোবরে ভিনিসিয়ুস ব্যালন ডি’অর জিততে না পারায় তাঁকে একটি বার্তা দিয়েছিলেন রোনালদো। তাতে অভিভাবক ও বন্ধুসুলভ সান্ত্বনাবাণীর সঙ্গে প্রত্যাশাও ছিল। এবার হয়নি তো কী হয়েছে, পরেরবার হয়তো!
সেই পরেরবার এখনো আসেনি। কিন্তু সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে কাল রাতের পর রোনালদোর সেই বার্তাটা কারও কারও মনেও পড়তে পারে, ‘বলের গতিপথ যারা বোঝে তারা জানে কীভাবে সহনশীলতা এবং প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিতে হয়। এ বছরটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু ভিনিসিয়ুস জুনিয়র বিশ্বকে দেখিয়েছে দৃঢ় সংকল্প কী জিনিস—রোনালদোর জন্য এর চেয়ে বড় গর্ব আর কিছু হয় না। ভালো কিংবা খারাপ সময়ে ফেনোমেনন (রোনালদোর নাম) ভিনির সঙ্গে আছে...এই পথচলা চলবেই এবং আমরাও একসঙ্গেই থাকব।’
ব্রাজিলের হয়ে দুবার বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তির বুকের ছাতি নিশ্চয়ই কাল রাতে আরেকটু চওড়া হয়ে উঠেছিল। রিয়াল মাদ্রিদে ভিনিসিয়ুসের কারণে রোনালদো যে এখন দুইয়ে নেমে যাওয়ার পথে! অথচ গত দেড় যুগ ধরে রিয়াল মাদ্রিদে ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে গোল সংখ্যায় রোনালদোই ছিলেন শেষ কথা। রোনালদোর নিশ্চয়ই ভেবে ভালো লাগার কথা, ব্রাজিলে বর্তমান প্রজন্মের ফুটবলারদের মধ্যে যাঁকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন দেন, সেই ভিনি তাঁকে আর শেষ কথা হিসেবে থাকতে দিচ্ছেন না। কিংবদন্তির দীর্ঘ ১৮ বছরের অপেক্ষার অবসান হচ্ছে।
চ্যাম্পিয়নস লিগে গতকাল রাতে সালজবুর্গের বিপক্ষে জোড়া গোল করেছেন ভিনিসিয়ুস। প্রথম গোলটি ছিল রিয়ালের হয়ে তাঁর শততম গোল। রিয়ালেরই আরেক কিংবদন্তি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো শততম গোল পাওয়ার পর যেভাবে উদ্যাপন করেছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে, ভিনিও সেভাবেই উদ্যাপন করেন। বাঁ হাতের তর্জনী উঁচিয়ে ‘এক’ এবং ডান হাতে দুটি শূন্য বুঝিয়ে। তাঁর বর্তমান সতীর্থ কিলিয়ান এমবাপ্পেও পিএসজিতে থাকতে একইভাবে ক্যারিয়ারের শততম গোল উদ্যাপন করেছিলেন। কিন্তু উদ্যাপনটি বিষয় নয়, বিষয় হলো পরের গোলটি করে ভিনিসিয়ুস রিয়ালে নিজের গোল সংখ্যা ১০১–এ উন্নীত করেন। আর তাতেই উঠে এসেছে রোনালদোর প্রসঙ্গ।
রিয়ালে ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়দের মধ্যে রোনালদোর গোল সংখ্যাই সর্বোচ্চ। পাঁচ মৌসুমে ১৭৭ ম্যাচে করেছিলেন ১০৪ গোল। ২০০২ সালে রিয়ালে যোগ দেওয়ার আগেই অবশ্য সেরা সময় পেছনে ফেলে এসেছিলেন রোনালদো। ২৪ বছর বয়সী ভিনিসিয়ুসের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি আবার উল্টো। রিয়ালের সিনিয়র দলে এবারসহ ৭ মৌসুম খেলছেন, যেটাকে তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা সময়ও বলা যায়। এই ৭ মৌসুমে ২৯১ ম্যাচে ১০১ গোল হলো ভিনির। রিয়ালে গোলের সেঞ্চুরি করতে রোনালদোর তুলনায় ভিনির বেশি সময় লাগার একটা কারণ হতে পারে, তাঁর পূর্বসূরি ছিলেন নিখাদ স্ট্রাইকার। ভিনি তো কখনো উইঙ্গার, কখনো আবার ফরোয়ার্ড। তবে পজিশন যেটাই হোক, সেই দারুণ মাইলফলকটি ভিনির থেকে আর বেশি দূরে নেই। রোনালদোকে পেছনে ফেলে রিয়ালে ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে ভিনির চাই আর ৪ গোল।
ভিনি নিজেও এ নিয়ে রোমাঞ্চিত। কাল ম্যাচ শেষে মুভিস্টারকে বলেছেন, ‘এই জার্সিতে গোল করতে পেরে ভালো লাগছে। রোনালদোর চেয়ে আর তিন গোল দূরে আছি এবং এই জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলদাতা ব্রাজিলিয়ান হওয়া থেকেও। আশা করি, আরও গোল করতে পারব।’
চলতি মৌসুমে ২৭ ম্যাচে ১৭ গোল করা ভিনি যে কিছুদিনের মধ্যেই রোনালদোকে পেছনে ফেলবেন, তা বলাই বাহুল্য। ব্রাজিলের জার্সিতে তাঁর ফর্ম যেমনই হোক, রিয়ালের জার্সিতে বরাবরই দুর্দান্ত। গত মৌসুমেও যেমন ৩৯ ম্যাচে করেছিলেন ২৪ গোল। তখনো ফিরে এসেছিলেন রোনালদো। গত মৌসুমে রিয়ালের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন ভিনি। তাঁর আগে সর্বশেষ কোনো ব্রাজিলিয়ানের রিয়ালের হয়ে মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে দেখা গেছে রোনালদোর মাধ্যমে (২০০৫-০৬)। অবশ্য রিয়ালে লা লিগা ছাড়া আর বড় কোনো শিরোপাই জেতা হয়নি রোনালদোর। ক্যারিয়ারে কখনো জিততে পারেননি চ্যাম্পিয়নস লিগও। ভিনি সেখানে রিয়ালের হয়ে জিতেছেন দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ, গোল করেছেন দুটি ফাইনালেই। পাশাপাশি তিনবার জিতেছেন লা লিগাও। ক্লাবটির হয়ে ১৪ ট্রফি জয়ের পথে খেলেছেন ১৩টি ফাইনাল, গোল করেছেন ৮টি।
রিয়ালের হয়ে ন্যূনতম ১০০ গোল করা ২৩তম খেলোয়াড় ভিনি। তাঁর ১০১ গোলের ৫৮টি লা লিগায়, ২৮টি চ্যাম্পিয়নস লিগে, ৭টি কোপা দেল রেতে, ৪টি স্প্যানিশ সুপার কাপে, ৩টি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে ও ১টি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে।
মাদ্রিদের ক্লাবটির হয়ে দ্রুততম ১০০ গোলের কীর্তি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। ১০৫ ম্যাচে মাইলফলকটি ছুঁয়েছিলেন ক্লাবটির হয়ে সর্বোচ্চ ৪৫০ গোল করা পর্তুগিজ কিংবদন্তি। ১৬৪ ম্যাচে মাইলফলকটি ছুঁয়ে দ্বিতীয় দ্রুততম রোনালদো।