গ্রুপসেরা হয়ে শেষ ষোলোয় নেদারল্যান্ডস

টানা তিন ম্যাচে গোল করলেন কেডি গাকপোছবি: রয়টার্স

খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন ছিল না নেদারল্যান্ডসের। স্বাগতিক কাতারের বিপক্ষে ড্র করলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারত ডাচরা। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে কাতারের যে অবস্থা, তাতে গ্রুপ ‘এ’র এই ম্যাচে মেম্ফিস ডিপাই, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, কোডি গাকপোদের না জেতাটাই ‘অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হতো।

আজ আল বায়াত স্টেডিয়ামে সে ধরনের কোনো ‘অপরাধ’ ডাচরা করেনি। কাতারের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচটা মোটামুটি হেসেখেলে জিতেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে তিন বারের রানার্সআপ নেদারল্যান্ডস। গাপকো ও ডি ইয়ংয়ের দুই অর্ধের দুই গোলে জয়ের ব্যবধান ২-০।

তিন ম্যাচে তিন গোল গাকপোর
ছবি: রয়টার্স

প্রথম দুই ম্যাচে ইকুয়েডর আর ঘানার বিপক্ষে দাঁড়াতেই না পারা কাতার আজ গ্রুপের সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই কিছুটা আত্মসম্মান বাঁচাতে মরিয়া ছিল। শুরু থেকেই আক্রমণে ঝাঁপায় তারা। কিন্তু গোলের সুযোগ সেভাবে তৈরি করতে পারেনি। ডেলি ব্লিন্ড, নাথান আকে, ভার্জিল ফন ডাইকদের রক্ষণের সামনে কাতারের আক্রমণগুলো বারবার প্রতিহত হয়েছে। তবে এর মধ্যেও ফাঁকফোকর ঠিকই বেরিয়ে এসেছে।

নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় গোল
ছবি: রয়টার্স

কিন্তু অভিজ্ঞতায় বিস্তর ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা এশিয়ান চ্যাম্পিয়নরা ডাচ রক্ষণে সেই ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে বলার মতো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। ম্যাচের শুরুর দিকে নেদারল্যান্ডসের খেলা কিছুটা বিরক্তি তৈরি করেছিল, তারা কাতারকে আক্রমণে উঠতে দিচ্ছিল সে সময়। নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ও সেভাবে দেখা যায়নি। কাতারের রক্ষণে মেম্ফিস ডিপাই আতঙ্ক ছড়াচ্ছিলেন ঠিকই, কিন্তু কাজের কাজটা হচ্ছিল না।

ম্যাচের ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে কাতার নেদারল্যান্ডসের রক্ষণে ভালোই চাপ তৈরি করেছিল। একাধিক কর্নারও আদায় করে নিয়েছিল। ঘরের মাঠের দর্শকদের উল্লাস কাতারিদের যে উজ্জীবিত করছিল, সেটি বলাই যায়। কিন্তু স্বাগতিক দলের সবকিছুই ডাচ রক্ষণে গিয়ে থেমে গেছে। ঠিক এই সময় (২৬ মিনিটে) বলতে গেলে খেলার ধারার বিপরীতেই গোল করে এগিয়ে যায় নেদারল্যান্ডস। ডাচদের এগিয়ে দেন কোডি গাকপো। কাতারের রক্ষণে বল ধরে প্রায় একক প্রচেষ্টাতেই গোলকিপার মিশাল বারশেমের পাশ দিয়ে বল জালে ঠেলে দেন ১৯৮৬ সালের পর এই প্রথম কোনো দলের গ্রুপ পর্বের প্রতিটি ম্যাচেই গোল পাওয়া এই ডাচ ফরোয়ার্ড। ৩৭ বছর আগে ইতালির আলেসান্দ্রো আলতোবেল্লির পর গ্রুপ পর্বে টানা তিন ম্যাচেই গোল পেলেন গাকপো।

নেদারল্যান্ড খেলেছে হালকা চালেই
ছবি: রয়টার্স

এগিয়ে গিয়ে ডাচদের যেন কিছুটা নির্লিপ্ততা পেয়ে বসে। প্রথমার্ধের শেষ ভাগে একরকম হাঁটার গতিতেই খেলেছে নেদারল্যান্ডস দল। ডেনজেল ডামফ্রিস, ডেভি ক্লাসেন, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, মার্টেন ডি রুন, ফন ডাইকরা নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া নেওয়া করেই খেলেছেন বেশির ভাগ সময়। গোল খেয়ে হতোদ্যম কাতারের ফুটবলাররা ডাচ খেলোয়াড়দের পেছন পেছন দৌড়েই গেছেন শুধু।

দ্বিতীয়ার্ধেও খেলার গতি প্রায় একই ছিল। ৪৯ মিনিটে নেদারল্যান্ডস এগিয়ে যায় ২-০ গোলে। গোলটি করেন ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং। তবে এই গোলটি করতে পারতেন মেম্ফিস ডিপাই। কাতারের বক্সের বাঁ দিক দিয়ে মধ্যে বল নিয়ে ঢুকে তিনি গোলে শট নিয়েছিলেন। কিন্তু কাতারি গোলকিপার সেটি ঠেকিয়ে দিলেও ফিরতি বল ক্লিয়ার করতে পারেনি রক্ষণভাগের খেলোয়াড়েরা। ফিরতি বলে পা লাগিয়ে সেটি জালে পাঠিয়ে দেন বার্সেলোনা তারকা। এই অর্ধে আরও একবার কাতারের জালে বল পাঠিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। সেটি করেছিলেন বদলি হিসেবে নামা স্টিভেন বের্গহোইস। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় গোল করার আগে বলটি গাকপোর হাতে লেগেছিল। ভিএআরের পরামর্শে রেফারি গোলটি বাতিল করেন।

ডিপাই কাতারের রক্ষণে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন বারবার
ছবি: রয়টার্স

এরপরেও হালকা মেজাজে খেলে গেছে নেদারল্যান্ডস। জয় তুলে নিতে কোনো সমস্যাই হয়নি। ডাচ গোলমুখে কোনো হুমকিই তৈরি করতে পারেনি কাতারের খেলোয়াড়েরা। শেষ পর্যন্ত গ্রুপ সেরা হয়ে নেদারল্যান্ডস মাঠ ছাড়ে ২-০ গোলের জয় নিয়েই।

গ্রুপ সেরা হওয়ায় দ্বিতীয় রাউন্ডে ডাচদের ম্যাচ গ্রুপ ‘বি’র রানার্সআপের সঙ্গে। সেই দলটি হতে পারে ইরান অথবা যুক্তরাষ্ট্র।