আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপজয়ী কোচ সিজার লুইস মেনোত্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ইএসপিএন স্পেন ও ইএসপিএন মেক্সিকোর খ্যাতিমান সংবাদকর্মী হোসে র্যামন ফার্নান্দেজ গতকাল জানিয়েছিলেন নিজ বাসায় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। মেনোত্তির শারীরিক অবস্থা ‘বেশ খারাপ’ বলে জানিয়েছিলেন ফার্নান্দেজ। তাঁর বরাত দিয়ে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কাও জানিয়েছিল, কিংবদন্তি এ কোচের জীবন নিয়ে শঙ্কা আছে। কিন্তু আর্জেন্টিনার জাতীয় সংবাদ সংস্থা তেলাম তাঁর স্বজনদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মেনোত্তির শারীরিক অবস্থা ‘অতটা গুরুতর’ নয়।
তেলাম জানিয়েছে, বাসায় পড়ে গিয়ে মেনোত্তির শরীরে ইন্টারনাল ব্লিডিং বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছিল। সে কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একই সূত্র তেলামকে জানিয়েছে, ২২ অক্টোবর ৮৫ বছরে পা রাখতে যাওয়া মেনোত্তির সেরে উঠতে কত দিন লাগবে, সেটি তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে গোপন রাখা হয়েছে।
তবে আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘ওলে’ জানিয়েছে, মেনোত্তির শারীরিক অবস্থা যতটা খারাপ ভাবা হয়েছিল, ততটা নয়। মঙ্গলবার বা বুধবার বুয়েনস এইরেসের হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেতে পারেন আর্জেন্টাইন ফুটবলে ‘এল ফ্লাকো’ (ছিপছিপে) নামে পরিচিত এই কোচ। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম মুন্দো দি, ‘এটা সামান্য শঙ্কা। প্রত্যাশামতোই ধকল কাটিয়ে উঠেছে। সে কারণেই হাসপাতালে ভর্তি করা। আশা করি, কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’
তবে মেনোত্তি কবে বাসায় পড়ে গিয়েছিলেন, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম টিএন৩০ দাবি করেছে, বর্তমানে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের পরিচালক মেনোত্তির বাসায় পড়ে যাওয়ার খবর রোববার প্রকাশ হলেও ঘটনাটা চার দিন আগের। মেনোত্তি এমনিতেই বেশ কিছুদিন ধরে শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সিগারেটে আসক্তির কারণে তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা আছে। ২০১১ সালে ফুসফুসে অস্ত্রোপচারও করিয়েছেন।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত ডিসেম্বরে কাতারে গিয়ে লিওনেল মেসিদের বিশ্বকাপ জয় দেখতে পারেননি মেনোত্তি। এমনিতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন খুব কম। সর্বশেষ সংবাদমাধ্যমের সামনে এসেছিলেন গত জুলাইয়ে এক রেডিও সাক্ষাৎকারে। সেখানে মেসি ও আনহেল দি মারিয়াকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন মেনোত্তি। বলেছিলেন, ‘শারীরিক ফিটনেস ও বয়সের কারণে লিও (মেসি) আগামী বিশ্বকাপেও খেলতে পারে।’ দি মারিয়াকে নিয়ে বলেছিলেন, তাঁর মেসির মতোই মর্যাদা পাওয়া উচিত।
বোকা জুনিয়র্সের হয়ে আর্জেন্টিনার লিগ জেতা ও সান্তোসে পেলের সতীর্থ হিসেবে খেলা মেনোত্তি কোচিংয়ে নেমে কিংবদন্তি হয়েছেন। ১৯৭৩ সালে রেনে হাউসমান, কার্লোস বেবিংটন, মিগুয়েল ব্রিনদেসি ও ওমর লারোসাদের নিয়ে কিংবদন্তি দল গড়ে উরাকানকে আর্জেন্টিনার শীর্ষ লিগ জিতিয়েছেন। মেনোত্তির সেই দল আর্জেন্টাইন ফুটবলে খেলার ধারা পাল্টে দিয়েছিল। ১৯৭৪ সালে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে কোচের দায়িত্ব নেন মেনোত্তি। চার বছর পর আর্জেন্টিনাকে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জেতানো তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারে সেরা সাফল্য।
সেই বিশ্বকাপে (১৯৭৮) ১৮ বছর বয়সী ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে দলে না নেওয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন মেনোত্তি। উত্তরে বলেছিলেন, পরের বছর জাপানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের জন্য তাঁর সতেজ ম্যারাডোনাকে চাই। মেনোত্তি কথা রেখেছিলেন। তাঁর অধীনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আর্জেন্টিনা আর সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন ম্যারাডোনা।