টানা দুই হারে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে স্বাগতিক কাতার

সেনেগালের সঙ্গে হেরে গেছে কাতারছবি: রয়টার্স

প্রথম ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে হারার পর কাতার কোচ ফেলিক্স সানচেজ বলেছিলেন বড় মঞ্চে খেলার চাপটা নিতে পারেনি কাতার। সেনেগালের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে তুলনামূলক ভালো ফুটবল খেলে হারার পরও হয়তো সানচেজের সেই কথাই বলতে হবে।

কারণ, নিজেদের ডি-বক্সে বুয়ালেম খুখি যেভাবে ভুলটা করলেন তা চাপ সামলাতে না পারা তো আরকি! সেই ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এবারের বিশ্বকাপে সেনেগালের হয়ে প্রথম গোলটা করেন বুলায়ে দিয়া। সানচেজ অবশ্য এদিন তার দল নিয়ে ও গর্বও করতে পারেন।

প্রথম ম্যাচে লড়াই করতে না পারা দলটি এদিন সেনেগালের ঘাম ঝরিয়েছে। ভালো খেললেও অবশ্য কাতার হেরেছে ৩-১ গোলে। বিব্রতকর রেকর্ড গড়ে স্বাগতিক স্বাগতিকেরা এখন বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে। পরের ম্যাচে ইকুয়েডরের কাছে নেদারল্যান্ডস না হারলেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হবে কাতারকে।

এর ফলে বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে বিদায় নেওয়া দলটির নাম হবে স্বাগতিক দল কাতার। সব আসর মিলিয়ে দ্বিতীয় স্বাগতিক দল হিসেবে গ্রুপ পর্ব বা প্রথম রাউন্ড থেকে ছিটকে যাবে তারা। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম আয়োজক দল হিসেবে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল। তবে তারা লড়াই করেছে গ্রুপের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ পর্যন্ত।

কাতার-সেনেগাল দুই দলই হেরেছিল তাদের প্রথম ম্যাচে। হারের ধরনটা অবশ্য ভিন্নই ছিল। ইকুয়েডরের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে ইতিহাস গড়েই হেরেছিল কাতার। প্রথম স্বাগতিক দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হেরে গিয়েছিল বিশ্বকাপ আয়োজকেরা। অন্যদিকে ডাচদের কাছে হারলেও সে ম্যাচে ভালোই দাপট দেখিয়েছিল সেনেগাল। ফিনিশারের অভাবে সেদিন হেরেছিল তারা।

যেমনটা ভাবা হচ্ছিল, ম্যাচের শুরুটা হয়েছিল সেনেগালের আক্রমণ দিয়ে। কাতার আক্রমণ করার চেয়েও সেনেগালের আক্রমণ ঠেকাতেই ব্যস্ত ছিল বেশি। কাতারের পরিকল্পনাটাও অবশ্য তেমন ছিল। ফ্লেলিক্স সানচেজ এদিন নিজেদের ঘরটা আগে সামলাতে চেয়েছিলেন।

সে জন্য দল সাজিয়েছিলেন ৫-৩-২ ফরমেশনে। ম্যাচের প্রথম ২৫ মিনিটে সেনেগাল গোলে শট নেয় ৬টি। তবে সেই ৬ শটের মধ্যে গোলপোস্টে থাকে মাত্র ১টি। অন্যদিকে কাতার আক্রমণ করে ১টি। ম্যাচের ৩০ মিনিটের পর থেকে কয়েকটি আক্রমণ করে কাতার। যদিও ফাইনাল থার্ডে গিয়ে বারবারই খেই হারিয়েছে তারা।

দুর্দান্ত এক হেডে সেনেগালের জালে বল জড়ান কাতারের মুন্তারি
ছবি: রয়টার্স

ম্যাচের ৪০ মিনিটে ভুলটা করে বসেন খুখি। ক্রেপিন দিয়াত্তার ক্রস খুখি ঠিকভাবে ক্লিয়ার করতে না পারলে সেই সুযোগে বল জালে জড়ান দিয়া। ২০১৮ বিশ্বকাপে জাপানের বিপক্ষে গোলের পর এটা বিশ্বকাপে সেনেগালের প্রথম গোল। এই গোল পেতে গোলপোস্টে তাদের শট নিতে হয়েছে ৩২টি।

বিশ্বকাপে প্রথম গোল করে কখনো হারেনি সেনেগাল। তাই কাতারের জন্য ম্যাচে ফেরাটা কঠিন ছিল। সে পথ আরও কঠিন হয় বিরতি থেকে ফিরে সেনেগাল আরও একটি গোল করলে। ৪৮ মিনিটে হেডে কাতারের জালে বল জড়ান ফামারা দিয়েধিয়ু। ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলটা খেলে কাতার।

টুর্নামেন্টে ১৬৫ মিনিট খেলার পর প্রথমবার গোলপোস্টে শট করতে রাখতে পারে কাতার। ম্যাাচের ৬৩ মিনিটে আলী আসাদাল্লার শট এদুয়ার্দ মেন্দির দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন। ম্যাচের ৬৭ ও ৭২ মিনিটে আরও দুটি গোলের সুযোগ তৈরি তরে কাতার। তবে একটাও কাজে লাগাতে পারেনি।

তবে যেভাবে একের পর এক আক্রমণ করেছে কাতার, তাতে মনে হচ্ছিল কাতারের গোল পাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। হয়েছেও তা-ই। ৭৭ মিনিটে কাতারের হয়ে বিশ্বকাপে প্রথম গোল করেন মোহাম্মদ মুন্তারি। ইসমাইল মোহাম্মদের দারুণ ক্রসের সদ্ব্যবহার করেন মোন্তারি। দুর্দান্ত এক হেডে সেনেগালের জালে বল জড়ান। কাতারের হয়ে এটি তার ১৩তম গোল। ম্যাচে সমতা ফেরার স্বপ্ন দেখেছিল কাতারিরা। তবে সেটা আর হলো কই! ৮৪ মিনেটে বাম্বা দিংয়ের গোলে সেনেগালের জয় নিশ্চিত করে।