নেইমার কাঁদলেন, সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপারটিও জানালেন
সান্তোসের অনুশীলনে ফেরার পর সম্প্রতি নেইমার একটি সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন। যেখানে উপস্থিত ছিলেন শুধু তাঁর পরিবার ও বন্ধুবান্ধব। আর দশটা সংবাদ সম্মেলনের মতো হয়নি এ আলাপচারিতা। কাছের মানুষদের প্রশ্নের উত্তরে নেইমার কান্নায় যেমন ভেঙে পড়েছেন, তেমনি জানিয়েছেন এই বিশ্ব যদি আজই শেষ হয়ে যায়, তাহলে ব্যক্তিগত ও পেশাদার ক্যারিয়ার নিয়ে তাঁর কোনো আক্ষেপ থাকবে না।
শুধু তা–ই নয়, মাঠের বাইরে তাঁর জীবন ও আচরণ নিয়ে মানুষের সমালোচনা নিয়েও কথা বলেছেন নেইমার। জানিয়েছেন, লোকে তাঁকে যেভাবে বিচার করে, তাতে কখনো কখনো তাঁর কষ্ট লাগে, তবে ‘সবাই ভুল করে’, এ কথাও স্বীকার করেছেন নেইমার। বেশ খোলামেলা আলাপচারিতার এই সংবাদ সম্মেলনে নিজের জীবনে সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার কী হতে পারে, সেটাও জানিয়েছেন সান্তোস তারকা।
জীবন নিয়ে নেইমারের একটাই ভয়—এমন কোনো অসুখে পড়লেন, যেটায় ভুগে তাঁর স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গেল!
নেইমারের ভাষায়, ‘আমার একটাই ভয়, এমন কোনো অসুখ হলো, যেটায় ভুগে সবকিছু ভুলে গেলাম! স্মৃতিশক্তি হারানো, এটাই আমার একমাত্র ভয়। ভুলে গেলাম কে আমি, আমার গল্প কী, লিগ্যাসি কী, সারা জীবন যাদের সঙ্গে চলেছি, তাদেরও ভুলে যাওয়া; এই একটি ভয়ই পাই আমি।’
আমাদের জীবনে কী ঘটে, সেসব যারা বোঝে না তাদের এমন সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। আর ভুল সবাই করে। স্বপ্ন, আশা ও গল্প নিয়ে সবাই তো মানুষ।সান্তোস তারকা নেইমার
ব্রাজিলের ক্লাব সান্তোসের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হ্যান্ডলে গতকাল এই সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও পোস্ট করা হয়। যেখানে প্রথম প্রশ্নেই নেইমারকে কাঁদতে দেখা যায়। প্রশ্নটি ছিল, সান্তোসে ফেরার বিষয়ে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের যে অকুণ্ঠ সমর্থন ও সাহায্য পেয়েছেন, তা নিয়ে। কেঁদেকেটে নেইমার ধরে আসা গলায় বলেন, ‘সান্তোসের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা, ঘরে থাকা, আমার জন্য বড় সুখের উৎস। ব্রাজিল থেকে অনেক বছর দূরে থাকার পর সান্তোসে ফিরতে পেরেছি, আমার শহরে ফিরেছি। বন্ধুদের কাছাকাছি থাকতে পারছি। তোমরাই আমার শক্তির উৎস। আমি যা কিছুর মুখোমুখি হয়েছি, সেসব তোমাদের প্রেরণাতেই।’
গত মঙ্গলবার সান্তোসের সঙ্গে নতুন করে আরও ছয় মাসের চুক্তি নবায়ন করেন নেইমার। ৩৩ বছর বয়সী এ ব্রাজিলিয়ানকে সান্তোস ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত চাইলেও আগামী জানুয়ারির দলবদলে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে নেইমার নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথটা খোলা রাখতে চান—তাই ছয় মাসের বেশি চুক্তি নবায়ন করেননি। সান্তোসে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে চাননি নেইমার। বলেছেন শুধু বর্তমান নিয়েই, ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না। বর্তমানে থাকতে ভালো লাগে। এখন বর্তমান হলো মাঠে আমাকে শতভাগ ফিট হিসেবে ফিরতে হবে। আমি ওখানেই পার্থক্য গড়তে পারি।’
সান্তোসে প্রথম মেয়াদে চোটের কারণে মাত্র ১২ ম্যাচ খেলতে পেরেছেন নেইমার। দুই দফা চোটে ৭৮ দিন ছিলেন খেলার বাইরে। চোটে থাকা অবস্থায় কার্নিভালে গিয়ে সমালোচিত হন। মাঠের বাইরে তাঁর জীবন নিয়ে লোকের সমালোচনার বিষয়ে নেইমার বলেছেন, ‘আমাদের জীবনে কী ঘটে, সেসব যারা বোঝে না তাদের এমন সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। আর ভুল সবাই করে। স্বপ্ন, আশা ও গল্প নিয়ে সবাই তো মানুষ।’
নেইমার আরও ব্যাখ্যা করলেন, ‘লোকে আমি, আমার বন্ধুবান্ধব, পরিবার ও বাবাকে নিয়ে বাজে কিছু বললে মাঝেমধ্যে মেনে নিতে কষ্ট হয়। সবার সঙ্গে সাক্ষাতে এমন কিছু শুনতে হয়, যেটা ভালো না, খারাপ লাগে। যারা আমাকে জানে না এবং যারা শুধু ফুটবল নিয়ে কথা বলে না, কিন্তু ব্যক্তি আমিকে নিয়েও বলে...আমি জানি আমি ভালো মানুষ।’
তাহলে মানুষের কাছে তাঁর প্রত্যাশা কী—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল নেইমারের কাছে। ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ গোল করা এই ফরোয়ার্ডের উত্তরে বলেছেন, ‘মাঠের’ নেইমার কেমন সে বিষয়ে মনোযোগ দিতে, ‘ওখানেই আমি নিজের কাজটা করি। এখন তো ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সময়, লোকের জন্য অ্যাথলেটদের কাছে কিছু চাওয়া কঠিন, বিশেষ করে ব্রাজিলে...এটা কষ্টের যে লোকে ইন্টারনেটে ভুয়া জিনিস দেখে। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ যে আমি এ বিষয়ে মানসিকভাবে অনেক শক্ত।’
বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও লা লিগা জয়ের পাশাপাশি পিএসজির হয়ে একাধিকবার লিগ জিতেছেন নেইমার। দক্ষিণ আমেরিকান ক্লাব ফুটবলেও জিতেছেন মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা। নিজের জীবন ও ক্যারিয়ার নিয়ে নেইমার সন্তুষ্ট থাকলেও অপূর্ণ এক ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন যেটা সবাই জানেন, ‘অবশ্যই সবাই জানেন বিশ্বকাপ জয় আমার স্বপ্ন। বেশি না হলেও এখনো কিছু সময় আছে। গত কয়েক বছর আমার জন্য খুব কঠিন কেটেছে। তবে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নপূরণের মতো শক্তিশালী মনে করি নিজেকে।’
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ব্রাজিল পরের ম্যাচগুলো খেলবে আগামী সেপ্টেম্বরে। যেখানে চিলির বিপক্ষে ঘরের মাঠে এবং বলিভিয়ার বিপক্ষে খেলবে প্রতিপক্ষের মাঠে। এ ম্যাচ দুটি দিয়ে নেইমার ব্রাজিল দলে ফিরতে পারেন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে, ইউরোপিয়ান ক্লাব মাতানো নেইমারের ক্যারিয়ারের সেরা সময় কোনটি? অন্তত নেইমার নিজে কোন সময়কে মনে করেন তখন সেরা ফর্মে ছিলেন? নেইমার জানিয়েছেন নিজেই, ‘বেশ কিছু সময় সেরা ফর্মে ছিলাম। সান্তোস ও বার্সেলোনায়ও ছিলাম। তবে সবকিছু মিলিয়ে আমার সেরা সময়টা কেটেছে পিএসজিতে ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ এমনকি ২০২০ সালেও। তখন আমরা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছিলাম। আমার মনে হয় তখন আমি অপ্রতিরোধ্য ছিলাম।’