‘স্পোর্টসওয়াশিং’য়ের অভিযোগ পাত্তা দেন না সৌদি যুবরাজ

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানছবি: রয়টার্স

‘স্পোর্টসওয়াশিং!’

সৌদি আরব ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে ধাক্কা দেওয়ার পর পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে এই শব্দটা আলোচনায় উঠে এসেছে বহুবার। মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ তুলে আসছে পশ্চিমা বিশ্ব।

তাদের দাবি, এসব অভিযোগ থেকে বিশ্বের নজর সরাতে ফুটবলে প্রচুর টাকা ঢালতে শুরু করেছে সৌদি সরকার। ইউরোপ থেকে তারকা খেলোয়াড়দের লোভনীয় পারিশ্রমিকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সৌদি আরবে। এ ছাড়া ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবও কিনেছে সৌদি সরকারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।

আরও পড়ুন

যেহেতু কাঁড়ি কাঁড়ি টাকায় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, করিম বেনজেমা, নেইমারদের মতো তারকাদের সৌদি প্রো লিগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, খুব স্বাভাবিকভাবেই এসব নিয়েই আলোচনাটা বেশি হবে, আর তাতে সৌদির মানবাধিকার লঙ্ঘনও ঢাকা পড়ে যাচ্ছে—পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে এমন অভিযোগ উঠছে বহু আগে থেকে।

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রিন্স সালমান সোজাসাপটাই বলেছেন, ‘স্পোর্টস ওয়াশিং’ এর অভিযোগকে তিনি পাত্তা দেন না। যুবরাজের যুক্তি, ‘স্পোর্টস ওয়াশিংয়ে আমার জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) যদি ১ শতাংশ বাড়ে, তাহলে আমরা স্পোর্টস ওয়াশিং চালিয়ে যাব। আমি এটা (স্পোর্টস ওয়াশিংয়ের অভিযোগ) পাত্তা দিই না। খেলাধুলা থেকে আমার জিডিপি বেড়েছে ১ শতাংশ। এখন আমার লক্ষ্য এটাকে দেড় শতাংশে উন্নীত করা। আপনারা যা খুশি বলতে পারেন, কিন্তু আমরা এই দেড় শতাংশ অর্জন করবই।’

সৌদি সরকারের মালিকানাধীন পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) গত বছর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল নিউক্যাসল ইউনাইটেড কিনেছে। এ ছাড়া পেশাদার গলফ টুর্নামেন্ট ও ফর্মুলা ওয়ানও আয়োজন করেছে সৌদি আরব। আর ইউরোপে গত মৌসুমের শেষ থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে ফুটবলাররা যোগ দিয়েছেন সৌদি প্রো লিগে। সেখানে আবার সৌদি সরকারের মালিকানাধীন চারটি ক্লাব আছে, আল হিলাল, আল নাসর, আল আহলি, আল ইত্তিহাদ। আল হিলালে যোগ দিয়েছেন নেইমার, আল ইত্তিহাদে বেনজেমা। আল নাসরে আছেন রোনালদোর মতো তারকা।

আরও পড়ুন

তবে মুদ্রার অপর পিঠও আছে। নারী অধিকার লঙ্ঘন, ইয়েমেন-যুদ্ধে জড়ানো, সমালোচনা আটকাতে বাক্‌স্বাধীনতা হরণ—এসব ছাড়াও বিনা বিচারে মানুষ হত্যার অভিযোগ আছে সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে। গত বছর বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে এক দিনে ৮১ জনকে হত্যা করে সৌদি সরকার। ২০১৮ সালে সংবাদকর্মী জামাল খাসোগিকে হত্যার অভিযোগে সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হয়েছিল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং বিশ্বনেতারা। সৌদি সরকারের সমালোচক ছিলেন জামাল খাসোগি।

মানবাধিকার সংস্থার দাবি, খেলাধুলাকে ব্যবহার করে সৌদি আরব নিজেদের ইমেজ ঠিক করার চেষ্টা করছে। এ নিয়ে বিবিসি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের ফেলিক্স জেকেন্সের উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে, ‘নিউক্যাসল ও পিজিএ ট্যুরের মতো খেলাধুলাকেন্দ্রিক হাই প্রোফাইল ব্যবসায় সৌদি আরব মনোযোগী হয়েছে কারণ তারা “স্পোর্টস ওয়াশিং”–এর মাধ্যমে দেশের পতনোন্মুখ মানবাধিকার পরিস্থিতি ঢাকতে চায় এবং ১ থেকে ২ শতাংশ জিডিপিও বাড়াতে চায়।’

আরও পড়ুন