রোনালদোর পায়ের ‘জাদু’ নিজের পায়ে মাখিয়ে নিলেন রদ্রিগো

রোনালদোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রদ্রিগোছবি: টুইটার

রদ্রিগোর চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, কিংবদন্তির সামনে একদম ‘ফ্যানবয়’-হয়ে বসে আছেন। অথচ এই কিংবদন্তি যে পথ পাড়ি দিয়েছেন, রদ্রিগো এখন সেই পথেরই পথিক। মানে, রোনালদোও খেলেছেন বিশ্বকাপ, রদ্রিগোও হাঁটছেন সেই পথে।

কিন্তু ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে রোনালদো নাজারিও ডি লিমা নামটি সব সময়ই শ্রদ্ধার জন্ম দেয়। আক্রমণভাগের খেলোয়াড়েরা, বিশেষ করে স্ট্রাইকাররা তাঁর মতো হতে চান।

রদ্রিগো উইঙ্গার, কখনো আবার সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবেও খেলেন। কাল সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে যেমন তাঁকে এই পজিশনেও খেলতে দেখা গেছে। আবার খেলা তৈরিও করেছেন। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে কাসেমিরোর গোলটি যেমন এসেছে তাঁর পাস থেকে। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক সতীর্থকে সুবিধাজনক জায়গায় দেখে বুটের বাইরের অংশ দিয়ে দেওয়া দারুণ পাসে গোলের সুযোগ করে দেন। এই যে একের মধ্যে ‘তিন’ ভূমিকা রদ্রিগোর, তবুও কিন্তু তাঁর গোল করার বিশেষ ইচ্ছাটা বোঝা গেল রোনালদোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে।

ব্রাজিলের হয়ে দুবার বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি রোনালদোকে রদ্রিগো যে ভক্তিটুকু করলেন, তা দেখে কারও এমন মনে হলে দোষ দেওয়া যায় না। সাক্ষাৎকার শেষে রোনালদোর পা দুটো ছুঁয়ে দেখেন রদ্রিগো। তারপর এমনভাবে নিজের পা দুটো মালিশ করলেন যে, দেখে মনে হবে, রোনালদোর পায়ের ‘জাদু’ নিজের মাখিয়ে নিলেন!

ফিফার ওয়েবসাইটে রোনালদোকে দেওয়া রদ্রিগোর সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়েছে। কাল রাতে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিতের পর ম্যাচের জার্সি ও বুট পরেই রোনালদোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বসেন ২১ বছর বয়সী এই উইঙ্গার। রদ্রিগোর ক্যারিয়ারে এটাই প্রথম বিশ্বকাপ আর এই টুর্নামেন্টে আগের ম্যাচেই তাঁর অভিষেক হয়েছে।

রদ্রিগোর মনের অবস্থা বুঝতে পেরেই হয়তো রোনালদো নিজের প্রসঙ্গ টানলেন। শোনালেন, মাত্র ১৮ ছুঁই ছুঁই বয়সে ’৯৪ বিশ্বকাপে খেলার স্মৃতি। সেবার রোনালদো ব্রাজিলের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকলেও তাঁকে খেলানো হয়নি। জাতীয় দলের সঙ্গে রেখে তাঁকে পরিণত করে তোলাই ছিল ব্রাজিলিয়ান টিম ম্যানেজমেন্টের লক্ষ্য।

সেই রোনালদো পরের বিশ্বকাপে খেলেছেন ফাইনাল। রহস্যজনক অসুস্থতায় ব্রাজিলকে জেতাতে পারেননি। ৩-০ গোলের জয়ে শিরোপা জিতে নেয় ফ্রান্স। চার বছর পর জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে শিরোপা জিতিয়ে শাপমোচন করেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই স্ট্রাইকার। ২০০৬ বিশ্বকাপে গিয়ে এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডও গড়েন, যা পরে মিরোস্লাভ ক্লোসা নিজের করে নেন। কাল সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিলের ম্যাচেও গ্যালারিতে ছিলেন রোনালদো। কাকা, রবার্তো কার্লোস ও কাফুদের সঙ্গে বসে ব্রাজিলের জয় দেখেন সাবেক এই স্ট্রাইকার

ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ নিয়ে রোনালদোকে নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে সবার আগে মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন রদ্রিগো, ‘আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারাটা আমার জন্য আনন্দের। দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হচ্ছে। প্রতিদিনই শিখছি।’ নেইমার চোট পাওয়ায় রদ্রিগোর একাদশে খেলার সম্ভাবনা তৈরি হলেও তাকে বদলি হিসেবে মাঠে নামান ব্রাজিল কোচ তিতে।

রদ্রিগো জানালেন, কোচ যখনই চাইবেন তখনই তিনি মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত। কারণ ‘এটা বিশ্বকাপ।’ নেইমারকে মিস করলেও রদ্রিগো মনে করেন, বিশ্বকাপ অনুতাপ-অনুশোচনার জায়গা নয়। এখানে পারফর্ম করেই জিততে হয়। নেইমারকে ছাড়া বিশ্বকাপে আগেও খেলেছে ব্রাজিল। রদ্রিগো তাই মনে করেন, সমস্যা হবে না।

সাক্ষাৎকারের শেষে রদ্রিগোকে শুভকামনা জানিয়ে তাঁর সঙ্গে হাত মেলান রোনালদো। রদ্রিগো এরপর ওই কাণ্ডটি করে বসেন। দুটি হাত দিয়ে রোনালদোর দুই পায়ের হাঁটু থেকে নিচ পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখেন এবং তারপর হাত দুটো নিজের পায়ে মালিশ করেন।

সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে গোল বানিয়েছেন রদ্রিগো
ছবি: রয়টার্স

খেলোয়াড়ি জীবনে স্টেপ ওভার ও ড্রিবলিংয়ে প্রতিপক্ষের বক্সে দুই পা ছুরির মতো চালানো রোনালদো এ সময় হো হো করে হেসে ওঠেন। রদ্রিগোর আচরণে কিংবদন্তি যে মজা পেয়েছেন, তা বলাই বাহুল্য।