মেসি–রোনালদো–নেইমাররা এবার কোন ঠিকানায়
দলবদলের বাজারে নেলসন ম্যান্ডেলার বিখ্যাত একটি মন্তব্য প্রায়ই উচ্চারিত হয়—‘শুধু মুক্ত মানুষই আলোচনায় বসতে পারে, বন্দীরা কখনো চুক্তি করতে পারে না।’ ক্লাব ফুটবলের জগতে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়েরা একেকজন বন্দীর মতো। চুক্তির মেয়াদ শেষ ছয় মাসে ঢোকার আগে অন্য কোনো ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি বহুদূর, দলবদলের আলোচনাই করা যায় না। চুক্তির শেষ অর্ধবছর তাই ফুটবলারদের জন্য ‘বাক্স্বাধীনতা’ ফিরে পাওয়ার সময়। নতুন ঠিকানা খুঁজে নেওয়ার সময়।
প্রতি দলবদল মৌসুমেই কিছু না কিছু খেলোয়াড়ের জন্য এমন সময় এলেও ২০২৫ হতে যাচ্ছে বিশেষ বছর। এ বছরই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে একগাদা নামী ফুটবলারের। যে খেলোয়াড়দের ভিড়ে লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমার থেকে শুরু করে মোহাম্মদ সালাহ, কেভিন ডি ব্রুইনা, ভার্জিল ফন ডাইকের মতো বড় সব নামও আছে।
৩৯ বছর বয়সী রোনালদো, ৩৭ বছরের মেসি আর ৩২ পেরোনো নেইমারদের কেউই এখন ইউরোপীয় লিগে খেলেন না। সম্ভাব্য পরবর্তী ক্লাবের নাম হিসেবে শীর্ষ পাঁচ লিগের আলোচনাও জোরালো নয়। তবু নামগুলো রোনালদো, মেসি, নেইমার বলেই কৌতূহল অনেকের। সৌদি প্রো লিগে খেলা রোনালদোর চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে জুনে। এই মুহূর্তে ফুটবলে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া (২০ কোটি ইউরোর বেশি) এই তারকা ফরোয়ার্ড চুক্তি নবায়ন করবেন কি না, এখনো স্পষ্ট নয়। গত মাসে দুবাইয়ে গ্লোব সকার অ্যাওয়ার্ডে ভবিষ্যৎ প্রশ্নে পাঁচবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী শুধু বলেছেন, ‘আগামীতে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে।’
জিজ্ঞেস করলে একই কথা হয়তো মেসিও বলবেন। ২০২৩ সালে ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়া আর্জেন্টাইন তারকার চুক্তি আছে ২০২৫ এমএলএস পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রের লিগটি ইউরোপ বা সৌদি আরবের মতো জুলাই–জুন চক্রে চলে না, ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়ে নভেম্বরে শেষ হয়। মেসির চুক্তিও ওই পর্যন্তই। ২০২২ বিশ্বকাপের পর থেকে ‘মনের আনন্দে খেলে যাচ্ছি’ বলে চলা মেসি ২০২৬–এও মায়ামিতে আনন্দের খোঁজে থাকবেন কি না, আপাতত তা অজানা। ট্রান্সফার মার্কেটে যাঁর দাম দেখাচ্ছে ২ কোটি ইউরো, সেই মেসিকে অবশ্য আগামী বছরও রেখে দিতে চান ইন্টার মায়ামির সহ মালিক জর্জ ম্যাস। সামনের বছর সেখানে ফিফা বিশ্বকাপ আছে বলে মেসি হয়তো থেকেও যেতে পারেন।
মেসির মায়ামি ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনার সমান্তরালে নেইমারের সেখানে যাওয়ার আলোচনাও আছে। মেসির সঙ্গে একই সময়ে পিএসজি ছেড়ে যাওয়া এই ব্রাজিলিয়ান এখন সৌদি প্রো লিগের দল আল হিলালের খেলোয়াড়। যদিও চোটের কারণে বেশির ভাগ সময় মাঠের বাইরে থাকায় গত দেড় বছরে খেলেছেন মাত্র ৭ ম্যাচ। শিগগিরই মাঠে ফেরার অপেক্ষায় থাকা নেইমারের আল হিলাল অধ্যায়ের সমাপ্তি অনেকটাই নিশ্চিত। অপেক্ষা নতুন ঠিকানা মায়ামি হবে, নাকি ব্রাজিলেরই কোনো ক্লাব।
নেইমারের সৌদি আরব ছাড়া যখন অনেকটাই নিশ্চিত, তখন দেশটিতে নতুন তারকা হিসেবে পা পড়তে পারে মোহাম্মদ সালাহর। ৩৩ বছর বয়সী এই লিভারপুল তারকার চুক্তি শেষ হচ্ছে জুনে। প্রিমিয়ার লিগে ক্লাব রেকর্ড ১৭০ গোল করা এই ফরোয়ার্ডকে নিতে আগ্রহী আল হিলাল ও আল ইত্তিহাদ। অবশ্য ফ্রান্সের পিএসজিও বেশ আগ্রহী; যারা মেসি, নেইমারের পর কিলিয়ান এমবাপ্পেকেও হারিয়ে এখন বড় নামের অভাবে ভুগছে।
সালাহর মতো লিভারপুল ছাড়ার সম্ভাবনা আছে ভার্জিল ফন ডাইক ও ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার–আর্নল্ডেরও। এ দুজনের চুক্তির মেয়াদও জুনেই শেষ হচ্ছে, চুক্তি নবায়নের খবরও জোরালো নয়। আলেকান্ডার–আর্নল্ডের জন্য তো রিয়াল মাদ্রিদ এরই মধ্যে একবার দরপ্রস্তাবও করেছে, যা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ৩৩ বছর বয়সী সেন্টার ব্যাক ফন ডাইক অবশ্য শেষ মুহূর্তে অ্যানফিল্ডে থেকেও যেতে পারেন। ক্লাবের পক্ষ থেকে একটা প্রস্তাব নাকি দেওয়া হয়েছে।
ক্লাবের প্রতি অবদানের কারণে প্রস্তাব পাওয়ার দাবিদার ম্যানচেস্টার সিটির কেভিন ডি ব্রুইনাও। ২০১৫ সালে সিটিতে যোগ দেওয়া এই বেলজিয়ান সামনের জুনে ৩৪ পূর্ণ করতে চলেছেন। চোটপ্রবণতার সঙ্গে তাঁর খেলার ধারও কমেছে বলে নতুন কোনো ঠিকানা খুঁজে নিতে পারেন এই মিডফিল্ডার।
নতুন বছরের প্রথম দিনে দলবদলের বাজারে ঢোকা খেলোয়াড়ের মধ্যে আরও আছেন লেরয় সানে, জশুয়া কিমিখ, সন হিউন মিন, জোনাথন ডেভিড, আলফনসো ডেভিসরা। তবে ফুটবল–বিশ্বের দৃষ্টি বেশি থাকার কথা মেসি–রোনালদো–নেইমারদের দিকেই। তারকাদের বাজারে বিকিকিনি হওয়া বলে কথা!