মৌসুম শেষেই সিটি ছাড়বেন ডি ব্রুইনা
ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে তাঁর বর্তমান চুক্তি শেষ হবে এ বছরের ৩০ জুন। গুঞ্জন ছিল, সেই চুক্তি আর নবায়ন করতে চান না কেভিন ডি ব্রুইনা। সিটিও আসলে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি ডি ব্রুইনাকে রাখতে। নতুন করে দলটাকে পুনর্গঠন করতে চান সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা।
সেই গুঞ্জনই সত্যি হলো। আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে মৌসুম শেষেই ইতিহাদ ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কিংবদন্তি এই বেলজিয়াম মিডফিল্ডার। ২০১৫ সালে সিটিতে যোগ দেওয়া ৩৩ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার গত ১০ বছরে সিটির হয়ে জিতেছেন ছয়টি প্রিমিয়ার লিগ, একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ, দুটি এফএ কাপ ও পাঁচটি লিগ কাপ।
এক বিবৃতিতে ডি ব্রুইনা বলেছেন, ‘প্রিয় ম্যানচেস্টার, এটা দেখে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কী কথা বলতে চাই। তাই আমি আর কোনো ঘোরপ্যাঁচ না করে সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছি, ম্যানচেস্টার সিটিতে এই কয়েকটা মাসই আমার শেষ।’
সিদ্ধান্তটা নিতে গিয়ে ডি ব্রুইনাকে কতটা আবেগতাড়িত হতে হয়েছে, সেটাও ফুটে উঠেছে বিবৃতিতে, ‘আমরা যারা পেশাদার ফুটবলার, তারা জানি, এই দিনটা একদিন না একদিন আসবেই। সেই দিনটা আজ এসে গেছে। আর আপনাদের অধিকার আছে, সেটা সবার আগে আমার মুখ থেকেই শোনার। ফুটবলই আমাকে আপনাদের কাছে এনেছে, এই শহরে এনেছে। স্বপ্নের পেছনে ছুটতে ছুটতে, আমি কখনো কল্পনাও করিনি এই সময়টা আমার জীবনটাই পাল্টে দেবে। এই শহর, এই ক্লাব, এই মানুষগুলো—আমাকে সব কিছু দিয়েছে। তাই আমারও সবটুকু উজাড় করে না দিয়ে কোনো উপায় ছিল না।’
‘আমরা একসঙ্গে সব কিছু জিতেছি। পছন্দ হোক আর না হোক, বিদায় বলার সময় এসে গেছে। সুরি, রোম, মেসন, মিশেল আর আমি—আমরা চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব, এই শহর আমাদের পরিবারের জন্য যা কিছু করেছে তার জন্য। “ম্যানচেস্টার” শুধু আমাদের সন্তানদের পাসপোর্টেই থাকবে না, থাকবে আমাদের হৃদয়ের গভীরে। এটাই আমাদের সব সময়ের “বাড়ি”। এই শহর, এই ক্লাব, সব কর্মী, সতীর্থ, বন্ধু ও পরিবারের প্রতি আমাদের সীমাহীন কৃতজ্ঞতা—১০ বছরের এই অসাধারণ যাত্রার জন্য। প্রতিটি গল্পেরই একটা শেষ থাকে। আমার জীবনের এই অধ্যায়টা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সেরা। আসুন, বাকি সময়টুকু আমরা একসঙ্গে উপভোগ করি! অসংখ্য ভালোবাসা, কেডিবি।’
সিটির হয়ে এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩১ ম্যাচ খেলেছেন ডি ব্রুইনা। গোল করেছেন ৪টি, করিয়েছেন আরও ৭টি। তাঁর ক্যারিয়ার গ্রাফের সঙ্গে পর্যালোচনা করলে যা নিতান্তই সাদামাটা। চোট তাঁকে সাম্প্রতিককালে বেশ ভুগিয়েছে। ইতিহাদে ১০ বছরের ক্যারিয়ারে ডি ব্রুইনা নিজেকে ক্লাবটির ইতিহাসেই অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসেও অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার মনে করা হয় তাঁকে। সব মিলিয়ে সিটির হয়ে ৪১৩ ম্যাচে ১০৬ গোল তাঁর, করিয়েছেন ১৭৪টি।
আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে সিটি পরে বলেছে, ‘এই গ্রীষ্মে কেভিন ডি ব্রুইনার চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ম্যানচেস্টার সিটি তাকে আবেগঘন বিদায় জানাবে, শেষ হবে এই ক্লাবে তার ১০ বছরের উজ্জ্বল এক অধ্যায়। ক্লাব ও আমাদের সব ভক্তরা মিলে এখন প্রিমিয়ার লিগের সর্বকালের সেরাদের একজনকে যথাযথ শ্রদ্ধা এবং বিদায় জানানোর প্রস্তুতি নেবে।’
এক সংবাদ সম্মেলনে সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা বলেছেন, ‘ডি ব্রুইনা এই ক্লাব-পরিবারের অংশ। আমাদের জন্য এটা খুব কঠিন এক দিন। কারণ, আমাদের একটা অংশ আমাদের ছেড়ে যাবে। এই দেশে খেলা ইতিহাসের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার সে, ম্যানচেস্টার সিটির তো অবশ্যই।’
সিটিতে ডি ব্রুইনার ভাস্কর্য হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন গার্দিওলা।
সিটি ছেড়ে কোথায় যাবেন ডি ব্রুইনা, তা ঠিক এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বিভিন্ন সময় তাঁর পরবর্তী গন্তব্য হিসেবে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের কথা শোনা গেছে।