নবাগত কাইরাত আলমাতি ও পাফোস এফসি নিজেদের দুর্ভাগা ভাবতেই পারে। শুধু তাদের মুখোমুখি লড়াইয়ে কোনো গোল হয়নি। এই দুই দলও গোল উৎসব করতে পারলে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে আজ গোলের অর্ধশত হয়তো হয়েই যেত। কিন্তু বাকি আট ম্যাচ মিলে যা হয়েছে, সেটাই বা কম কী! ৪৩ গোলের (ম্যাচপ্রতি গড়ে ৪.৭৮ গোল) রাতকে নির্দ্বিধায় ‘পাগলাটে’ বলাই যায়।
১৩ মিনিটের ব্যবধানে ৪ গোল আর্সেনালের
বেচারা দিয়েগো সিমিওনের দুই চোখ ছলছল করছিল। তাঁকে এতটা অসহায় সর্বশেষ কবে দেখা গিয়েছিল, মনে করা কঠিন। তাঁর দল আতলেতিকো মাদ্রিদের জালে একের পর এক বল জড়াচ্ছিল আর তিনি সাইড লাইনে পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে দেখছিলেন।
ঘরের মাঠ লন্ডনের এমিরেটস স্টেডিয়ামে ১৩ মিনিটের ব্যবধানে যে আতলেতিকোকে ৪ গোল দিয়েছে আর্সেনাল! অথচ ম্যাচের প্রায় এক ঘণ্টা গোলবন্ধ্যাত্বে কেটেছে।
আতলেতিকা প্রথম ৫০ মিনিট আর্সেনালের চোখে চোখ রেখেই লড়াই করেছে। ৪৮ মিনিটে হুলিয়ান আলভারেজের দূরপাল্লায় বুলেট গতির শট ক্রসবারে বাধা না পেলে স্প্যানিশ ক্লাবটিই এগিয়ে যেতে পারত।
কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরেই দৃশ্যপট বদলে যায়। ৫৭ মিনিটে প্রথম গোলটা করেন গাব্রিয়েল মাগালিয়ায়েস। ৬৪ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটা আসে আরেক ব্রাজিলিয়ান গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লির সৌজন্যে।
দুই গোলে পিছিয়ে পড়া আতলেতিকো এরপর হাল ছেড়ে দেয়। এই সুযোগে জোড়া গোল করেন আর্সেনালের সুইডিশ স্ট্রাইকার ভিক্টর ইয়োকেরেস।
পিএসজির ৭ গোল
এই না হলো চ্যাম্পিয়ন! আগের ম্যাচে চোটজর্জর দল নিয়েও বার্সেলোনাকে তাদের মাঠে হারিয়ে এসেছে পিএসজি। চোট থেকে সেরে ওঠা উসমান দেম্বেলে–দেজিরে দুয়ে আজ দলে ফিরেছেন। পিএসজিও করেছে গোল উৎসব। জার্মান ক্লাব বায়ার লেভারকুসেনের জাল সাতবার কাঁপিয়েছে প্যারিসিয়ানরা, নিজেরা খেয়েছে ২ গোল।
বে অ্যারেনায় ম্যাচের ৭ মিনিটে উইলিয়ান পাচোর গোলে এগিয়ে যায় পিএসজি। আলেক্স গার্সিয়া ৩৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরান।
এর আগেই লেভারকুসেন ও পিএসজি ১০ জনের দলে পরিণত হয়। ৩৩ মিনিটে রবার্ট আনড্রিখ ও ৩৭ মিনিটে ইলিয়া জাবারনি লাল কার্ড দেখেন।
বিরতিতে যাওয়ার আগেই ব্যবধান ৪–১ করে ফেলে পিএসজি। দেজিরে দুয়ে দুটি ও খিচা কাভারাস্কেইয়া এক গোল করেন।
দ্বিতীয়ার্ধে পিএসজির হয়ে স্কোরশিটে নাম লেখা নুনো মেন্দেস, উসমান দেম্বলে ও ভিতিনিয়া। লেভারকুসেনের হয়ে আরেকটি গোল করে ব্যবধান কমান আলেক্স গার্সিয়া।
অপ্রতিরোধ্য হলান্ড
কী ক্লাব, কী জাতীয় দল—আর্লিং হলান্ডকে গোল করা থেকে কিছুতেই বিরত রাখা যাচ্ছে না। ভিয়ারিয়ালের মাঠে ম্যানচেস্টার সিটির ২–০ ব্যবধানের জয়ে নরওয়ের এই তারকা স্ট্রাইকার করেছেন প্রথম গোল।
এর মধ্য দিয়ে টানা ১২ ম্যাচে গোল করে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর রেকর্ড ছুঁয়েছেন হলান্ড। এই মৌসুমে এ নিয়ে তিনি ১৪ ম্যাচেই ২৪ গোল ও ৩ অ্যাসিস্ট করে ফেললেন।
ম্যানচেস্টার সিটির দ্বিতীয় গোলটা করেছেন বের্নার্দো সিলভা।
নাপোলির লজ্জা
ম্যাচ শেষে কেভিন ডি ব্রুইনা স্কট ম্যাকটমিনের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলেন। তাঁদের দল নাপোলির ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেল, তা যেন বিশ্বাসই হতে চাইছিল না।
নেদারল্যান্ডসের ক্লাব পিএসভি আইন্দহফেনের মাঠে ম্যাকটমিনের গোলে নাপোলিই এগিয়ে গিয়েছিল। স্বাগতিক দলকে সেটাই বোধ হয় তাতিয়ে দিয়েছিল। ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের এরপর গুনে গুনে ৬ গোল দিয়েছে পিএসভি। ম্যাকটমিনে পরে আরেক গোল করে শুধু ব্যবধানই কমিয়েছেন, দলকে লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি।
আজকের ৬–২ গোলের হারই নাপোলির চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরাজয়। আগের বিব্রতকর রেকর্ডটা ছিল ২০১১ সালে ম্যানচেস্টার সিটি ও ২০২০ সালে বার্সেলোনার বিপক্ষে। দুই দলের কাছেই নাপোলি হেরেছিল ৪–১ গোলে।
আজকের ফল
বার্সেলোনা ৬–১ অলিম্পিয়াকোস
কাইরাত আলমাতি ০–০ পাফোস এফসি
লেভারকুসেন ২–৭ পিএসজি
আর্সেনাল ৪–০ আতলেতিকো মাদ্রিদ
ভিয়ারিয়াল ০–২ ম্যানচেস্টার সিটি
পিএসভি আইন্দহফেন ৬–২ নাপোলি
কোপেনহেগেন ২–৪ বরুসিয়া ডর্টমুন্ড
নিউক্যাসল ৩–০ বেনফিকা
সেঁ জিলোয়াস ০–৪ ইন্টার মিলান