সমর্থকদের মাতিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ড্যাফোডিল, সঙ্গী এআইইউবিও

একমাত্র গোলে জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে স্বাগতিক ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতানভীর আহাম্মেদ

সূর্য মাঝ–আকাশে। প্রচণ্ড রোদেও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই কারও। শেষ বাঁশি বাজতেই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাঠ ভরে গেছে উল্লসিত সমর্থকদের স্রোতে। সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছেন জয়ী খেলোয়াড়দের। নির্দিষ্ট করে বললে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির খেলোয়াড়দের শুভেচ্ছা আর ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন ড্যাফোডিলেরই শিক্ষার্থীরা, যাঁরা তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ গ্রুপ ফাইনালে নিজ দলকে সমর্থন জুগিয়ে গেছেন অকুণ্ঠ।

গত বছর ইস্পাহানি-প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলের প্রথম আসরে ড্যাফোডিল বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্বেই। সাভারের বিরুলিয়ায় নিজেদের মাঠে খেলা, উচ্চাশা ছিল দল অনেক দূর যাবে। কিন্তু সেটা হয়নি। এবার টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসরও ড্যাফোডিলের মাঠেই হচ্ছে এবং গতবারের হতাশা ভুলে অনেক দূর যাওয়ার আশা দলটির। সেই লক্ষ্য পূরণের পথে আজ শেষ দল হিসেবে টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বে (কোয়ার্টার ফাইনাল) উঠেছে ড্যাফোডিল। আজই সপ্তম দল হিসেবে শেষ আটে ওঠে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এআইইউবি)।

ঢাকা অঞ্চলের শেষ দিনে তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ গ্রুপ ফাইনালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিকে (এআইইউবিএটি) ১-০ গোলে হারিয়েছে ড্যাফোডিল। ৪৫ মিনিটে প্রত্যাশিত গোল ধরা দিতেই মাঠের চারপাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখা ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। গোলটাও হয়েছে দেখার মতো। বক্সের ওপর থেকে ফ্রি কিকে সরাসরি বল জালে পাঠান মাহবুবুর রহমান (জুয়েল)। প্রিমিয়ার লিগে আরামবাগ, পুলিশ, শেখ রাসেল, শেখ জামালের মতো দলে খেলা মাহবুবুরের এই গোলই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। যদিও ড্যাফোডিলের প্রাধান্য ছিল প্রশ্নাতীত। ম্যাচসেরাও হয়েছেন মাহবুবুরই। টুর্নামেন্টে এটি তাঁর দ্বিতীয় ম্যাচসেরার পুরস্কার।

ম্যাচসেরা মাহবুবুর রহমান
প্রথম আলো

ড্যাফোডিলের হয়ে গতকাল দ্বিতীয় গ্রুপ ম্যাচে খেলেছিলেন জাতীয় দলের ডিফেন্ডার রহমত মিয়া। দলটির ৮-০ গোলের জয়ের শেষ গোলটি করেন রহমত এবং ম্যাচসেরাও হয়েছিলেন তিনি। রহমত আজ অবশ্য গ্রুপ ফাইনালে খেলেননি আন্তবাহিনী খেলা থাকায়। তবে খেলেছেন ঢাকা মোহামেডানের লেফট ব্যাক দীপু, স্টপার রাজীব হোসেন, চট্টগ্রাম আবাহনীর দুই ফরোয়ার্ড ফাহিম মোর্শেদ ও সোহানুর রহমান।

আরও পড়ুন

এআইইউবিএটিতে জাতীয় পর্যায়ের কোনো ফুটবলার নেই। তবু তারা দারুণ লড়াই করেছে। পোস্টের নিচে আস্থাশীল ছিলেন তন্ময় আহমেদ। কয়েকটি দারুণ সেভ করেছেন। প্রথমার্ধের শেষ দিকে তন্ময়ের নামে স্লোগানও তুলে দেয় এআইইউবিএটির সমর্থকেরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিতে পারেননি তন্ময়।
এআইইউবিএটি জার্সিতে খেলেছেন সেনেগাল ও কমরোসের দুই ফুটবলার। একই দলের জার্সিতে দুই ভুটানি ফুটবলার নেমেছেন শেষ দিকে। কিন্তু দিনটা এআইইউবিএটির ছিল না। ড্যাফোডিলের কাছে হেরে তাদের বিদায় নিয়েছে টুর্নামেন্ট থেকে।

ইউআইইউকে ১১–০ গোলে হারিয়েছে এআইইউবি
প্রথম আলো

ড্যাফোডিল-এআইইউবিএটি ম্যাচে যতটা লড়াই হয়েছে, এআইইউবি-ইউআইইউ ম্যাচে ছিল না এর কিছুই। এআইইউবির সামনে ১১-০ গোলে উড়ে গেছে ইউআইইউ। এবারের টুর্নামেন্টে এটিই ঢাকা পর্বে সবচেয়ে বড় জয়। এর আগে ৯-০ হয়েছে ২ ম্যাচে, ৯-১ এক ম্যাচে। তবে রাজশাহী অঞ্চলে এক ম্যাচ দেখেছে আরও বেশি গোল—১৬-০।

এআইইউবির বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই বাংলাদেশ প্রিমিয়াম লিগ ও জাতীয় বয়সভিত্তিক দলে খেলছেন। মোহামেডানের ফরোয়ার্ড মইনুল ইসলাম খান (মইন), ফকিরেরপুলের মিডফিল্ডার আরিফুল হক, রহমতগঞ্জের মিডফিল্ডার আক্কাস আলী, মোহামেডান লেফট ব্যাক আজিজুল হক খেলেছেন আজ।

আরও পড়ুন

দুটি করে গোল তাজওয়ার বিন কাশেম, ফয়েজ আহমেদ ও তুষারের। একটি গোল রাশেদুল, রাব্বির। তবে সবাইকে পেছনে ফেলে হ্যাটট্রিক করে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন মইনুল ইসলাম। ২৪-৩৫—এই ২১ মিনিটের মধ্যে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন সম্প্রতি নেপালে সাফ অনূর্ধ্ব–২০ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের তরুণ এই ফরোয়ার্ড।

ম্যাচসেরা মইনুল ইসলাম
প্রথম আলো

দুটি ম্যাচের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন টুর্নামেন্টের টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ইমতিয়াজ সুলতান জনি ও ইস্পাহানি টি লিমিটেডের বিপণন ম্যানেজার এ এস এম হাসান।

কোয়ার্টার ফাইনাল ৫ ও ৬ ডিসেম্বর। ৮ ডিসেম্বর সেমিফাইনাল, ৯ ডিসেম্বর ফাইনাল।

কোয়ার্টার ফাইনালের আট দল

সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ফারইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, এআইইউবি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
আরও পড়ুন