‘ক্লাবগুলোকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে’
বাংলাদেশের ফুটবলে জাতীয় দলের ম্যাচ মানেই ঘরোয়া খেলা বন্ধ। অনূর্ধ্ব-২৩ দলের খেলা থাকলেও ঘরোয়া ফুটবলের ঝাঁপি বন্ধ। মাসখানেক তো বন্ধ থাকেই। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি, বরং বন্ধ থাকার সময় দেড় মাসে পৌঁছেছে।
প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্ব শেষ হয়েছিল ২৫ জানুয়ারি। এরপর দ্বিতীয় পর্বের এক রাউন্ড হয়েছে ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি। ২৫ মার্চ শিলংয়ে জাতীয় দলের ভারত ম্যাচ শেষে লিগ শুরু হবে ১১ এপ্রিল। প্রথম পর্বের পর পুরোদমে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হতে আড়াই মাস পার!
ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, দলবদলের জন্য দুই ধাপে সর্বোচ্চ ১৬ সপ্তাহ নেওয়া যায়। বাফুফে চাইলে তা কমিয়েও আনতে পারত। কিন্তু বাফুফে সর্বোচ্চ সময়ই নিয়েছে বরাবর। জাতীয় দলের খেলা না থাকলেও এবার দ্বিতীয় পর্ব শেষে মধ্যবর্তী দলবদলের জন্য বিরতি পড়ত ২৮ দিনের। মধ্যবর্তী দলবদলের সময়টা বাদ দিলেও জাতীয় দলের একটা মাত্র ম্যাচের জন্য লিগ বন্ধ থাকছে ৪৭ দিন!
৫ মার্চ জাতীয় দলের সৌদি আরব গিয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা। আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগে প্রস্তুতির দরকার আছে। কিন্তু সেটা কত দিন? লিগ চললে খেলোয়াড়েরা ম্যাচেই থাকতেন, তাই জাতীয় দলের প্রস্তুতি সর্বোচ্চ ৭ থেকে ১০ দিনের হতে পারত মনে করছেন অনেকে। বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত তাদের আইএসএল বন্ধ করে ফুটবলারদের বিদেশে পাঠায়নি অনুশীলনের জন্য। আইএসএল চলবে ১২ মার্চ পর্যন্ত।
এভাবে লম্বা সময় লিগ বন্ধ রাখায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্লাব। মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ তো বলেই বসছেন, ‘এই লম্বা বিরতি দিয়ে ক্লাবগুলোকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’
তাঁর সংযোজন, ‘পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন সূচি এবং উইন্ডো চালু করেছে বাফুফে। কিন্তু জাতীয় দলের ম্যাচের জন্য পৃথিবীর কোথাও এত বড় বিরতি হয় বলে জানি না। ক্লাবগুলোকে সাপোর্ট দিতে হবে। নইলে ক্লাব হারিয়ে যাবে।’
আমার মনে হয়, প্রিমিয়ার লিগটা লম্বা সময় বন্ধ রাখার সুবিধা খুব একটা পাব না আমরা। বরং প্রস্তুতির জন্য সপ্তাহ খানেক সময় নিলে সবার জন্য ইতিবাচক হতোকোচ মারুফুল হক
লম্বা বিরতির কারণে সবচেয়ে সমস্যা হয় ছোট ক্লাবগুলোর। ফকিরেরপুল ইয়ংমেনসের ম্যানেজার মনির হোসেন যেমন বলছেন, ‘ক্লাবের আয় নেই। কিন্তু লিগের সময়সীমা বাড়লে টাকা তো দিতে হবে খেলোয়াড়দের। সেই টাকা কোথায় পাব আমরা। এই বিরতিতে ক্যাম্প বন্ধ রেখেছি। কিন্তু খেলোয়াড়েরা ফিরবে ফিটনেস হারিয়ে। আবার নতুন করে শুরু করতে হবে সব।’
ফর্টিস এফসির ম্যানেজার ও জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার রাশেদুল ইসলাম মনে করছেন, ভারত ম্যাচের আগে লিগে আরও কয়েকটা রাউন্ড হতে পারত। এতে খেলোয়াড়েরা ম্যাচে ফিট থাকত।
মৌসুমের মাঝপথে প্রায় এক মাস প্রস্তুতি নেওয়া জাতীয় দলের জন্য ঠিক নয় মনে করছেন দেশের অন্যতম সেরা কোচ মারুফুল হক। তাঁর যুক্তি, ‘অতীতে অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি একজন খেলোয়াড় যে ফিটনেস নিয়ে জাতীয় দলে গেছে, ফেরার সময় তা কমে গেছে। এর কারণ হলো, মৌসুমের মাঝখানে কন্ডিশনিং করলে খেলোয়াড়ের ফিটনেস ও পারফরম্যান্স খারাপ হয়। এটা জিপিএস দিয়ে আমি দেখেছি। মুখস্থ বলছি না।’ তারপরও লিগ বন্ধ করে এক মাস প্রস্তুতি নেওয়া যেত, যদি বড় কোনো টুর্নামেন্ট থাকত সামনে। অথবা কোচ-খেলোয়াড় নতুন হতেন।
শুধু একটা ম্যাচের জন্য এমন লম্বা সময়ের প্রস্তুতি আদর্শ নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হামজাই তো নেই।জাহিদ হোসেন এমিলি
কিন্তু এখানে তো তা নয়। মারুফুল বলছেন, ‘এখানে কোচের দর্শন ও খেলোয়াড়দের সক্ষমতা বোঝাপড়ার বিষয়টি সব পক্ষের কাছেই পরিষ্কার। তরপরও যদি দলের কম্বিনেশনের বিষয়টা থেকে থাকে, এটাও তো এই ক্যাম্পে সম্ভব নয়। কারণ, দুজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় শেষ মুহূর্তে দলের সঙ্গে যোগ দেবে। তাই আমার মনে হয়, প্রিমিয়ার লিগটা লম্বা সময় বন্ধ রাখার সুবিধা খুব একটা পাব না আমরা। বরং প্রস্তুতির জন্য সপ্তাহ খানেক সময় নিলে সবার জন্য ইতিবাচক হতো।’
চট্টগ্রাম আবাহনীর টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সাবেক ফুটবলার জাহিদ হোসেন এমিলির মতও একই। সপ্তাহখানেকের বেশি লিগ বন্ধ রাখার কার্যকারিতা দেখেন না তিনিও, ‘ শুধু একটা ম্যাচের জন্য এমন লম্বা সময়ের প্রস্তুতি আদর্শ নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হামজাই তো নেই। পুরো দল নিয়ে ক্যাম্প করলে না হয় একটা কথা ছিল। তাই আমার মতে, একটা ম্যাচের জন্য জাতীয় দল সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ নিতে পারত প্রস্তুতির জন্য।’