ব্যালন ডি’অর না জিতে যে ‘অভিশাপ’ এড়ালেন মেসি–রোনালদো

লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোছবি: টুইটার

কথাটা স্রেফ রসিকতা। তবে এভাবে ভাবা তো যায়ই—করিম বেনজেমার হাতে ব্যালন ডি’অর দেখে মুখ টিপে হেসেছেন লিওনেল মেসি! ‘ফ্রান্স ফুটবল’ ব্যালন ডি’অর দেওয়ার নিয়ম পাল্টানোয় এবার পুরস্কারটির জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় তাঁর জায়গা হয়নি। তাতে এক অর্থে মেসির খুশিই হওয়ার কথা। সামনেই যে বিশ্বকাপ!

কেন এবং কীভাবে? অবধারিতভাবেই এ দুটি প্রশ্ন উঠবে। কেন—সেই প্রশ্নের উত্তরটা আগে দেওয়া যাক। ব্যালন ডি অ’রের একটা অভিশাপ আছে। ব্যালন ডি’অর জিতে তার পরপরই কিংবা পরের বছর কেউ কখনো বিশ্বকাপ জিততে পারেনি।

গত বছর সপ্তমবারের মতো বর্ষসেরা ও ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের এ পুরস্কার জিতেছিলেন আর্জেন্টাইন তারকা। ‘ফ্রান্স ফুটবল’ ব্যালন ডি’অর দেওয়ার নিয়মে এক বছরের হিসাব থেকে সরে এসে শুধু মৌসুমের পারফরম্যান্স বিবেচনার ঘোষণা দেয়। এতে কাতার বিশ্বকাপের আগেই চলে আসে ২০২২ ব্যালন ডি’অরের মুহূর্ত আর তাতে বর্ষসেরার এই ট্রফি উঠল ফ্রান্সের করিম বেনজেমার হাতে।

অর্থাৎ ব্যালন ডি’অর অভিশাপের ‘সূত্র’ অনুযায়ী, কাতার বিশ্বকাপের আগে পুরস্কারটি যেহেতু বেনজেমা পেলেন, তাই ফ্রান্সের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুট ধরে রাখার কোনো আশা নেই। কিন্তু ২০২০ সালের মতো এবার পুরস্কারটি যদি না দেওয়া হতো? তাহলে সবশেষ ব্যালন ডি’অরজয়ী হিসেবে কাতার বিশ্বকাপে পা রাখতে হতো মেসিকে। তখন কী হতো!

কাতারেই মেসির শেষ বিশ্বকাপ। সব জিতলেও এখনো এই ট্রফি অধরা থেকে গেছে তাঁর ক্যারিয়ারে। আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা নিশ্চয়ই আর ভাবতে পারছেন না!

আচ্ছা, ভাবতে হবে না। শুধু মেসি একাই নয়, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোরও ব্যালন ডি’অর না জিতে কীভাবে খুশি হওয়ার কথা, সে ব্যাখ্যায় যাওয়া যাক। কাল ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে ২০তম হন পর্তুগালের তারকা রোনালদো। স্বাভাবিকভাবেই ব্যালন ডি’অরজয়ীরা যেহেতু তার পরপরই কিংবা পরের বছর বিশ্বকাপে দেশের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে না, তাই রোনালদোর একটা সান্ত্বনার জায়গা তো আছেই।

কিন্তু মেসির আবার অন্য এক হিসাবে ভয়টা থেকেই যাচ্ছে। বেনজেমা এবার বিশ্বকাপ শুরুর আগের মাসে ব্যালন ডি’অর জিতলেও গত বছর তো মেসিই জিতেছেন। তাই হিসাবটা হচ্ছে, মেসি আগের বছর ব্যালন ডি’অর জিতে এ বছর পা রাখবেন বিশ্বকাপে—এভাবে যাঁরা বিশ্বকাপে এসেছেন, তাঁদের কেউ যে দলীয় চূড়ান্ত সাফল্যটা পাননি!

কাতার বিশ্বকাপের আগে ব্যালন ডি’অর জিতলেন ফ্রান্সের করিম বেনজেমা
ছবি: এএফপি

১৯৫৮ বিশ্বকাপের আগের বছর ব্যালন ডি’অর জিতলেন আলফ্রেড ডি স্টেফানো। তত দিনে স্প্যানিশ জাতীয়তা পেয়ে গিয়েছিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার। কিন্তু ’৫৮ বিশ্বকাপে স্পেন চূড়ান্তপর্বেই উঠতে পারল না! দ্বিতীয় হওয়া বিলি রাইটের ইংল্যান্ড থেমে গিয়েছিল গ্রুপ পর্বেই। ১৯৬১ সালে ব্যালন ডি’অরজয়ী ওমর শিভোরির ইতালি ’৬২ চিলি বিশ্বকাপে বাদ পড়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই।

ইউসেবিওর তবু কপাল ভালো। ১৯৬৫ সালে ব্যালন ডি’অর জিতে পরের বছর ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছিল তাঁর দল পর্তুগাল। ১৯৭০ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল ইতালি। আগের বছর ব্যালন ডি’অর জেতেন ইতালির কিংবদন্তি জিয়ান্নি রিভেরা। ১৯৭৪ বিশ্বকাপে একই কপাল মেনে নিতে হয় ইয়োহান ক্রুইফের নেদারল্যান্ডসেরও। আগের বছরই ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন ক্রুইফ।

১৯৭৮ বিশ্বকাপে ডেনমার্কের অ্যালান সিমনসেন, ১৯৮২ স্পেন বিশ্বকাপে জার্মানির কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে, ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে ফ্রান্সের মিশেল প্লাতিনি, ১৯৯০ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের মার্কো ফন বাস্তেন, ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ইতালির রবার্তো বাজ্জিওকেও একই ভাগ্য মেনে নিতে হয়। সবাই বিশ্বকাপের আগের বছর ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন। কিন্তু পরের বছর দলের হয়ে বিশ্বকাপ জিততে পারেননি।

চলে আসুন ১৯৯৭ ব্যালন ডি’অরে। ব্রাজিলের রোনালদোর হাতে উঠল ট্রফি। পরের বছর ফ্রান্সে বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলল ব্রাজিল। কিন্তু ফিরতে হলো খালি হাতে। ২০০১ সালে ব্যালন ডি’অর পেলেন ইংল্যান্ডের মাইকেল ওয়েন। পরের বছর জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়ে ইংল্যান্ড। রোনালদিনিও ২০০৫ সালে ব্যালন ডি’অর জেতার পরের বছর ব্রাজিলও বাদ পড়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে।

২০০৯ সালে ব্যালন ডি’অর জিতলেন মেসি। পরের বছর বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাও কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ! এরপর ২০১৩ সালে পুরস্কারটি জিতলেন রোনালদো এবং পরের বছর বিশ্বকাপে পর্তুগালের যাত্রা থামল গ্রুপ পর্বেই। সবশেষ ২০১৮ বিশ্বকাপের আগের বছরও পুরস্কারটি উঠেছে রোনালদোরই হাতে। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপে কী দেখা গেল? শেষ ষোলো থেকে বাদ পর্তুগাল।

তবে মেসি যুক্তি দিতে পারেন, বিশ্বকাপের আগে সবশেষ ব্যালন ডি’অর জয়ের হিসাব যেহেতু করা হচ্ছে, তাই এই অভিশাপে পড়ার ঝুঁকিতে তিনি নন, বেনজেমাই! কাতারে ২০ নভেম্বর শুরু বিশ্বকাপ।