সাবিনাদের ‘বিদ্রোহ’, বাফুফে বলছে—‘কোনো কথা চলবে না’
কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে সাবিনা খাতুনদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছিল গত অক্টোবরে কাঠমান্ডুতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ চলার সময়। মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা তখন বলেছিলেন, কোচ সিনিয়র খেলোয়াড়দের পছন্দ করেন না। তাঁর এই অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল বাংলাদেশ দলে। বাইরের কারও ইন্ধনে মেয়েরা এমন করছেন বলে অভিযোগ তোলেন বাটলার। সেই বাটলারের অধীনেই সাফ শিরোপা ধরে রাখে বাংলাদেশ।
কিন্তু সাফল্যের পরও শান্তির পতাকা ওড়েনি। মেয়েরা মেনে নিতে পারেননি বাটলারকে। বাটলারকে আর কোচ হিসেবে চান না, এমন কথাও তাঁরা সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছিলেন। তবে বাফুফে সেটিকে গুরুত্ব না দিয়ে বাটলারের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করেছে। নতুন চুক্তির পর কোচ ঢাকায় ফিরেছেন গত সোমবার।
কোচ ফেরার পর আবার সেই দ্বন্দ্বের খবর বাইরে আসছে। ফুটবলাঙ্গনে আজ রটে যায়, বাটলারের অধীনে অনুশীলন বয়কট করেছেন সাবিনারা। তবে বয়কটের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেছেন নারী দলের মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা চাকমা। বাফুফে ভবনের সামনে আজ বিকেলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বয়কট নয়, সূচিতে আজ অনুশীলনই ছিল না মেয়েদের। তবে তাঁরা জিম করেছেন।
ওদিকে নানা সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বাটলারের ডাকা টিম মিটিংয়ে মেয়েরা নাকি যাননি। তাঁরা একরকম ‘বিদ্রোহ’ করে বসেন। তবে এ নিয়ে বাফুফের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। মেয়েরাও প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। বাফুফের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান, সিরাজগঞ্জ জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল হাসান হিলটন আজ এ বিষয়ে কথা বলেছেন। মেয়েরা এই কোচকে চান না, তাঁরা নাকি অনুশীলন বয়কট করেছেন—এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাফুফে ভবনে চত্বরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘মেয়েদের কথায় তো আর কোচ মনোনয়ন হবে না।’
কামরুল হাসানের কথায়, ‘খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভর করে তো আর ফেডারেশন চলবে না। আমাদের ম্যানেজমেন্ট আছে, নির্বাহী কমিটির সদস্যরা আছেন, তাঁরা সকলে মিলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের কোনো কথা এখানে চলবে না।’
কোচের সঙ্গে মেয়েদের দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে কামরুল হাসানের ভাষ্য, ‘খেলার মধ্যে কিছু ছোটখাটো সমস্যা থাকে, থাকতেই পারে। এটা আমরা দ্রুততম সময়েই মিনিমাইজ করে নেব।’
কিন্তু খেলোয়াড়দের মতামতের যদি গুরুত্ব না থাকে, খেলোয়াড়েরা যদি না খেলেন তাহলে ফুটবল ফেডারেশনের কাজটা কী? এমন প্রশ্নে কামরুল হাসানের উত্তর, ‘খেলোয়াড়দের মতামতের বিষয়টা অন্য জায়গায়। এখানে শৃঙ্খলার বিষয় আছে। অনেক বিষয় আছে। এটার সঙ্গে (কোচ মনোনয়ন) তো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন মিনিমাইজ করবে না।’
কোচ নিয়োগে মেয়েদের মতামতের তাহলে কোনো গুরুত্ব নেই, বিষয়টা কি এমন? প্রশ্ন করলে কামরুল হাসান বলেন, ‘এখানে টোটাল একটা ম্যানেজমেন্ট আছে। সবার সঙ্গে কথা বলে প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি আরব আমিরাতের সঙ্গে তাদেরই মাঠে ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। জুনে এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব। এসব সামনে রেখেই মেয়েদের ক্যাম্প শুরু হয়েছে বাফুফে ভবনে।
কোচ নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই আজ বিকেলে মেয়েদের নিয়ে বসেছিলেন বাফুফের নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার। জানা গেছে, মাহফুজা মেয়েদের পরিষ্কার জানিয়ে দেন, বাটলারের অধীনেই অনুশীলন করতে হবে। কোনোরকম বয়কট বা অন্য কিছু করা যাবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাফুফের এক কর্মকর্তা বলেন, কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড় তাঁদের মতামত চাপিয়ে দিচ্ছেন পুরো দলের ওপর। ওই সিনিয়র খেলোয়াড়দের ওপর বাফুফে ক্ষুব্ধ। ওদিকে এমনও গুঞ্জন রয়েছে, মেয়েরা কঠোর কোনো অবস্থানের দিকে যেতে পারেন, সেটা নাকি হতে পারে গণ অবসরও। যোগাযোগ করলেও এসব বিষয়ে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। খুদে বার্তার উত্তর দেননি কোচ পিটার বাটলারও।
এর মধ্যেই নতুন সমস্যা—মাঠ। কমলাপুর স্টেডিয়ামে নতুন টার্ফ বসানোর কাজ চলেছে। বাটলার আসার আগে বুয়েট মাঠে দু-এক দিন অনুশীলন হয়েছে। কিন্তু বুয়েট মাঠ শক্ত। বিকল্প হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতে চান বাটলার। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বঙ্গবন্ধুতে অনুশীলনের চেষ্টা করছে বাফুফে।