হামজাদের নিয়ে কেন দলকে সতর্ক করলেন সিঙ্গাপুর কোচ
ছয় মাসে ছয় ম্যাচ—জয়হীন সেই দুঃসময় যেন ঘনকালো মেঘ হয়ে জমে ছিল সিঙ্গাপুর ফুটবলের আকাশে। চারটি হার, দুটি ড্র; গোলের খরা, আত্মবিশ্বাসে ভাটা—সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত এক সময় পার করছিল ‘দ্য লায়ন্স’রা।
অবশেষে সেই অন্ধকারে খানিকটা আলো ছড়াল ৫ জুন রাতে। সিঙ্গাপুরের বিশান স্টেডিয়ামে ২ হাজার ২৯৭ দর্শকের সামনে মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে হারিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলল সিঙ্গাপুর। এটা শুধু জয় নয়, এটা ছিল আত্মবিশ্বাস ফেরানোর লড়াই। গোলের ক্ষুধা ফিরে পাওয়ার সংগ্রাম। আর এই জয়েই শুরু হলো বাংলাদেশের বিপক্ষে ঢাকার মাটিতে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের প্রস্তুতির শেষ অধ্যায়ও
সিঙ্গাপুরের এই ‘ফেরা’র গল্পের নায়ক ইখসান ফান্দি। চোটে ভুগছিলেন, মাঠের বাইরেও কাটিয়েছেন বহুদিন। সেই দুঃসময়কে বিদায় করে ফিরেছেন জাতীয় দলে, আর ফিরেই করে ফেললেন জোড়া গোল। বয়স মাত্র ২৬, কিন্তু তাঁর কাঁধেই এখন দলটিকে টেনে তোলার বড় দায়িত্ব।
ম্যাচ শেষে তাঁর কণ্ঠে কৃতজ্ঞতা আর আত্মবিশ্বাস মিশে গেল একসঙ্গে। সিঙ্গাপুরের সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্রেইটস টাইমস তাঁকে উদ্ধৃত করেছে এভাবে, ‘জাতীয় দলে ফিরে আবার গোল করতে পারা দারুণ অনুভূতি। সবচেয়ে বড় কথা, আমি দলকে জেতাতে পেরেছি।’
ইখসানের পারফরম্যান্সে খুশি দলের জাপানি কোচ সুতোমু ওগুরা, ‘সে শুধু ৬০ মিনিট খেলেছে, কিন্তু দুই ধরনের পরিস্থিতি থেকে গোল করেছে—ওপেন প্লে ও সেট পিস। বাংলাদেশের বিপক্ষেও যদি আমরা ওকে ভালো বল সরবরাহ করতে পারি, গোল আসবেই।’
ম্যাচের শুরু থেকেই সিঙ্গাপুর আক্রমণাত্মক ছন্দে খেলেছে। ৭ মিনিটে সিং উই-ইয়ংয়ের কর্নার থেকে আমিরুল আদলি হেডে গোল করেন। এটি তাঁর ৩৫তম আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথম গোল। ২০ মিনিটে বাঁ দিক থেকে হারিস স্টুয়ার্টের ক্রসে হেডে গোল করে ইখসান ফান্দি ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। ৩২ মিনিটে সিংয়ের ফ্রি-কিক থেকে আবারও হেডে নিজের জোড়া গোল পূর্ণ করেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এ ছিল তাঁর ৩৯ ম্যাচে ২০তম গোল।
তবে রক্ষণে কিছু পুরোনো সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। মালদ্বীপ, যাদের ঘরোয়া ফুটবল লিগই বন্ধ গত দুই বছর, তারাও একাধিক সুযোগ পেয়েছে। প্রথমার্ধে আলী ফাসি একবার প্রায় ফাঁকা পোস্ট পেয়েও গোল করতে পারেননি। শেষ দিকে সাফুয়ান বাহারুদ্দিনের অপ্রয়োজনীয় ফাউল থেকে পাওয়া পেনাল্টি থেকে তারা একটি সান্ত্বনার গোল তো পেয়েই গেল।
এই অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ আর নড়বড়ে রক্ষণের মধ্যেই ওগুরার কণ্ঠে শোনা গেল সতর্কতার সুর, ‘৬০ মিনিট পেরোতেই খেলার রং বদলে যায়। বলের নিয়ন্ত্রণ হারাই, ছন্দ হারিয়ে ফেলে দল—আর ঠিক তখনই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, প্রতিপক্ষের কাউন্টার-অ্যাটাক আসছে। মনে হচ্ছিল, যেকোনো সময় স্কোরলাইন ৩-৩ হয়ে যাবে। আমাদের চার-পাঁচটা গোল করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। ফুটবলের দেবতারা আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন।’
এরপর তিনি বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে সতর্ক করে দলকে, ‘যদি আমরা এমন পারফরম্যান্স চালিয়ে যাই, তাহলে বাংলাদেশ ম্যাচে আমাদের কোনো সুযোগ নেই। এই দু-তিন দিনের মধ্যেই নিজেদের ঝালিয়ে নিতে হবে। উন্নতির বিকল্প নেই।’
সিঙ্গাপুর এখন তাকিয়ে ঢাকার দিকে। ১০ জুন জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর। গত মার্চে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দুই দলই গোলশূন্য ড্র করেছিল। বাংলাদেশ ড্র করে ভারতের সঙ্গে। সিঙ্গাপুর হংকংয়ের সঙ্গে। তার আগে প্রস্তুতি ম্যাচে নেপালের কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল সিঙ্গাপুর। সেই ধাক্কা পেরিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানো দলের সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের নাম বাংলাদেশ। সেই যুদ্ধে নামার আগে ঢাকার গরম আবহাওয়াও এক পরীক্ষা দলটির জন্য।
সিঙ্গাপুরের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স মিশ্র। গত এক বছরে তারা ভিয়েতনামের কাছে দুটি ম্যাচে হেরেছে, থাইল্যান্ডের কাছে ৪-২ ব্যবধানে, আর দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ৭-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে। জয় এসেছে তিমোর-লেস্তে, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারের মতো অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। সব মিলিয়ে গত বছর তারা করেছে ১৪ গোল, খেয়েছে ২৫টি।
আগামী বছরের ২ মার্চ এক প্রীতি ম্যাচে সিঙ্গাপুর মুখোমুখি হবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের শেষ ম্যাচের (৩১ মার্চ) প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ম্যাচটি খেলবে তারা।